Logo
Logo
×

সারাদেশ

রাবির মেধাবী ছাত্রের মৃত্যু

ডেঙ্গু কেড়ে নিয়েছে দিনমজুর বাবার স্বপ্ন, শোকে বোনের মৃত্যু

Icon

অহিদুল হক, বড়াইগ্রাম (নাটোর) 

প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:১৮ পিএম

ডেঙ্গু কেড়ে নিয়েছে দিনমজুর বাবার স্বপ্ন, শোকে বোনের মৃত্যু

‘পরের জমিতে কাজ কইরি, শীতের মধ্যে খেজুর গাছ লাগাইয়ি দুই ছাওয়ালের জন্যি খরচ করিচি। বড়ডা গত বছর চাকরি পাইছে। ছোট ছাওয়াল লেখাপড়া শিকপি, বড় অফিসার হবি এই আশায় কখনো ধার করে, কখনো সুদের উপরে লিয়েও টাকা পাটাইচি। ছাওয়ালও বইলতো, আমি চাকরি পাইলে তোমারে আর এইসব কাজ করতে দিব না। কিন্তু আমার কষ্ট আর দূর হইল না।’ বুক চাপড়ে কথাগুলো বলছিলেন নাটোরের বড়াইগ্রামের কাটাশকোল গ্রামের দিনমজুর আব্দুস সাত্তার মৃধা। তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী মেধাবী ছাত্র মুরাদ হোসেন মৃধার বাবা। সোমবার সন্ধ্যায় রাবি’র গণিত বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মুরাদ মারা যান। এদিকে, মুরাদের মৃত্যুর খবর সইতে না পেরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে চাচাতো বোন দোলেনা বেগমও (৫২) মৃত্যুবরণ করেন।

জানা গেছে, ২৬ জানুয়ারি মুরাদ বাড়ি এসে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে পাঁচ দিন চিকিৎসা করার পরও সুস্থ না হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ডেঙ্গুর পাশাপাশি তার লিভার ও কিডনির সমস্যা ধরা পড়ে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সন্ধ্যায় তিনি মারা যান। রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের নেতৃত্বে সহপাঠীরা তার লাশ বাড়িতে পৌঁছে দেন।

মঙ্গলবার সরেজমিন দেখা গেছে, বাড়িতে টিনের ছাপড়া এবং পাটকাঠি ও বনের বেড়ার তিনটি ঘর। উঠানে খাটিয়ায় শোয়ানো মুরাদের লাশ। ছেলে হারা বাবা-মায়ের বুকফাটা কান্নায় পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছে। স্বজনরা তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

মুরাদের খালাতো ভাই আলমগীর কবিরাজ জানান, বাড়ির ভিটাসহ মাত্র বিঘাখানেক জমি আছে মুরাদের বাবার। দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে। স্ত্রীকে নিয়ে তিনি সেখানেই থাকে। মুরাদের বাবা পেশায় দিনমজুর। তবে শীতকালে খেজুর গাছ লাগিয়ে গুড় তৈরি করে বিক্রি করে ছেলের লেখাপড়াসহ কোনো রকমে নিজেদের সংসার চালান।

মুরাদের বাবা জানান, মুরাদ মাত্র এক মাস আগে গণিত বিভাগ থেকে অনার্স পরীক্ষায় ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হন। সেই খবর পেয়ে আনন্দে অভাবের মাঝেও তিনি সবাইকে মিষ্টি কিনে খাইয়েছিলেন। 

জোয়াড়ী ইউপি চেয়ারম্যান আলী আকবর জানান, মঙ্গলবার সকালে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়েছে। দরিদ্র বাবার মেধাবী সন্তানের এ মৃত্যু সত্যিই খুব কষ্টকর।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম