মেসি দুনিয়া বদলাতে পারলে আমি কেন একটা এলাকা পারব না: ব্যারিস্টার সুমন
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০৬:৩০ পিএম
হবিগঞ্জ-৪ থেকে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে লড়ছেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। ছবি: যুগান্তর
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ-৪ মাধবপুর-চুনারঘাট থেকে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে লড়ছেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে লড়ছেন সংসদ সদস্য বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী।
ব্যারিস্টার সুমন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ছিলেন। তবে আইন পেশা ও রাজনীতির মাধ্যমে যতটা খ্যাতি পেয়েছেন তার থেকে বেশি আলোচিত হয়েছেন বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততার মাধ্যমে। এই জনপ্রিয়তা সুমনকে ভোটের মাঠেও এগিয়ে রেখেছে।
ভোটের মাঠের চিত্র ও ফল নিয়ে যুগান্তরের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মানিক রাইহান বাপ্পী।
আরও পড়ুন: ভোটের মাঠে হারেননি যেসব হেভিওয়েট
যুগান্তর: নির্বাচনে জয় নিয়ে আপনি কতটা আশাবাদী?
ব্যারিস্টার সুমন: একজন মানুষ সর্বোচ্চ যতটা আশাবাদী হতে পারে, ততটা আমি আগামী কালের ফল নিয়ে আশাবাদী।
যুগান্তর : আপনার একটা ভাইরাল উক্তি আছে, ‘৫ ফুট ৮ ইঞ্চির মেসি যদি পৃথিবী জয় করতে পারে, তাহলে আমি ৫ ফুট ৯ ইঞ্চির সুমন কেনো ইতিহাস বদলাতে পারব না’ কীভাবে ইতিহাস বদলাতে চান?
ব্যারিস্টার সুমন: আমি ইতিহাসটা বদলাতে চেয়েছি যে, আমার এলাকা পিছিয়ে আছে। বিশেষ করে রাস্তা-ঘাটসহ যা যা আছে তার অভূতপূর্ব উন্নয়ন করে বদলাতে চাই। আমি তো লন্ডনে পড়ালেখা করেছি। সেখানকার নলেজ আছে। সেগুলো দিয়ে তুলনা করেছি যে, তাদের কী কী আছে আর আমাদের কী কী আছে? পরে খেয়াল করে দেখলাম, ইচ্ছা করলেই অনেক কিছুই পরিবর্তন করা যায়। তাছাড়া তাদের থেকে কোনো অংশেই আমাদের যোগ্যতা কম না। ওই জায়গাগুলোর পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের সভ্যতার ইতিহাস ও উন্নয়নের ইতিহাস বদলাতে চাই। মানুষের পড়ালেনা, সংস্কৃতি ও খেলাধুলার ইতিহাসগুলো বদলাতে চাই।
তবে আমার জায়গাটা কিন্তু অনেক ছোট, মেসির জায়গাটা অনেক বড়। সে সারা দুনিয়া বদলেছে। সে হয়তো আমার থেকে অনেক মেধাবী কিন্তু আমার কথা হলো, সে যদি পৃথিবী বদলাতে পারে, আমি কী আমার এলাকাটা বদলাতে পারব না?
যুগান্তর: এমপি নির্বাচিত হলে প্রথম কী কাজ করবেন?
ব্যারিস্টার সুমন: আমার এলাকায় চুনারুঘাট সদরের মধ্যখানে একটা মরা গাঙ আছে। সেখানে অনেকগুলো কচুরি পানা আছে। সেটাকে পরিস্কার করব। এখন ওই জায়গাটা মনে করেন ডেথ, সেটাকে আমি আইসিইউতে নিয়ে আসতে চাই। অর্থাৎ ময়লা পরিস্কারের মধ্যে দিয়ে আমার যাত্রা শুরু করতে চাই। ময়লা ও আবর্জনা না থাকলে এটা পর্যটন কেন্দ্র হতে পারত।
যুগান্তর: দেশজুড়ে আপনার জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে। তেমনি তুমুল জনপ্রিয়তা থেকে রাজনীতিতে আসার পর অনেকের জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছে। বাংলাদেশের আপনি জনপ্রিয়দের একজন। নির্বাচিত হওয়ার পর আপনার জনপ্রিয়তায় ধস নামতে পারে কিনা?
