রোববার আখেরি মোনাজাত
মো. জাকির হোসেন, লুৎফুজ্জামান লিটন ও মো. আনোয়ার হোসেন, টঙ্গী (গাজীপুর)
প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:৫৭ পিএম
দিল্লির মাওলানা সাদ আহমদ কান্ধলভীর ছোট ছেলে মাওলানা ইলিয়াস বিন সাদ কান্ধলভীর আমবয়ানের মধ্যদিয়ে শুক্রবার শুরু হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। এদিন টঙ্গীর তুরাগ তীরে অনুষ্ঠিত হয় দেশের বৃহত্তম জুমার জামাত। ইজতেমায় অংশগ্রহণকারী লাখো মুসল্লি ছাড়াও রাজধানীসহ আশপাশের এলাকার হাজার হাজার মানুষ এতে অংশ নিয়েছেন। কাল বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব।
শুক্রবার সকাল থেকেই মুসল্লিরা জুমার জামাতে শামিল হতে টুপি, পাঞ্জাবি পরে জায়নামাজ হাতে ইজতেমা মাঠের দিকে ছুটতে থাকেন। দেশ-বিদেশের লাখো মুসল্লির সঙ্গে একই জামাতে শরিক হতে এবং বেশি সওয়াব হাসিল করতে ব্যাকুল ছিলেন তারা। জুমার নামাজে ইমামতি করেন দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাযের মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ কান্ধলভী। দুপুর দেড়টায় খুতবা শুরু হয়। নামাজ শেষ হয় ১টা ৫৭ মিনিটে। এদিকে ইজতেমায় যোগ দিতে দেশ-বিদেশ থেকে মুসল্লিদের টঙ্গীমুখী স্রোত অব্যাহত রয়েছে।
জুমার নামাজে ভিআইপিরা : মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম ও গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মাহবুব আলম জুমার নামাজে অংশগ্রহণ করেন। নামাজের আগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মেহমানদের খোঁজখবর নেন আ ক ম মোজাম্মেল হক ও জাহিদ আহসান রাসেল। এ সময় গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেল উপস্থিত ছিলেন।
প্রথম দিনের বয়ান : শুক্রবার বাদ ফজর বয়ান করবেন দিল্লির মাওলানা ইলিয়াস বিন সাদ কান্ধলভী। তার বয়ান বাংলায় অনুবাদ করেন বাংলাদেশের মাওলানা মনির বিন ইউসুফ। এরপর সকাল ১০টায় তালিমের বয়ান (মৌজু) করেন দিল্লির মাওলানা ইলিয়াস বিন সাদ কান্ধলভী। জুমার আগে জুমার ফাজায়েল সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান করেন বাংলাদেশের মাওলানা মনির বিন ইউসুফ। বাদ জুমা আরবি ভাষায় বয়ান করেন শেখ মোফলে। তার বয়ান বাংলায় অনুবাদ করেন বাংলাদেশের মাওলানা শেখ আব্দুল্লাহ মনসুর। বাদ আসর বয়ান করেন বাংলাদেশের মাওলানা মোশাররফ হোসেন। বাদ মাগরিব বয়ান করেন দিল্লির মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ কান্ধলভী। তার বয়ান বাংলায় অনুবাদ করেন মাওলানা জিয়া বিন কাশেম। বয়ানে কালেমা, ইমান, নামাজ, ইলম, যিকির, ইকরামুল মুসলিমীন ও তাসহীহে নিয়ত নিয়ে বিস্তারিত বয়ান করা হয়। বয়ানে মাওলানা ইলিয়াস বিন সাদ কান্ধলভী বলেন, নামাজ পড়ার পাশাপাশি আমাদের প্রত্যেককে কুরআন শিক্ষা করতে হবে। আমাদের জীবনে কুরআনের জিন্দেগি কায়েম করতে হবে। কুরআনকে আঁকড়ে ধরতে পারলে আমাদের জীবন মদিনাবাসীর মতো হয়ে যাবে।
বিদেশি মুসল্লিদের প্রতিক্রিয়া : ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে ৫৪ দেশের প্রায় ৬ হাজার বিদেশি মুসল্লি ইজতেমার বিদেশি খিত্তায় অবস্থান নিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি বিদেশি নাগরিক এসেছেন ভারত থেকে। তারা তাদের নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান নিয়ে ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল রয়েছেন। বিদেশি মুসল্লিরা জানান, মহান আল্লাহকে রাজিখুশি করতেই তারা ইজতেমায় এসেছেন। ইজতেমা আয়োজন করায় বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তারা।
আরও এক মুসল্লির মৃত্যু : বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৯টায় আরও এক মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। তিনি হলেনÑজামালপুর জেলার ইসলামপুর থানার গোয়ালের চর গ্রামের মৃত ছাবির উদ্দিনের ছেলে মো. নবির উদ্দিন (৬৫)। এর আগে ইজতেমায় আরও তিন মুসল্লির মৃত্যু হয়েছিল। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়কারী মোহাম্মদ সায়েম।
ইজতেমায় মালয়েশিয়ার ধর্মপ্রচারক ইবিট লিও : বুধবার সন্ধ্যায় ময়দানে এসেছেন মালয়েশিয়ায় ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’ খ্যাত আলোচিত সমাজকর্মী ইবিট লিও। মিডিয়া সমন্বয়কারী মোহাম্মদ সায়েম বলেন, ইবিট লিও ময়দানে এসেছেন। ইবিট লিওর পুরো নাম ইবিট ইরাওয়ান বিন ইব্রাহিম লিও। মালয়েশিয়ায় মুসলিম উদ্যোক্তা এবং ধর্মপ্রচারক হিসাবে তিনি বেশ পরিচিত।
ইজতেমা আয়োজক কমিটির শীর্ষ মুরুব্বি প্রকৌশলী শাহ মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ বলেন, ময়দানের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই ভালো। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। মুসল্লিরা তাদের জন্য নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান নিয়ে ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল রয়েছেন।