চলনবিলে ৫২ কোটি টাকার মধু উৎপাদনের সম্ভাবনা
অহিদুল হক, বড়াইগ্রাম (নাটোর)
প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:৪৫ পিএম
নাটোরের বড়াইগ্রামসহ চলনবিলের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন সরিষা ফুলের সমারোহ। গোটা মাঠ যেন কেউ হলুদ চাদরে ঢেকে দিয়েছে। এ কারণে বর্তমানে সরিষা ফুলকে কেন্দ্র করে প্রতি বছরের মতো দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মধু সংগ্রহের জন্য এসেছেন মধুচাষিরা। মৌমাছির বাক্স স্থাপন করে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। হলুদ ফুলে ভরা সরষের মাঠগুলো ইউরোপিয়ান হাইব্রিড এপিস মেলিফেরা মৌমাছির মৌ মৌ গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠেছে। চলতি মৌসুমে চলনবিল থেকে প্রায় ৫২ কোটি টাকার মধু আহরণের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মৌচাষিরা আশা করছেন।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলনবিলের বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর, সিংড়া, তাড়াশ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলায় চলতি রবি মৌসুমে প্রায় দেড় লাখ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন আগাম ও নাবী জাতের সরষে চাষ হয়েছে। মাঠের পর মাঠজুড়ে সরষের জমিতে দৃষ্টিনন্দন মনোমুগ্ধকর থোকা থোকা ফুল যেন হলুদ চাদর বিছিয়ে রয়েছে। নয়নাভিরাম সেই সরষে ক্ষেতের আইলে আইলে এখন সারি সারি মৌবাক্স। ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছি উড়ে উড়ে সরিষা ফুল থেকে মধু নিয়ে মৌবাক্সে জমা করছে। এ মৌসুমে চলনবিল থেকে ১৪০০-১৫০০ টন মধু আহরণের সম্ভাবনা রয়েছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা হিসাবে সাড়ে ৫২ কোটি টাকা। খুলনার সুন্দরবন, সাতক্ষীরা, যশোর, কুষ্টিয়া, পাবনা, নাটোর, বগুড়া, রংপুর ও সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রায় ছয় শতাধিক প্রশিক্ষিত মৌখামারি চলনবিলে অস্থায়ী আবাস গেড়েছেন। গোটা চলনবিলে প্রায় ৪০ হাজারের বেশি বাক্স স্থাপন করা হয়েছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. জাহেদুল ইসলাম বলেন, মধু পরিপাকে সহায়তা করে, ক্ষুধা বাড়ায়, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি, স্বর্দি, কাশি, জ্বর, হাঁপানি, হৃদরোগ, পুরোনো আমাশয়, দাঁত, ত্বক, পেটের পীড়াসহ নানা জটিল রোগ নিরাময় করে থাকে। মধুতে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান ও ভেষজ গুণ রয়েছে। মধুর উচ্চমাত্রার ফ্রুক্টোজ ও গ্লুকোজ যকৃতে গ্লাইকোজেনের মজুত গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
সাতক্ষীরা শ্যামনগর থেকে আসা আল্লাহর দান মৌ খামারের খামারি নুর হোসেন জানান, এ বছর তারা ২৭০টি মৌ বাক্স বসিয়েছেন। যা থেকে ১০০ মন মধু উৎপাদন হবে। তাদের সংগৃহীত এসব খাঁটি মধু ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
উত্তরবঙ্গ মৌচাষি সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, আধুনিক প্রশিক্ষণের অভাবে মৌচাষিরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাছাড়া বিজ্ঞানসম্মত মৌ বাক্সেরও অভাব রয়েছে। প্রাণ, স্কয়ার, এপিসহ বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানির প্রতিনিধিরা ইতোমধ্যেই চলনবিলে এসে মধু কেনা শুরু করেছেন। এ বছর প্রায় দেড় হাজার টন মধু সংগ্রহ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।