Logo
Logo
×

সারাদেশ

পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে মিয়ানমারের ৫১ সীমান্তরক্ষী

Icon

বান্দরবান প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:১৭ পিএম

পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে মিয়ানমারের ৫১ সীমান্তরক্ষী

বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্তের ওপারে বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হচ্ছে। মিয়ানমারের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মি (এএ) সদস্যদের তোপের মুখে তুমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ৫১ সদস্য পালিয়ে কয়েকটি ভাগে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।

আশ্রয় নেওয়ার সংখ্যাটি আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা। আশ্রয় নেওয়াদের ৬ জন গুলিবিদ্ধ রয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে সীমান্তের ওপারে চলমান সংঘাতের গুলি ও মর্টারশেল এসে পড়ছে সীমান্তের এপারে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। রোববার সকালে মিয়ানমারের ছোড়া গুলিতে ২ বাংলাদেশি নাগরিক আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে একজনের নাম হচ্ছে প্রবিন্দ্র ধর (৫৫)। অপরজন আহত নারীর নাম হচ্ছে রহিমা বেগম। আতঙ্কে গ্রাম ছেড়ে নিরাপদে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন সীমান্তবাসীরা। পরিস্থিতি বিবেচনায় সীমান্তবর্তী ৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়রা জানান, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সামরিক জান্তা বাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতাকামী সংগঠন আরকান আর্মির মধ্যে তুমুল লড়াই চলছে। শুক্রবার একদিন বন্ধ থাকার পর ফের জোরেশোরেই সংঘাত চলছে সীমান্তের ওপারে। শনিবার মধ্যরাত থেকে লাগাতার সংঘাত চলছে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষীর দুটি ক্যাম্প দখলের।

গোলাগুলি, মার্টারশেল নিক্ষেপ ও রকেট ল্যান্সার বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কেঁপে উঠছে সীমান্তবর্তী নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রুর বিস্তীর্ণ এলাকা।

অপরদিকে ঘুমধুম ইউনিয়নের নিরাপত্তা বিবেচনায় ৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। স্কুলগুলো হচ্ছে- বাইশপারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাজাবনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু পশ্চিমকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রেজু গর্জন বুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন।

ঘুমধুম ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দার মোহাম্মদ শফিক, সৈয়দ আলম বলেন, পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ রূপ নিয়েছে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে। ঘর থেকে বেরুনোর উপায় পর্যন্ত নেই। মিয়ানমার বিদ্রোহী আরাকান আর্মি ও সরকারি বাহিনীদের মধ্যে সংঘাত চলছে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে। বিদ্রোহীদের তোপের মুখে পালিয়ে দুজন গুলিবিদ্ধ মিয়ানমার সেনা বাহিনীর সদস্যসহ ৫১ জন মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্য কয়েকটি ভাগে বাংলাদেশে ঢুকে বিজিবি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্তত ৬ জন গুলিবিদ্ধ রয়েছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য দিল মোহাম্মদ বলেন, তুমব্রু সীমান্তবর্তী ৩টি গ্রাম মানুষশূন্য হয়ে পড়েছে। পশুপাখি ও মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে গেছে মানুষজন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নেয়াদের প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, হঠাৎ করেই সীমান্ত পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে পড়েছে। ভারি অস্ত্রশস্ত্রের শব্দে তুমব্রুতে থাকা যাচ্ছে না। আতঙ্কে সীমান্তবর্তী বসবাসকারী মানুষজন গ্রাম ছেড়ে দূরে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছে। সীমান্তের ওপারে চলমান সংঘাতের কয়েকটি গুলি ও মর্টারশেলের গোলা এসে পড়েছে রোববারও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। এতে বাংলাদেশি একজন পুরুষ ও একজন নারী আহত হয়েছে। ভারি অস্ত্রের আঘাতে সীমান্তবর্তী কয়েকটি ঘরবাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিজিবি নিরাপত্তা জোরদার করেছে। 

এ বিষয়ে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতের গুলি এসে পড়ে বাংলাদেশি ২ জন নাগরিক গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। তাদের একজন পুরুষ, অপরজন নারী। পরিস্থিতি বিবেচনায় সীমান্তবর্তী ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যানবাহন এবং জনগণের চলাচল সীমিত করা হয়েছে। পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে। সীমান্তে বিজিবি টহল এবং নিরাপত্তা চৌকিগুলোতে শক্তি বৃদ্ধি করা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিজিবি সতর্কাবস্থায় রয়েছে। 

তবে সীমান্তে চলমান সংঘাতে পালিয়ে মিয়ানমার সরকারি বাহিনীর ৫১ জন সদস্যের আশ্রয় নেওয়ার বিষয়ে প্রশাসন ও বিজিবির পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমার সরকারি বাহিনীর সদস্যরা তুমব্রু বিজিবি ক্যাম্পের বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হেফাজতে রয়েছেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম