ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা
শেষ সময়ের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত কারিগররা
রাসেল মাহমুদ, নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:৩০ পিএম
একদিকে নির্মাণ শ্রমিকদের হাতুড়ির টুংটাং শব্দ, অন্যদিকে শিল্পীর নিপুণ হাতে স্টলের গায়ে আঁকা হচ্ছে বিভিন্ন চিত্রকর্ম। স্টলগুলোতে লাগানো হচ্ছে রং-বেরংয়ের আলোকসজ্জা। বঙ্গবন্ধু-চায়না বাংলাদেশ এক্সিবিশন সেন্টারের ভেতরের এসব কর্ম বার্তা দিচ্ছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৮তম আসর শুরু হওয়ার। তৃতীয়বার রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপ-শহরে ৪ নম্বর সেক্টরে বসতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আসর।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরা (ইপিবি) ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে এ মেলা প্রতিবছর আয়োজন করা হয়। ১ জানুয়ারি মেলার উদ্বোধনের কথা থাকলেও ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের কারণে মেলা পেছানো হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২১ জানুয়ারি আগামীকাল এবারের মেলা উদ্বোধন করবেন।
নির্ধারিত সময়ে মেলা উদ্বোধনের জন্য শ্রমিকরা কাজে এতই ব্যস্ত যে, তাদের কথা বলার সময় নেই। এবারের আসরে ৩০০ ফুট এক্সপ্রেসওয়ের কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হওয়ায় ঢাকা থেকে আসা দর্শনার্থীরা ভোগান্তিহীনভাবেই মেলায় আসতে পারবেন। তবে এশিয়ান বাইপাস সড়কের কাজ চলমান থাকায় রূপগঞ্জ, নরসিংদী, সোনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জ সদর, ভৈরবসহ এসব অঞ্চল থেকে আসা দর্শনার্থীরা ভোগান্তিতে পড়তে পারেন।
মেলা সফল করতে প্রশাসন সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইপিবির অতিরিক্ত সচিব ও বাণিজ্য মেলার পরিচালক ভিবেক সরকার।
সরেজমিন দেখা যায়, মেলার প্রধান ফটক ও প্রবেশ দ্বারের কাজ চলছে। মেলার মূল অবকাঠামোর বাইরে চলছে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি কোম্পানির প্যাভিলিয়ন নির্মাণের কাজ। মূল অবকাঠামোর ভেতরে বিভিন্ন প্রকার প্রসাধনী কোম্পানি, ইলেকট্রনিক্স ফার্নিচার, দেশি-বিদেশি কাপড়ের দোকান রয়েছে। মেলা উদ্বোধনের আর মাত্র ৩ দিন বাকি থাকলেও মেলার সিংহভাগ স্টলের কাজ এখনো শেষ হয়নি। এবারের মেলায় দেশ-বিদেশের মোট ৩৩০টি স্টল, প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়ন থাকবে। এর মধ্যে ১৫-১৮টি বিদেশি স্টল রয়েছে। বরাবরের মতো ভারত, পাকিস্তান, ইরান, তুরস্ক, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ব্যবসায়ীরা এবারের মেলায় অংশ নেবেন। এ ছাড়া স্থানীয় উদ্যোক্তারাও তাদের পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি করবেন।
২০২২ সাল থেকে পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর আগে ঢাকার শেরেবাংলা নগরে বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হতো। মূলত জনদুর্ভোগ এড়াতে বাণিজ্য মেলা মূল শহর থেকে পূর্বাচলে স্থানান্তর করা হয়।
জানা যায়, গত বছর বাণিজ্য মেলায় দেশ-বিদেশের ৩৩১টি স্টল, প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়ন ছিল। গত বছর সিঙ্গাপুর, হংকং, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ ১০টি দেশের ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি করেন। মাসব্যাপী এ মেলায় ১০০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। এ ছাড়া মেলায় ৩০০ কোটি টাকার তাৎক্ষণিক রপ্তানি আদেশও পাওয়া যায়।
কেন্দ্রীয় কারাপণ্য প্যাভিলিয়নের ঠিকাদার মজিবর রহমান বলেন, বাণিজ্য মেলায় প্রতি বছরই কারাপণ্যের একটি স্টল থাকে। কারাগারে থাকা কয়েদিদের হাতে তৈরি পণ্য এখানে প্রদর্শন করা হয়। আশা করি মেলা উদ্বোধনের আগেই আমরা এ প্যাভিলিয়নের কাজ শেষ করতে পারব।
জারিন ফ্যাশনের ইনচার্জ রনি বলেন, আমরা প্রথমবারের মতো বাণিজ্য মেলায় স্টল নিয়েছি। আমরা এখানে দেশি, ভারতীয় থ্রি-পিস ও পাকিস্তানি থ্রি-পিস বিক্রি করব। আমাদের স্টলের নির্মাণ কাজ ৮০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে।
অলিম্পিক প্যাভিলিয়নের ইনচার্জ সেলিম বলেন, ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হচ্ছে অলিম্পিক বিস্কুট কোম্পানির প্যাভিলিয়ন। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব উদ্বোধনের আগে নির্মাণ কাজ শেষ করতে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান এএইচএম আহসান বলেন, উদ্বোধনের আগে ৮০-৯০ ভাগ স্টল নির্মাণের কাজ শেষ হয়ে যাবে। মেলার ভেতরে ও বাইরে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ মোতায়েন থাকবে। মেলার ভেতরে আমাদের নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মী থাকবে। পুরো মেলায় প্রায় ৩০০ সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে।