সীমান্তবাসীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ ডিসির

বান্দরবান প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:৩৩ পিএম

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তের ওপারে গোলাগুলি এখনো থামেনি। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতে গুলি ও মর্টারশেলের গোলা মঙ্গলবারও এসে পড়েছে বাংলাদেশের ভেতরে সীমান্তবাসীদের ঘরে।
আজ সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন। পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, সীমান্তের সার্বিক পরিস্থিতি উত্তেজনাকর। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রাথমিক অবস্থায় ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তের বাসিন্দাদের নিরাপদে আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
সীমান্তের বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা সহযোগিতা করছেন বলে তিনি জানান।
ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্ত এলাকা পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার সৈকত শাহীনসহ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন বলেন, সীমান্তবর্তী গ্রামবাসীদের নিরাপত্তায় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কাজ করছে পুলিশ। বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছে পুলিশ।
স্থানীয় ইউপি সদস্য দিল মোহাম্মদ ও আনোয়ার জানান, সীমান্তে বাংলাদেশিরা চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। আতঙ্কে ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর মানুষ। ইতোমধ্যে তুমব্রুর বাজারপাড়া, মাঝেরপাড়া ও কোনাপাড়া গ্রাম জনশূন্য হয়ে পড়েছে। বন্ধ করে দেওয়া ৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে।
মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের জেরে মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি), মিয়ানমার সেনাবাহিনী, ইমিগ্রেশন সদস্য, পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার ২২৯ জন সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছেন। বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তাদের নিরস্ত্রীকরণ করে নিরাপদ আশ্রয়ে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় দিয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বিজিবি সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম।
এদিকে মঙ্গলবার ঘুমধুমের ডেকুবুনিয়া এলাকায় আরও এক বাংলাদেশি গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। আহতের নাম সৈয়দ আলম। তিনি ঘুমধুমের ডেকুবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা।
আলম বলেন, আতঙ্কিত হয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ বাড়ির সবাইকে কক্সবাজার পাঠিয়ে দিয়েছি সোমবার। শুধুমাত্র আমি আর বাবা বাড়ি পাহারায় ছিলাম। বাড়িতে গরু-ছাগল আছে সেগুলোর জন্য। দুপুরের দিকে গুলি আমার কপাল ঘেঁষে চলে গেছে। আল্লাহ রক্ষা করেছেন। বাবা-ছেলে দুজন কক্সবাজার চলে আসছি।
মিয়ানমারে চলমান গোলাগুলি, মার্টারশেল নিক্ষেপ ও রকেট লাঞ্চার বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কেঁপে উঠছে সীমান্তবর্তী নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রুসহ আশপাশের এলাকাগুলো। সর্বশেষ জলপাইতলী গ্রামে মর্টারশেলের আঘাতে বাংলাদেশি নারী আসমা খাতুনসহ (৫৫) দুজনের মৃত্যু হয়। এর আগে মিয়ানমার বাহিনীর ছোড়া গুলিতে রোববার বাংলাদেশি নাগরিক প্রবিন্দ্র ধর ও রহিমা বেগম আহত হন। শনিবার মর্টারশেলের গোলার আঘাতে সিএনজি অটোরিকশার গ্লাস ভেঙে যায় এবং সীমান্তবর্তী বহু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।