রংপুর বিভাগে ২০৯ প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ, বাতিল ৬৯
রংপুর ব্যুরো
প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:২৫ পিএম
আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন যাচাই-বাছাই শেষে রংপুর জেলার ৬টি আসনসহ বিভাগের আট জেলার ২০৯ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ হয়েছে। বিভিন্ন অসঙ্গতির কারণে অবৈধ হয়েছে ৬৯ জনের মনোনয়ন। বিভাগের ৩৩টি আসনে মোট মনোনয়ন দাখিল হয় ২৭৮টি। এর আগে সোমবার রাতে মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ের শেষ দিনে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তারা বৈধ ও অবৈধ প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন।
রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগের আট জেলার ৩৩টি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), কংগ্রেস, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম), কল্যাণ পার্টিসহ বিভিন্ন দলের ২৭৮ জন মনোনয়ন ফরম দাখিল করেন। যার এক-তৃতীয়াংশই আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী।
শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) থেকে সোমবার পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম যাচাই-বাছাই করেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা। শেষ দিনে যাচাই-বাছাই কার্যক্রম শেষে ৬৯ জন প্রার্থীর মনোনয়ন অবৈধ হয়েছে। প্রার্থী হিসেবে বৈধ হয়েছেন ২০৯ জন। অবৈধ বিবেচিত হওয়া প্রার্থীদের বেশিরভাগ স্বতন্ত্র।
রংপুর জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান জানান, ছয়টি সংসদীয় আসনে মোট ৪৯ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম জমা দেন। এর মধ্যে ৩৯ জনের মনোনয়ন বৈধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বাতিল হয়েছে ১০ প্রার্থীর মনোনয়ন।
যাদের মনোনয়ন অবৈধ হয়েছে তারা হলেন- রংপুর-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোশারফ হোসেন, রংপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী বিশ্বনাথ সরকার, সুমনা আক্তার ও বিএনএফ মনোনীত জিল্লুর রহমান। রংপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী রাকিবুল বাশার, রংপুর-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জাকির হোসেন সরকার এবং রংপুর-৬ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম, তৃণমূল বিএনপির ইকবাল হোসেন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মাহবুল আলম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী তাকিয়া জাহান চৌধুরী।
কুড়িগ্রাম জেলার চারটি সংসদীয় আসনে ৩৯ জন প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেন। এর মধ্যে যাচাই-বাছাইয়ে ২৫ জন বৈধ হয়েছেন। অবৈধ হয়েছে ১৪ জনের মনোনয়ন। কুড়িগ্রাম-৩ আসনে কারো মনোনয়ন অবৈধ হয়নি। জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ এ তথ্য জানিয়েছেন।
যাদের মনোনয়ন অবৈধ হয়েছে তারা হলেন- কুড়িগ্রাম-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আতিকুর রহমান, কুড়িগ্রাম-২ আসনের বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মোছা. শেফালী বেগম, স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু সুফিয়ান, স্বতন্ত্র প্রার্থী নাজমুল হুদা, জাকের পার্টির মশিউর রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিউজ্জামানর ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. হামিদুল হক খন্দকার।
কুড়িগ্রাম-৪ আসনের স্বতন্ত্রপ্রার্থী শাহ নুর-ই শাহী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মোহাম্মদ আবু শামিম হাবীব, তৃণমূল বিএনপির আতিকুর রহমান, বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির আব্দুল হামিদ, স্বতন্ত্রপ্রার্থী জোবাইদুল ইসলাম বাদল, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ফারুকুল ইসলাম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মাছুম ইকবাল।
লালমনিরহাট জেলার ৩টি আসনে ২৭ জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেন। এদের মধ্যে ১৯ জনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়। যাচাই-বাছাইয়ে অবৈধ হয়েছে ৮ জনের মনোনয়ন। জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
যাদের মনোনয়ন অবৈধ হয়েছে তারা হলেন- লালমনিরহাট-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমান প্রধান, আব্দুল বাকী ও কেএম আমজাদ হোসেন তাজু। লালমনিরহাট-২ আসনের স্বতন্ত্রপ্রার্থী রবীন্দ্রনাথ বর্মন, হালিমা খাতুন, জাকের পার্টির রজব আলী, বাংলাদেশ কংগ্রেসের দেলাব্বর রহমান এবং লালমনিরহাট-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জাবেদ হোসেন বক্কর।
গাইবান্ধার পাঁচটি সংসদীয় আসনে ৩৫ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া হলফনামায় তথ্য গোপন, নমুনা ভোটারের স্বাক্ষর ও তথ্যের গরমিলসহ বিভিন্ন কারণে ১৭ জনের মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। ৫টি আসনে ৫২ জন প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন বলে জানান রিটানিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল।
অবৈধ প্রার্থীরা হলেন গাইবান্ধা-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোস্তফা মহসিন, খেলাফত আন্দোলনের হাফিজার রহমান সরদার, আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগার, এবিএম মিজানুর রহমান ও গণফ্রন্টের শরিফুল ইসলাম। গাইবান্ধা-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহ সারোয়ার কবীর, মাসুমা আক্তার, রফিকুল ইসলাম, সাজেদুর রহমান এবং কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের আবু তাহের সায়াদ চৌধুরী। গাইবান্ধা-৩ আসনের জাসদের খাদেমুল ইসলাম খুদি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু জাফর তৈয়ব। গাইবান্ধা-৪ আসনের এনপিপির রুমি আকরাম, স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর হোসেন ও শ্যামলেন্দু মোহন রায় এবং গাইবান্ধা-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারজানা রাব্বী বুবলি ও এইচএম এরশাদ।
নীলফামারীর চারটি আসনে ৩৭ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা করেন।
যাচাই-বাছাই শেষে ২৭ জনকে বৈধ এবং ১০ জনের মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ। যাদের মনোনয়ন অবৈধ হয়েছে তারা হলেন নীলফামারী-১ আসনের ন্যাশনাল পিপলস পার্টির করুনাময় মল্লিক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমরান কবির চৌধুরী জনি, নীলফামারী-২ আসনের ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী বিকাশ চন্দ্র অধিকারী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়নাল আবেদীন, নীলফামারী-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মার্জিয়া সুলতানা, হুকুম আলী খান, মো. রোকুনুজ্জামান ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির বাদশা আলমগীর এবং নীলফামারী-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সিদ্দিকুল আলম।
দিনাজপুর জেলার ছয়টি আসনে ৩৪ জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেন। যাচাই-বাছাই শেষে ৩০ জনকে বৈধ এবং ৪ জনের মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করেছেন জেলা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা শাকিল আহমেদ। যাদের মনোনয়ন অবৈধ হয়েছে তারা হলেন দিনাজপুর-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু হুসাইন বিপু, দিনাজপুর-৩ আসনের রাসেদ পারভেজ, দিনাজপুর-৫ আসনের ব্রিগেডিয়ার (অব.) তোজাম্মেল হোসেন ও দিনাজপুর-৬ আসনের জাতীয় পার্টি মনোনীত ফিরোজ সুলতান আলম।
পঞ্চগড়ের দুটি নির্বাচনি আসনে প্রার্থী যাচাই-বাছাইয়ে ১৬ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ ও ৪ জন প্রার্থীর মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণা করেছেন জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম। এর আগে দুটি আসনে ২০ প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেন। এর মধ্যে পঞ্চগড়-১ আসনের ১৫ জন এবং পঞ্চগড়-২ আসনের ৫ জন প্রার্থী ছিলেন। অবৈধ প্রার্থীরা হলেন পঞ্চগড়-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু তোয়বুর রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী আকতারুল ইসলাম, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির মিল্টন রায় ও মুক্তি জোটের আব্দুল মজিদ।
ঠাকুরগাঁও জেলার তিনটি আসনে ২০ জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা করেন। যাচাই-বাছাই শেষে ১৮ জনকে বৈধ এবং ২ জনের মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণা করেছেন জেলা রিটার্নিং কর্মকতা মাহবুবুর রহমান। অবৈধ প্রার্থীরা হলেন ঠাকুরগাঁও-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা আখতার মোল্লা এবং ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের স্বতন্ত্রপ্রার্থী মোছা. আশা মনি।