Logo
Logo
×

সারাদেশ

হাড়কাঁপানো শীতে দুর্বিষহ অবস্থায় দিনাজপুরের সাড়ে ৯ লাখ কৃষক

Icon

দিনাজপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০৭:৫১ পিএম

হাড়কাঁপানো শীতে দুর্বিষহ অবস্থায় দিনাজপুরের সাড়ে ৯ লাখ কৃষক

১৫ দিন ধরে অব্যাহত হাড়কাঁপানো তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। পাঁচ দিন ধরে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা জনপদ। সকালে কুয়াশা ঝরছে বৃষ্টির পানির মতো। বেশ কয়েকদিন থেকেই দিনের বেলা দেখা নেই সূর্যের। বইছে উত্তরের হিমেল বাতাস।

প্রকৃতির এই বিরূপ আবহাওয়ায় দুর্বিষহ অবস্থায় দিনাতিপাত করছে কৃষিনির্ভর দিনাজপুর জেলায় সাড়ে ৯ লক্ষাধিক কৃষি শ্রমিক। কাজ না করলে পেটে ভাত নেই, আর এই বিরূপ আবহাওয়ার মধ্যে ফাঁকা ফসলের মাঠে কাজ করাও দুষ্কর। সব মিলিয়ে দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে রয়েছে জেলার এই বিপুলসংখ্যক কৃষি শ্রমিক।

আমন আবাদের এখন চলছে বোরো আবাদের প্রস্তুতি। মাঠে রয়েছে বিভিন্ন জাতের সবজি ও রবিশস্য। প্রতিদিন এসব ফসলের পরিচর্যা করতে মাঠে কাজ করতে হচ্ছে কৃষি শ্রমিকদের। আর এই দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে কাজ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।

দিনাজপুরের বিরল উপজেলার আজিমপুর গ্রাম। অব্যাহত ঘন কুয়াশা আর হাড়কাঁপানো তীব্র শীত উপেক্ষা করে কপি ক্ষেতে কাজ করছিলো কম্পিনাথ রায়সহ ৩ জন কৃষি শ্রমিক।

সোমবার কাছে গিয়ে কথা বলতেই কম্পিনাথ বলেন, বেজায় (খুবই) জার (শীত), এই জারত কাম করিতে হাত-পাও গেলা থোপসা হই আইসেছে। কি করিমো-কাম না করিলে হামার ভাতও হয়না। আর এই জারত কাম করিতেও বেজায় কষ্ট হচে। খালি হাতে হিমশীতল মাটি নিয়ে কাজ করতে গোটা শরীর থর থর করে কাঁপছিল তার।

এমন শীতে কাজ করছেন কিভাবে? এমন কথা জিজ্ঞেস করতেই কম্পিনাথ কেঁপে কেঁপে এমন উত্তর দেন। তার সঙ্গে ওই কপি ক্ষেতে কাজ করছিল আরও দুই শ্রমিক। তাদেরও অবস্থা অনুরূপ। তারা জানান, মাঠে কাজ না করলে তাদের ভাত জোটে না। তাই রোদ, বৃষ্টি, গরম আর তীব্র শীত হোক-তাদের কাজ করতেই হবে।

শুধু কম্পিনাথ রায় নন, গত কয়েক দিনের শৈত্যপ্রবাহ আর হাড় কাঁপানো তীব্র শীতে দুর্বিষহ অবস্থা দিনাজপুর জেলার সাড়ে ৯ লক্ষাধিক কৃষি শ্রমিকের। অনেকেই এই শীতে কাজ না পেয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। আবার অনেকেই দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে মাঠে কাজ করছেন তীব্র শীত উপেক্ষা করে।

দিনাজপুর জেলা প্রশাসনের হিসাব মতে জেলার মোট লোকসংখ্যা ৩৩ লাখ ১৫ হাজার ২৩৪ জন। এদের মধ্যে কৃষি শ্রমিক ২৯ দশমিক ১৯ শতাংশ। এই হিসেব মতে দিনাজপুর জেলায় কৃষি শ্রমিকের সংখ্যা ৯ লাখ ৬৭ হাজার ৭১৬ জন। এই সাড়ে লক্ষাধিক কৃষি শ্রমিক অব্যাহত এই তীব্র শীতে চরম দুর্বিপাকে রয়েছে। বেশিরভাগ শ্রমিকই কাজ না পেয়ে বাড়িতে বসে আছেন অনাহারে-অর্ধাহারে।

মঙ্গলবার দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা মাপন যন্ত্রের পারদ একটু উপরে উঠলেও কমেনি শীতের তীব্রতা। মঙ্গলবারও দিনভর দেখা মেলেনি সূর্যের। সকালে পানির মতো ঝরে কুয়াশা। এতে রাস্তা-ঘাট পানিতে ভিজে যায়।

দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জানান, পৌষের শেষে এসে দিনাজপুরসহ এই অঞ্চলে কমতে শুরু করেছে তাপমাত্রা। উত্তরের হিমেল বাতাস প্রবাহিত হওয়ার কারণে শীতের তীব্রতা বেড়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও জানান, আকাশের উপরিভাগে ঘন কুয়াশা থাকায় সূর্যের তাপ ভূপৃষ্ঠে পুরোপুরি আসছে না। এজন্য বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। মঙ্গলবার দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম