ফেরিডুবির কারণ নিয়ে ধূম্রজাল
যুগান্তর প্রতিবেদন, মানিকগঞ্জ
প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:০৮ পিএম
মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ায় ফেরি রজনীগন্ধা ডুবির ঘটনা নিয়ে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা ভিন্ন দাবি উপস্থাপন করেছেন।
বিআইডব্লিউটিসির কর্তৃপক্ষ বলছে, বালুবাহী বাল্কহেডের ধাক্কায় রজনীগন্ধা ফেরিটি ডুবে যায়। নৌপুলিশের ফরিদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমানের দাবি ফেরিটি দৌলতদিয়া থেকে পাটুরিয়া ঘাটের আসার পথে ডুবোচরে ধাক্কা লাগলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ফেরির তলা ফুটো হয়ে গেলে পানি ঢুকতে থাকে।
আর ফেরিতে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী ট্রাকচালকরা বলছেন, ফেরির তলা ছিদ্র হয়ে পানি ঢুকে কাত হয়ে এটি ধীরে ধীরে ডুবে যায়।
বিআইডব্লিউটিসি, মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার দিবাগত রাত একটার দিকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া প্রান্ত থেকে পাটুরিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে ইউটিলিটি (ছোট) ফেরি রজনীগন্ধা। ফেরিটিতে সাতটি ছোট এবং বড় দুটি মালবাহীসহ নয়টি ট্রাক ট্রাক ছিল। রাত দেড়টার দিকে ঘন কুয়াশার কারণে পাটুরিয়ার ৫ নাম্বার ঘাটের অদূরে পদ্মা নদীতে আটকা পরে ফেরিটি। এ সময় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে চলাচল বন্ধ থাকে। সকাল ৮টার পরপরই ফেরিটি ডুবে যেতে থাকে। এ সময় যানবাহনের চালক ও সহকারীরা এবং ফেরিতে কর্মরত লোকজন দ্রুত নদীতে ঝাঁপ দেন।
এ সময় খবর পেয়ে লোকজন এবং ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ট্রলার নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এর আগে নদীতে ঝাঁপ দেওয়া কয়েকজন সাঁতরে নদীর তীরে উঠেন।
এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ছয়জনকে উদ্ধার করে তীরে নিয়ে আসেন। ততক্ষণে ফেরিটি যানবাহন নিয়ে পানির নিচে তলিয়ে যায়।
নৌপুলিশ জানায়, এ ঘটনায় ফেরির দ্বিতীয় ইঞ্জিনচালক হুমায়ুন কবির নিখোঁজ রয়েছেন। ফেরিতে থাকা জীবিত ২০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের অধিকাংশই মালবাহী ট্রাকের শ্রমিক।
এই ফেরিডুবির কারণ নিয়ে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বক্তব্য দিয়েছেন।
ফেরিডুবির কারণ নিয়ে বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) শাহ মোহাম্মদ খালেদ নেওয়াজ বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে ফেরিটি নদীতে যখন নোঙর করে ছিল। সকাল আটটার দিকে বালুবাহী একটি বাল্কহেড ফেরিটিকে সজোরে ধাক্কা দিলে এক পাশ কাত হয়ে ফেরিটি নদীতে ডুবে যায়। তবে ঘন কুয়াশার কারণে বাল্কহেডটি চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।
তবে নৌপুলিশের ফরিদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, ফেরিটি দৌলতদিয়া থেকে পাটুরিয়া ঘাটের আসার পথে ডুবোচরে ধাক্কা লাগে। এতে ফেরির তলা ফুটো হয়ে গেলে পানি ঢুকতে থাকে। তবে কুয়াশায় পথ দেখতে না পেয়ে পাটুরিয়া ঘাটের ২০০ থেকে ২৫০ গজ অদূরে রজনীগন্ধা ফেরিটি নোঙর করে। এরপর ফেরিতে ধীরে ধীরে পানি ঢুকে আজ সকাল আটটার দিকে নয়টি ট্রাকসহ ফেরিটি নদীতে ডুবে যায়।
ফেরিটিতে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী ট্রাকচালক মজনু মিয়া বলেন, ভোর ৪টার দিকে ফেরিতে পানি উঠতে থাকে। এ সময় ফেরির লোকজন পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা করতে থাকেন। ধীরে ধীরে এক পাশ কাত হয়ে ফেরিটি ডুবতে থাকে। একপর্যায়ে সকাল ৮টার দিকে ফেরিতে থাকা সব মালবাহী ট্রাকসহ ফেরিটি পানিতে তলিয়ে যায়। এ সময় তারা যে যার মতো নদীতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরে তীরে উঠেন।
ফেরিতে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী ফজর আলী বলেন, পাটুরিয়া ঘাটের অদূরে নোঙর করে রাখা হয় ফেরিটি। এ সময় তিনি ফেরিতেই ছিলেন। সকাল ৬টার দিকে ফেরিতে থাকা একজন বলতে থাকেন ফেরিতে পানি উঠছে। তখন ফেরির নোঙর খুলে দেয়। এর কিছুক্ষণ পর ফেরিটি চালু করা হলেও ততক্ষণে পানি ওঠে ফেরিটি কাত হয়ে ডুবে যেতে থাকে। এরপর সকাল আটটার দিকে ফেরিটি পানিতে তলিয়ে যায়।
এ ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিসির পক্ষ থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সানজিদা জেসমিনকে প্রধান করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এছাড়া বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান মতিউর রহমান বলেন, এ দুর্ঘটনার অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করা হয়েছে।
ফেরিডুবির কারণ সম্পর্কে জেলা প্রশাসক রেহেনা আকতার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, কী কারণে ফেরিটি ডুবেছে তা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।