ব্যারিস্টার সুমন: জনপ্রিয়তা বাড়বে না, কমবে সেটা ভেবে কাজ করি না। কাজ করতে থাকি। এর মানে এই নয় যে, সব কাজে জনপ্রিয় হয়ে থাকি না, অনেক কাজে আমি অনেক সমালোচনার শিকারও হয়েছি। এটা আমার কাছে মূখ্য বিষয় না। আমি মনে করি, নক্ষত্রের তো পতন ঘটে। পতন ঘটতেই পারে। এটাকে আমি খুব অস্বাভাবিক হিসেবে নিচ্ছি না। আমি তো চেগুয়েভারা, ভিদেল কাস্ত্রোর মতো নেতা না। এরকম চিন্তা ভাবনা আমার নেই।
আমি শুধু আমার অঞ্চল নেই কাজ করতে চাই। আমার এলাকা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারে বলেই মানুষ আমাকে এতো ভালোবাসা দিচ্ছে।
যুগান্তর : রাজনীতি, না আইন পেশা কোনটাকে গুরুত্ব দেবেন নির্বাচিত হলে?
ব্যারিস্টার সুমন: নির্বাচিত হলে পেশার জায়গায় পেশা থাকবে। কেন না এখান থেকে তো আমার ইনকাম হবে। এটা দিয়ে আমাকে চলতে হবে। এ পেশায় থাকতে না পারলে বিকল্প আমাকে ইনকামের ব্যবস্থা করতে হবে। আমার রাজনীতি কোনোভাবে ইনকামের জায়গা না। অবশ্যই আমার ইনকামের একটা বৈধ জায়গা থাকতে হবে। আইন পেশা আমার ইনকামের জায়গা থাকবে আর রাজনীতি আমার সেবা করার মাধ্যম থাকবে।
যুগান্তর : আপনি নৌকার মাঝি হতে চেয়েছিলেন, না পেয়ে কেমন অনুভূতি হয়েছিল ?
ব্যারিস্টার সুমন: ব্যক্তির চেয়ে দল বড়। ব্যক্তি হিসেবে কিছুক্ষণের জন্য তো খারাপ লাগতে পারে এটা স্বাভাবিক। অনেক সময় ব্যক্তিকে দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। আমি একটা দলের ব্যানারে আছি। মনোনয়ন পেলেও আছি, না পেলেও আছি। এমপি হলেও আছি, না হলেও আছি। এবার নির্বাচনে দাঁড়ানোর তো সুযোগ দলই করে দিয়েছে।
যুগান্তর: আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান সংসদ সদস্য বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী। তাকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কতটা শক্ত মনে করছেন?
ব্যারিস্টার সুমন: আমি তাকে অনেক শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করি। তাকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। উনি অনেকদিন এমপি ছিলেন ও মন্ত্রী ছিলেন। এককথায় শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার জন্য যা যা লাগে উনার মধ্যে সব আছে।
যুগান্তর: হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারঘাট) এর ভোটাররা বর্তমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুবকে ভোট না দিয়ে, কেন আপনাকে ভোট দেবে বলে মনে করেন আপনি?
ব্যারিস্টার সুমন: আমি এমপি-মন্ত্রী না হয়েও এলাকায় যে কাজ করেছি, আমার প্রতিদ্বন্দ্বী মন্ত্রী হয়েও তা পারেননি। আমি ছোট বড় ৪৯টি ব্রিজ বানিয়েছি, ৩৭ হাজার আমের চারা লাগিয়েছি। মসজিদ মাদ্রাসা ও ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়েছি। ফুটবল একাডেমির মাধ্যমে গণজোয়ার সৃষ্টি করেছি।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কোনো জনসম্পৃক্ততা নেই। এলাকার উন্নয়নেও তার অবদান নেই। তার বিপরীতে পাবলিক ফান্ড তো দূরের কথা, প্রাইভেট ফান্ড থেকে এতগুলো কাজ করেছি আমি। সুতরাং এটিই হবে আমাকে ভোট দেওয়ার বড় কারণ।
মানুষ মনে করছে, যে মানুষটা ক্ষমতায় আসার আগেই এত কাজ করল, এ মানুষটি যদি সরকারি ক্ষমতা পায় তাহলে অনেক কিছু চেঞ্জ করে দিতে পারবে। এটিই আমার ভোট পাওয়ার বড় কারণ বলে মনে করি।
যুগান্তর: আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য যুগান্তরের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
ব্যারিস্টার সুমন: আপনাকেও ধন্যবাদ।