বগুড়া-৭ আসন
পাঁচ বছরে এমপি বাবলু ও তার স্ত্রী কোটিপতি

বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:৪৮ পিএম

বগুড়া-৭ আসনের বর্তমান সংসদ-সদস্য রেজাউল করিম বাবলু ‘আলাউদ্দিনের চেরাগ’ হাতে পেয়ে পাঁচ বছরে কোটিপতি হয়েছেন। তার সম্পদের পরিমাণ এক কোটি ৬৪ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। শুধু তিনি নন; তার স্ত্রীও কোটিপতি বনে গেছেন। এছাড়া চার মেয়ে ও এক ছেলে এমনকি পিএস শ্যালকও ধনীর কাতারে চলে এসেছেন।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনে ভাগ্যের জোরে রেজাউল করিম বাবলু ওরফে শওকত আলী গোলবাগী বাবলু স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে এমপি নির্বাচিত হন। এক সময় তিনি স্থানীয় দৈনিকে বিনা বেতনে সাংবাদিকতা করতেন। তার আয়ের নির্দিষ্ট কোনো মাধ্যম ছিল না। চলাফেরা করতে ভায়া মোটরসাইকেলে। প্রথমবার এমপি হয়েই তিনি আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন। ২০১৮ সালের হলফনামায় বাবলু পেশা হিসাবে ব্যবসা ও সাংবাদিকতা উল্লেখ করেছিলেন। তখন তার হাতে নগদ ৩০ হাজার ও ব্যাংকে ৩০ হাজার টাকা ছিল। তার বার্ষিক আয় ছিল মাত্র পাঁচ হাজার টাকা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী বাবলু হলফনামায় পেশা হিসাবে ইট, বালু, সিমেন্ট, অনলাইন পোর্টাল ও খাদ্য ব্যবসার কথা উল্লেখ করেছেন। বর্তমানে তার আয় কয়েকশগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন তিনি ও তার ওপর নির্ভরশীলদের বার্ষিক আয় ৩৬ লাখ ২৪ হাজার ৩৩৫ টাকা। বর্তমানে তার কাছে পাঁচ লাখ ৫০ হাজার নগদ টাকা আছে।
আগে বাবলুর ৫০ হাজার টাকা মূল্যের মোটরসাইকেল ছিল। এখন তার একটি নিশান জিপ ও একটি ল্যান্ড ক্রুজার রয়েছে। এরমূল্য এক কোটি চার লাখ ৪৫ হাজার টাকা। আগের হলফনামায় আয়ের উৎস হিসাবে কৃষি খাত থেকে বছরে তিন হাজার টাকা ও ব্যবসা থেকে বছরে দুই হাজার টাকা আয়ের কথা উল্লেখ করেন বাবলু। এবারে কৃষি খাতে তার কোনো আয় নেই। বাড়ি ভাড়া থেকে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা, ইট, বালু, সিমেন্ট ও অনলাইন পোর্টাল থেকে বছরে আয় ১১ লাখ ১৫ হাজার টাকা। সংসদ-সদস্য হিসাবে প্রাপ্ত সম্মানি ও আনুতোষিক ২৩ লাখ ২৪ হাজার ২২৫ টাকা। গত নির্বাচনের হলফনামায় বাবলুর নামে কোনো বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্টের উল্লেখ ছিল না। বর্তমানে তার নামে ১৫ লাখ টাকা মূল্যের একটি অ্যাপার্টমেন্ট আছে। সব মিলিয়ে বর্তমানে তার সম্পদের মূল্য এক কোটি ৬৪ লাখ ৩৯ হাজার ৩৩৫ টাকা।
পাঁচ বছরে শুধু বাবলু নয় তার স্ত্রী গৃহিণী বিউটি বেগমও অনেক অর্থ ও সম্পদের মালিক হয়েছেন। আগে স্ত্রীর নামে কোনো নগদ টাকা ও ভবন না থাকলেও এবার তার নামে কোটি টাকার অধিক মূল্যের এক হাজার বর্গফুটের একটি ভবন আছে। আগের হলফনামায় স্বর্ণের উল্লেখ না থাকলেও এবার বৈবাহিক সূত্রে ১০ ভরি স্বর্ণালংকারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ওই সময় বাবলুর নিজের কাছে ছয় ভরি স্বর্ণ থাকলেও এবার তা উল্লেখ নেই। বিউটি বেগমের নামে নগদ দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং তিন লাখ টাকা মূল্যের একটি মোটরসাইকেল রয়েছে।
এমপি রেজাউল করিম বাবলু সাংবাদিকদের জানান, তার কোনো অবৈধ সম্পদ বা জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদ নেই। পাঁচ বছরে তিনি এলাকায় নজিরবিহীন উন্নয়ন করেছেন। আবারও নির্বাচিত হলে অসমাপ্ত ও নতুন উন্নয়নমূলক কাজ করবেন। তিনি আরও বলেন, তার বিরুদ্ধে বহু ভুয়া ও মিথ্যা প্রতিবেদন করলেও সাংবাদিকদের জন্যও তিনি কাজ করে যাবেন।
বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কয়েকবার এমপি নির্বাচিত হলেও প্রতিনিধিত্ব করেননি। আসনটি তিনি বারবার ছেড়ে দিয়েছেন। উপনির্বাচনে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু নির্বাচিত হয়েছেন। গত নির্বাচনে গাবতলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোরশেদ মিল্টনকে বিএনপি প্রার্থী করলেও তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। নৌকা ঠেকাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী বাবলুর ট্রাক মার্কাকে বিএনপি সমর্থন দেয়।