আয়কর দাখিলকারী-ভ্যাটদাতার সংখ্যা চার বছরে দ্বিগুণ হয়েছে
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:৩১ পিএম
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেছেন, গত চার বছরে আমরা আয়কর রিটার্ন দাখিলকারী ও ভ্যাটদাতার সংখ্যা দ্বিগুণ করতে সক্ষম হয়েছি। ২০২০ সালের জুনে যেখানে দেশে আয়কর রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যা ছিল ২১ লাখ, সেখানে চলতি বছরে এ পর্যন্ত সেই সংখ্যা হয়েছে ৩৭ লাখ; যা জুন মাস পর্যন্ত ৪০ লাখে দাঁড়াবে বলে আশা করছি। একইভাবে ২০২০ সালের জুনে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশনের সংখ্যা ছিল দুই লাখ। আগামী জুনে তা ৫ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। অর্থাৎ চার বছরে আয়কর দাখিলখারীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ এবং ভ্যাটদাতার সংখ্যা প্রায় আড়াইগুণ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আয়োজিত প্রাক-বাজেট মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
নগরীর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজের সভাপতিত্বে মতবিনিময়ে এনবিআর সদস্য মো. মাসুদ সাদিক ও একেএম বদিউল আলম উপস্থিত ছিলেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আয়করের ক্ষেত্রে আমাদের এক কোটি টিইএন রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়েছে। তার মানে এই নয় যে এরা সবাই রিটার্ন দিচ্ছে। নানা কারণে অনেকেই অনলাইনে সহজেই টিইএন নিচ্ছে, কিন্তু আয়কর দিচ্ছে না। তাদেরকে খুঁজে বেড়াতে হচ্ছে। তাই সবসময়ই টিইএনধারী ও আয়কর দাখিলকারীর মাঝখানে একটা গ্যাপ থেকে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, এনবিআর শুধু রাজস্ব আদায় করছে না, দক্ষ জনশক্তি ও উন্নত মানুষ তৈরিতে প্রণোদনা দিচ্ছে। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে হাই ভ্যালুএডেড পণ্য উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকার আইসিটি, উন্নত প্রযুক্তি, পণ্য ও সেবা খাতকে প্রাধান্য দিয়ে বিশেষ প্রণোদনা দেয়ার চেষ্টা করছে। বিলাসবহুল পণ্যের আমদানি নিরুৎসাহিত করতে এবং দেশে ওই সব পণ্যের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বড় বড় ভারি শিল্পকে সহায়তা দিচ্ছে সরকার। লোকাল রিসোর্স মুভিলাইজেশন করতে হবে। আমাদের সহযোগিতা করুন। দেশাত্মবোধের জায়গায় নিজেকে তৈরি করতে হবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, করদায় যাতে একই ব্যক্তির ওপর না বর্তায় এবং কর নেট বাড়ানোর জন্য ধীরে ধীরে কাজ করছে এনবিআর, যার প্রতিফলন গত ৪ বছরের পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে।
এনবিআর সদস্য মাসুদ সাদিক বলেন, মেশিনারি আমদানিতে ১ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। এ সুবিধা নিয়ে বড় বড় শিল্প, ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজের শিল্প গড়ে উঠবে আশা করে এনবিআর। দেশে মোবাইল ফোন, রেফ্রিজারেটর, এসি, মোটরসাইকেল তৈরি ও সংযোজন হচ্ছে। লিফট তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে।
চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বলেন, অর্থনীতির অস্থিতিশীল সময়ে বেসরকারি খাত টিকিয়ে রাখতে আমাদের সাপোর্ট প্রয়োজন। বেসরকারি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেশে বেকারত্ব বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে এবং দীর্ঘমেয়াদে রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
তিনি আরও বলেন, মুদ্রানীতির সংকোচনের ফলে দেশে এমনিতেই বিনিয়োগ কমে গেছে। বিদ্যমান অনেক বিনিয়োগ অপারেশনে যেতে পারছে না প্রয়োজনীয় ইউটিলিটি সংযোগের অভাবে। চট্টগ্রামের শিল্পপ্রতিষ্ঠান নিয়মিতভাবে গ্যাস ও পানির সংকট, বিদ্যুতের রেশনিং মোকাবিলা করছে। এর সঙ্গে কঠোর রাজস্ব নীতি প্রয়োগের চাপ ক্রমাগত বাড়তে থাকলে বিনিয়োগ সম্প্রসারণ তো দূরের কথা, বর্তমান বিনিয়োগকারীরাও মুখ থুবড়ে পড়বেন।
আরও বক্তব্য রাখেন- চেম্বার সিনিয়র সহ-সভাপতি তরফদার মো. রুহুল আমিন, পরিচালক একেএম আকতার হাসেন, অঞ্জন শেখর দাশ, মো. রকিবুর রহমান (টুটুল), মাহফুজুল হক শাহ, ইঞ্জিনিয়ার ইফতেখার হোসেন, মোহাম্মদ আকতার পারভেজ, কক্সবাজার চেম্বারের পরিচালক আবেদ এহসান সাগর, ফেনী চেম্বারের পরিচালক বিলাস চন্দ্র সাহা, বিএসআরএমের এমডি আমীর আলী হুসেইন, টিকে গ্রুপের এডভাইজর জাফর আলম, লুব-রেফর এমডি মোহাম্মদ ইউসুফ, কনফিডেন্স সিমেন্ট এর এমডি জহির উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশন সহ-সভাপতি জহিরুল ইসলাম, সিএন্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি সালেহ আহমেদ সুলেমান প্রমুখ।