Logo
Logo
×

সারাদেশ

আ. লীগ নেতা বড় মনির বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করা সেই কিশোরীর লাশ উদ্ধার

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন, টাঙ্গাইল

প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:০৪ পিএম

আ. লীগ নেতা বড় মনির বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করা সেই কিশোরীর লাশ উদ্ধার

টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া বড় মনির বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দায়ের করা সেই কিশোরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার বিকালে শহরের বোয়ালী এলাকা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। 

নিহত কিশোরীর এক স্বজন বলেন, শুক্রবার রাত ১২টার দিকে আমার সঙ্গে তার (কিশোরী) মোবাইলে সর্বশেষ কথা হয়েছে। শনিবার দুপুর ১২টার দিকে আমার ননদ স্বামীকে ফোন করে জানান, সে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে। তার ছেলে কান্না করছে। দরজা ধাক্কার দেওয়ার পরও দরজা খুলে নাই। পরে আমার ননদ দরজা ভাঙার চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয়নি।

টাঙ্গাইল সদর থানার ওসি শেখ আবু ছালাম মিয়া বলেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিস্তারিত জানা যাবে।

অতিরিক্ত পুলিশ (অপরাধ) মো. শরফুদ্দীন বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ঢাকার ক্রাইমসিনকে খবর দেওয়া হয়েছে। তারা আসলে লাশটি উদ্ধার করা হবে।

বড় মনি জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব ও টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনিরের ভাই। বড় মনি জামিনে মুক্ত রয়েছেন।

প্রসঙ্গত, গত ৫ এপ্রিল রাতে টাঙ্গাইল সদর থানায় বড় মনিরের বিরুদ্ধে ওই কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করা হয়। মামলায় ধর্ষণের কারণে সে অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। মামলায় বড় মনিরের স্ত্রী নিগার আফতাবকেও আসামি করা হয়।

তবে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় কিশোরীকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া না গেলেও অন্তঃসত্ত্বার প্রমাণ পায় মেডিকেল বোর্ড। পরে গত ৬ এপ্রিল দুপুরে আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দেন ওই কিশোরী।

গত ২১ আগস্ট ধর্ষণ মামলায় বড় মনিরের হাইকোর্টের দেওয়া জামিন গত ৯ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত থাকবে বলে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। এ সময়ের মধ্যে ধর্ষণের শিকার ওই নারীর গর্ভে জন্ম নেওয়া নবজাতকের ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দেন আদালত।

গত ১৫ মে টাঙ্গাইলের চিফ জুডিশিয়াল আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন বড় মনি। পরে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মাহমুদুল মহসীন জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এদিকে ৩০ জুন এক বেসরকারি ক্লিনিকে পুত্র সন্তানের জন্ম দেন এশা। গত ১১ জুলাই বিচারপতি শেখ জাকির হোসেনের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ বড় মনিরকে জামিন দেন। পরে জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এরপর চেম্বার আদালত তার জামিন স্থগিত করে দেন। ২১ আগস্ট ধর্ষণ মামলায় বড় মনিরের হাইকোর্টের দেওয়া জামিন ৯ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত থাকবে বলে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। এ সময়ের মধ্যে ধর্ষণের শিকার ওই নারীর গর্ভে জন্ম নেওয়া নবজাতকের ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দেন আদালত। শিশুটির জৈবিক (বায়োলজিক্যাল) পিতা বড় মনির নন; ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনে এ তথ্য আসে। ৯ অক্টোবর তাকে জামিন দেন আপিল বিভাগের প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের আপিল বেঞ্চ।

মামলার এজাহারে বলা হয়-ভাইয়ের সঙ্গে ওই কিশোরীর পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ হয়। এ নিয়ে বড় মনির সঙ্গে কিশোরীর হোয়াটসঅ্যাপে কথা হয়। সমস্যা সমাধান করে দেওয়ার আশ্বাস দেন মনি। ১৭ ডিসেম্বর শহরের আদালতপাড়ায় মনি ১০ তলা ভবনের চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটে যেতে বলেন। সেখানে গেলে ওই কিশোরীকে শারীরিক সম্পর্ক করার প্রস্তাব দেন মনি। রাজি না হওয়ায় তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে তাকে একটি কক্ষে আটকে রাখেন। প্রায় তিন ঘণ্টা পর কক্ষে প্রবেশ করে তাকে মনি ধর্ষণ করেন। ধর্ষণ শেষে কারও কাছে এ ঘটনা প্রকাশ করতে তিনি নিষেধ করেন। প্রকাশ করলে প্রাণে মেরে ফেলা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়। ওই ঘটনার পর থেকে ভয়ভীতি দেখানো হয় এবং প্রথমবার ধর্ষণের সময় তোলা ছবি দেখিয়ে তাকে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ করা হতো। এতে কিশোরীটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। এ কথা বড় মনিকে জানালে তাকে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ ও হুমকি দেওয়া হয়। সন্তান নষ্ট করতে রাজি না হওয়ায় ২৯ মার্চ রাত ৮টার দিকে মনি তাকে আদালতপাড়ার বাড়িতে তুলে নিয়ে যান। সেখানে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়। রাজি না হওয়ায় বাসায় এক কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। সেখানে তাকে আবারও ধর্ষণ করেন মনি। একপর্যায়ে তার স্ত্রী কিশোরীকে মারধর করেন। এতে অসুস্থ হয়ে পড়লে রাত ৩টার দিকে তাকে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। তাকে নানা হুমকিও দেওয়া হয়। শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ থাকায় মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম