সীমান্তে অস্থিরতা, বিপাকে উখিয়া টেকনাফের চিংড়ি ঘেরের চাষিরা
জসিম উদ্দিন, কক্সবাজার
প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:১৫ পিএম
সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে প্রচণ্ড গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনায় এপারে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের বাসিন্দারা রয়েছেন আতঙ্কে। দিনরাত থেমে থেমে গুলির শব্দে কেঁপে উঠছে সীমান্তের গ্রাম। এমন পরিস্থিতিতে চিংড়ি ঘেরে যেতে না পারায় চাষিদের আয়-উপার্জন বন্ধ হওয়ার পথে।
কক্সবাজারের উনচিপ্রাং সীমান্তে নাফ নদীর এপারে রমজান আলীর (৪৫) ৬০ একর চিংড়ি ঘের রয়েছে। দীর্ঘদিন চিংড়ি চাষের সঙ্গে জড়িত এই চাষি। কিন্তু হঠাৎ নতুন আতঙ্ক ভর করেছে। মিয়ানমারের ভেতরে চলমান সংঘর্ষের জেরে শনিবার ভোর থেকে ৪ ঘণ্টা প্রচণ্ড গোলাগুলি হয়েছে উনচিপ্রাং সীমান্তে। এছাড়া সারাদিন থেমে থেমে গোলাগুলি হয়েছে।
রমজান বলেন, আমি বর্গা নিয়ে চাষ করছি। বার্ষিক বর্গা দিতে হয় ৯ লাখ টাকা। চাষের সঙ্গে জড়িত আছে ২০ শ্রমিক। আমরা আতঙ্কিত। ওপার থেকে মুহুর্মুহু গুলির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। রাত থেকে মাছ তুলতে পারিনি, খাবারও দিতে পারিনি। এ রকম চলতে থাকলে চরম লোকসান গুনতে হবে।
শুধু রমজানই নন, সময়মতো ঘেরে মাছের পরিচর্যা ও মাছ তুলতে না পারলে বড় ধরনের লোকসানে পড়তে পারেন চাষিরা। এতে স্থবির হয়ে পড়বে উখিয়া-টেকনাফ চিংড়ি চাষিদের জীবনযাত্রা, অর্থনীতির চাকা।
টেকনাফ উনচিপ্রাং এলাকার চিংড়ি চাষি জুনায়েদ বলেন, গত বছর বন্যা ও সীমান্তের উত্তেজনার কারণে ঘের থেকে তেমন মাছ তুলতে পারিনি। এতে বড় ধরনের লোকসান হয়েছে। এ বছর ৫ লাখ টাকার বাগদা চিংড়ি মাছের পোনা ছেড়েছি। মাছও বেশ বড় হয়েছে। কিন্তু সীমান্তে এ বছরও উত্তেজনার কারণে ঘেরে যেতে পারছি না। বড় ধরনের লোকসানের ঝুঁকি বাড়ছে। কিছু করার নেই। যে হারে মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি ও মর্টার শেল বিস্ফোরণ হচ্ছে। এতে আমাদের জীবন ঝুঁকিতে।
টেকনাফের ঝিমংখালীর চিংড়ি চাষি আকতার আহমদ বলেন, কয়েকদিন ধরে সীমান্তের কাছাকাছি চিংড়ি ঘেরে চাষিদের যেতে দিচ্ছে না বিজিবি। আমরা ব্যাংক থেকে টাকা ঋণ নিয়ে চিংড়ি চাষ করছি। সময়মতো মাছ না ধরলে মারা যাবে। আমরা ধ্বংস হয়ে যাব।
টেকনাফের সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন জানান, হোয়াইক্যং এবং হ্নীলা ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের আশপাশে ২ হাজার ৪০০ হেক্টর জায়গাজুড়ে ৪০০ চিংড়ি ঘের রয়েছে। যেখানে ৮ শতাধিক চাষি জড়িত। যদি মিয়ানমারে এ অবস্থা চরম আকার ধারণ করে তাহলে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
উখিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সৌরভ মাহমুদ বলেন, সীমান্তবর্তী ১২১টি মৎস্য ঘের রয়েছে। তবে তারা সব সময় মাছ চাষ করেন না। সেখানে গোলাগুলি হওয়ায় তারা আতঙ্কে আছেন।
কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান বলেন, আমি মৎস্য ঘেরগুলো পরিদর্শন করেছি। চাষিদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমার মনে হয় না, এপারে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে।