গ্যাস সংকট সাটুরিয়ায় লোকসানের মুখে শিল্প-কারখানা
সাজাহান সরকার, সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:০৫ পিএম
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় গ্যাস সংকটে শিল্প-কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে লোকসানের মুখে পড়েছেন মালিকরা। পাশাপাশি বেতন-ভাতা কমে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে শ্রমিকরাও। কারখানা মালিকদের অভিযোগ, বাড়তি ব্যয়ে বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার করে উৎপাদন কিছুটা ধরে রাখার চেষ্টা করছেন তারা। কিন্তু এতে ব্যয় কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। তার ওপর মাস শেষে ভূতুড়ে বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে তাদের। এদিকে বাসাবাড়ি ও ফিলিং স্টেশনেও মিলছে না গ্যাস। এতে ঘরে-বাইরে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন বাসিন্দারা।
জানা গেছে, সাটুরিয়ায় দেশের বিখ্যাত এ্যালুমিনিয়াম কড়াই কারখানা-গুলজার মেটাল, শরীফ মেটাল, বিক্রমপুর কাস্টিং, ঢাকা কাস্টিং, নিউ মক্কাসহ বেশকিছু শিল্প-কারখানা রয়েছে, যা গ্যাসনির্ভর। গ্যাস সংকটে এসব কারখানায় উৎপাদন কমে গেছে।
বিক্রমপুর কাস্টিং এ্যালুমিনিয়াম কারখানার ম্যানেজার আবুল কালাম বলেন, তিতাসের সঙ্গে ১০ পিএসআই গ্যাস চুক্তি হলেও পাচ্ছি ০-১ পিএসআই। অভিযোগ করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। উৎপাদন ধরে রাখতে বাধ্য হয়ে ব্যয়বহুল ফার্নেন্স অয়েল ও ডিজেল চালিত জেনারেটর ব্যবহার করছি। এতে উৎপাদন খরচ আট থেকে দশগুণ বেড়ে গেছে। এদিকে গ্যাস না পেলেও মাস শেষে লক্ষাধিক টাকার ভূতুড়ে বিল গুনতে হচ্ছে।
একাধিক শিল্প মালিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গ্যাস সংকটের কারণে কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হলেও ব্যাংক ঋণের কিস্তি ঠিকই দিতে হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে শিল্প প্রতিষ্ঠান চালানো সম্ভব হবে না। এলাকায় কর্মসংস্থান বাড়ার পরিবর্তে বেকারত্ব বাড়বে। শিল্প রক্ষার স্বার্থে গ্যাস সংকটের দ্রুত সমাধান করা উচিত।
তারা জানান, এসব কারখানায় শ্রমিকদের বেতন উৎপাদনের ভিত্তিতে দেওয়া হয়। পুরো মাত্রায় কাজ চলাকালে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা মজুরি পেত শ্রমিকরা। কিন্তু গ্যাস সংকটে উৎপাদন কমে যাওয়ায় এখন শ্রমিকরা পাচ্ছেন ৫-৬ হাজার টাকা। উৎপাদন ও মজুরি কমে যাওয়ায় মালিক-শ্রমিকের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক মোকসেদ আলী ও আতাউর রহমান জানান, কিস্তির টাকায় কেনা গাড়ি চালান তারা। যেন ঘাড়ে করাত ধরে বসে থাকেন কিস্তি আদায়ের অফিসার। গ্যাস না থাকায় গাড়ি চলছে না বললেও রেহাই মিলে না। তারা আরও জানান, সিএনজি স্টেশনে মাঝেমধ্যে গ্যাস পাওয়া গেলেও প্রেসার থাকে সামান্য, যা কোনো কাজে আসে না। যেদিন গ্যাস না পান সেদিন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে প্রায় উপোস থাকতে হয়।
এদিকে গ্যাস সংকটের কারণে বাসাবাড়ি ও খাবার হোটেলগুলোতেও তীব্র ভোগান্তি দেখা দিয়েছে। বিকল্প ব্যবস্থায় রান্নার কাজ সারতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। সাটুরিয়া শহরের গৃহবধূ মুক্তা আক্তার ও হোটেল ব্যবসায়ী মিন্টু বসাক জানান, গ্যাসের চাপ এতোটাই কম থাকে যে, রান্না তো দূরের কথা তৈরি খাবার গরমও করা যায় না।
গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়ী মোকাদ্দেস আলী বলেন, বোতলজাত গ্যাসের চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে। আগে সপ্তাহে রিফিল সিলিন্ডার বিক্রি হতো ৬-৭টি। এখন প্রায় ১৫-১৬টি বিক্রি হচ্ছে। তবে সিলিন্ডার সরবরাহ অনেক কমে গেছে। ৩০টি চাইলে মিলছে ৫-৬টি। তাছাড়া চড়া দামে কিনতে হচ্ছে।
সংকটের কথা স্বীকার করে তিতাস গ্যাস মানিকগঞ্জের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. আতিকুল হক সিদ্দিকী মোবাইলে যুগান্তরকে বলেন, শুধু মানিকগঞ্জে নয়-গ্যাস সংকট জাতীয় সমস্যা। উত্তরণের চেষ্টা অব্যাহত আছে। ক্রমশই গ্যাস ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু উৎপাদন সে তুলনায় বাড়ছে না। উৎপাদন বাড়ানো হলে সংকট থাকবে না।