Logo
Logo
×

সারাদেশ

‘দুম্বার গোস্ত চাই না, হামাক কম্বল দেও’

Icon

সিদ্দিক আলম দয়াল, গাইবান্ধা

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯:৩৬ পিএম

‘দুম্বার গোস্ত চাই না, হামাক কম্বল দেও’

‘এক টুকরা দুম্বার গোস্তও পাই নাই। হামার কপালে দুম্বার গোস্ত জোটে নাই কোনো দিন। চাই না দুম্বার গোস্ত- হামাক কম্বল দেও। শীতে মরিমরি অবস্থা। কামকাজ নাই, দিনরাত ঘরত বসি থাকি খ্যাতা গাওত দিয়া; কিন্তু কেউ খোঁজখবর নেয় না হামার।’

এই দুরবস্থার কথা জানালেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল পোড়ারচরের বেশ কয়েকজন মানুষ।

তিস্তা ও যমুনা নদীর দুর্গম চরে অন্যান্য চরের মতো একটি চরের নাম পোড়ারচর। সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড। চারপাশে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদী। নানা দুর্যোগের সঙ্গে যুদ্ধ করে এই চরে আড়াইশ পরিবারের প্রায় ১ হাজার ২শ মানুষ বাস করে।

পোড়ারচরে বয়োবৃদ্ধ ও শিশুদের অবস্থা এই শীতে খুব কাহিল। এই চরে বাস করেন রেজা মেম্বর। এক সময় তিনি মেম্বর ছিলেন বলে তাকে সবাই মেম্বর বলে ডাকেন। রেজা মেম্বর বলেন, ভাই আমি অসহায়, গরিব ও দুস্থ মানুষের সঙ্গে বাস করি। প্রচণ্ড ঠান্ডার কারণে এই চরের মানুষ ঘর থেকে বাহিরে যেতে সাহস পায় না। চারদিকে ঘন কুয়াশা আর কনকনে ঠান্ডায় কাহিল অবস্থা। গ্রামের অনেকেই খড় ও চটের বস্তা দিয়ে তোশক বানিয়ে বিছানা তৈরি করে শীত নিবারণের চেষ্টা করেন। দিন হলে খড়কুটো জড়ো করে আগুন জ্বালিয়ে চারপাশে ছেলে মেয়ে বুড়ো একসঙ্গে আগুনের তাপে শীত নিবারণ করেন। বহু শীত গেল কিন্তু এবারের মতো শীত আর কুয়াশা কোন দিন চোখে দেখেনি এই চরের মানুষ।

তিনি বলেন, অবহেলিত এই চরের অন্তত ৫৭ জন বয়স্ক মহিলা ও পুরুষের বাঁচা-মরা সমান হয়ে গেছে। খুব কষ্ট এদের। তিনি যখন মেম্বর ছিলেন তখন কম্বল দিয়েছিলেন। তা অনেক দিনের কথা।

হাফিজার রহমান বলেন, শুনেছি কম্বল ও দুম্বার মাংস এসেছে গরিব মানুষের জন্য। কিন্তু আমাদের ভাগ্যে একটা কম্বল আর এক টুকরা দুম্বার মাংস জুটল না। অনেক দিন শুনি দুম্বার মাংস আসে কিন্তু কোথায় যায় মাংস তা চোখেও দেখেনি।

পোড়ার চরের বাসিন্দা মফিজ, কেরামত আলী, লাল মিয়া, মজিদ মিয়া ও বিশা শেখ। তাদের বয়স এখন অনেক। কিন্তু মরার আগে ভালো ভাবে মরতে চায়। তারা বলেন, আমরা দুম্বার মাংস চোখেও দেখলাম না। কম্বলও পাই না। কেনার মতো ক্ষমতাও নাই। গরিব মানুষের গোস্ত আর কম্বল কোথায় যায় তা জানতে চান।

একই এলাকার বৃদ্ধা ময়ফুল বেওয়া বলেন, মেম্বারের কাছে তিনি শুনেছি দুম্বার মাংস এসেছে। দুদিন মেম্বারের বাড়িতেও গেছি কিন্তু মেম্বর কয় হামরায় পাই নাই। আর তোক দেই কোটে থাকি?

ময়ফুল বেওয়া বলেন, থাক হামার দুম্বার গোস্তের দরকার নাই, হামরা দুম্বার গোস্ত চাই না -হামাক একটা কম্বল দেন।

দুম্বার মাংস বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ তুলে পোড়ার চরের মোমেনা বেওয়া বলেন, দুম্বার মাংস আসে গরিব মানুষের জন্য সেটাও গায়েব হয়ে যায়।

কাপাসিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনজু মিয়া জানান, তিনি তিন টোপলা দুম্বার গোস্ত পেয়েছিলেন। প্রতিবেশী গরিবদের মধ্যে দিয়েছেন।

তিনি জানান, আমার কাপাসিয়া ইউনিয়নের সব মানুষের অবস্থা খারাপ। ঘরে ঘরে কম্বল দেওয়া দরকার কিন্তু তিনি কম্বল পেয়েছেন মাত্র তিনশ। তা বিতরণ করেছেন।

সুন্দরগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, তিনি ৪১টি দুম্বার মাংসের বাক্স পেয়েছি। এমপি সাহেব, সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিকের উপস্থিতিতে বিভিন্ন এতিমখানায় দুম্বার মাংস বিতরণ করেছি।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা মো. জুয়েল মিয়া জানান, গাইবান্ধা জেলার জন্য ২২৭ বাক্স দুম্বার মাংস পেয়েছেন। তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে বিতরণ করেছেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম