মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে ২ বছরের আয়েশাকে মারধর করতেন সৎমা
যশোর ব্যুরো
প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:২৫ এএম
স্বামীর আগের স্ত্রীর সন্তানকে নিজের কাছে রাখতে চাননি সৎমা পারভীন সুলতানা। এ কারণে দুই বছরের শিশু আয়েশাকে প্রতিনিয়ত মারপিট করতেন তিনি। শুধু তাই নয়, মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে ও দুই হাত বেঁধে দুই বছরের এই শিশুকে নির্যাতন চালাতেন পারভীন। শেষ পর্যন্ত আয়েশাকে মারপিটের নমুনা নিজের মোবাইলে ধারণ করা ছবিতেই পুলিশের জালে আটক পারভীন।
এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানার এসআই জয়ন্ত সরকার বাদী হয়ে মঙ্গলবার কোতোয়ালি থানায় পারভীনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এদিন বিকালে ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে তাকে আদালতে প্রেরণ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।
এর আগে সোমবার বিকালে শহরের খড়কি ধোপাপাড়ার ভাড়া বাসা থেকে পারভীনকে আটক করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, আট থেকে ১০ বছর আগে ওয়াসকুরুনি পিন্টুর সঙ্গে নিহত আয়েশার আপন মা জান্নাতুলের বিয়ে হয়। তাদের দুটি সন্তান থাকা অবস্থায় পিন্টুর সঙ্গে মোবাইল ফোনে পরিচয় হয় পারভীনের। এর পর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাদের মধ্যে। বিষয়টি জানাজানি হলে পিন্টুর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে জান্নাতুলের। ২০১৮ সালে পিন্টু পারভীনকে বিয়ে করেন। তখন থেকে তারা খোলাডাঙ্গা এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতে থাকেন।
পাঁচ মাস আগে পিন্টুর আগের স্ত্রী জান্নাতুল তাদের দুই সন্তান আয়েশা ও তার বড় ভাইকে বাবা পিন্টুর কাছে রেখে যান। তখন থেকে পারভীন সৎ সন্তানদের ওপর অত্যাচার শুরু করেন। বিষয়টি নিয়ে পিন্টু ও পারভীনের মধ্যে প্রায়ই গোলযোগ হতো।
সর্বশেষ গত ১৩ জানুয়ারি শনিবার সকালে বাড়ি থেকে পিন্টু বের হয়ে গেলে ছেলেকে খেলার কথা বলে বাড়ি থেকে বের করে দেন পারভীন। পরে শিশু আয়েশাকে বেঁধে ঝাড়ু দিয়ে মারপিট করেন। শিশুটির শরীর থেকে খামচি দিয়ে মাংস তুলে ফেলেন। একপর্যায়ে শিশু আয়েশার চুল ধরে পাশের একটি দেয়ালের সঙ্গে ঘসা দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত-বিক্ষত করেন। একপর্যায়ে শিশু আয়েশা অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এর পর তড়িঘড়ি করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান পারভীন। হাসপাতালের চিকিৎসক আয়েশাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তখন পারভীন মনগড়া কথা বলতে থাকেন। হত্যার বিষয়টি অস্বীকার করে নিজেই কান্নাকাটি করতে থাকেন তিনি। পুলিশ ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ বাবা পিন্টুর জিম্মায় দেয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পারভীনকেও ছেড়ে দেওয়া হয়।
পুলিশ আরও জানায়, ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। পরে পারভীনের মোবাইল ফোনেই নির্যাতনের ছবি পায় পুলিশ। এ ছাড়া আশপাশের লোকজনের কাছ থেকে ঘটনার সত্যতা যাচাই করে পারভীনকে আটক করে পুলিশ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আব্দুর রাজ্জাক জানান, প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে আয়েশা কিছুটা মানসিক প্রতিবন্ধী ছিল। সৎ দুই সন্তানকে ক্ষতি করার পরিকল্পনা করতে থাকেন তিনি। তারই অংশ হিসেবে পরিকল্পিতভাবেই আয়েশাকে হত্যা করেছেন তার সৎমা পারভীন।