Logo
Logo
×

সারাদেশ

ভুয়া আমন্ত্রণপত্রে কানাডা যাত্রা

ঢাকা বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হলো সিলেটের ৪২ জনকে

Icon

সিলেট ব্যুরো

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৩, ১০:৪১ পিএম

ঢাকা বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হলো সিলেটের ৪২ জনকে

ভুয়া আমন্ত্রণপত্রে কানাডা গমনেচ্ছু সিলেটের ৪২ জন যাত্রীকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেই ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৬ নভেম্বর তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। একটি ‘কল্পিত’ বিয়েতে অংশগ্রহণের জন্য ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে আবেদন করে কানাডার ট্যুরিস্ট ভিসা পেয়েছিলেন তারা। 

সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনও সম্পন্ন করেন তারা। তবে কানেকটিং ফ্লাইটে ঢাকায় যাওয়ার পর কানাডাগামী বাংলাদেশ বিমানে উঠার সময় ধরা পড়ে জালিয়াতির ঘটনা। যে ‘ইনভাইটেশন লেটার’ দিয়ে তারা ভিসা করিয়েছিলেন সেটা ভুয়া। 

এরপর বিমান বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ এই ৪২ যাত্রীকে অফলোড করে। তারা সবাই কানাডায় একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণে যাচ্ছিলেন। এর আগে একই বিয়ের আমন্ত্রণপত্র দিয়ে সিলেট থেকে বেশ কয়েকজনকে কানাডা পাঠায় একটি সিন্ডিকেট।

বিমান কর্তৃপক্ষ খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হয়েছে, যে মেয়ের বিয়ের আমন্ত্রণ দিয়ে ভিসা করানো হয়েছিল, আসলে ওই মেয়ের বিয়ের কোনো অনুষ্ঠানই হচ্ছে না সেখানে।

একটি সূত্র জানায়, কানাডার টরন্টো ও সিলেটের কতিপয় এজেন্সি মিলে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে ভিসা করানোর একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছে। ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা কানাডায় অবস্থানরত বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে ভুয়া আমন্ত্রণপত্র তৈরি করে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে ভিসা করিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে তারা যাত্রীদের সঙ্গে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার চুক্তি করে। ভিসা হলে তারা তাদের কাছ থেকে এই টাকা আদায় করে। 

কানাডার টরন্টোতে ওই কাল্পনিক বিয়েতে অংশ নেওয়ার জন্য কাল্পনিক কনে, কনের মা, বাবা, ভাই ও চাচাসহ শতাধিক ব্যক্তিকে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়। সিন্ডিকেটের সদস্যরা ওই আমন্ত্রণপত্র দিয়ে তাদের চুক্তিকৃত প্যাসেঞ্জারের কানাডার ভিসার জন্য আবেদন করেন। কাকতালীয়ভাবে বেশিরভাগ আবেদনকারীর ভিসাও হয়ে যায়। ওই সিন্ডিকেট অক্টোবরের মাঝামাঝি ২৫ জনকে কানাডায় পাঠায়। 
অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে যান আরও ৮ জন। কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই তারা কানাডায় পৌঁছান। দুই দফায় ৩৩ জন নিরাপদে কানাডায় পৌঁছার পর গত ৬ নভেম্বর ওই সিন্ডিকেট আরও ৪২ জনকে কানাডায় পাঠানোর চেষ্টা করে। সহজে ইমিগ্রেশন পার হতে তারা বাংলাদেশ বিমানের সিলেট-ঢাকা-টরেন্টো ফ্লাইটের টিকিট কাটেন। যথারীতি তারা সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে কানেকটিং ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছান।

এই ঘটনায় বিমানের জেনারেল ম্যানেজার (সিকিউরিটি) মাহমুদুল হাসানের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত ১০ নভেম্বর শুক্রবার সিলেট ওসমানি আন্তজাতিক বিমানবন্দরে এই ঘটনাটি ঘটে। সোমবার তদন্ত কমিটির সদস্যরা সিলেট বিমানবন্দর গিয়ে বিমানের সংশ্লিস্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। তারা ৪৪ যাত্রীর তালিকাসহ বোডিং কার্ড ইস্যু করা কম্পিউটারগুলোতে থাকা সব কাগজপত্র জব্দ করেছেন। 

সংশ্লিস্ট কর্মকর্তাদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করেছেন। যেসব ট্রাভেল এজেন্সি থেকে এসব যাত্রীরা টিকিট কেটেছের তাদের তালিকাও সংগ্রহ করেছেন। ওইদিন বোডিং কার্ড ইস্যুকারী কর্মীরা তাদের ফোনে কাদের সঙ্গে কথা বলেছেন এখন সেটি বের করার কাজ চলছে।

তদন্ত সংশ্লিস্ট সুত্র জানায় এই ঘটনার সঙ্গে বাংলাদেশ বিমানসহ আদম পাচারকারী কারো কোন ধরনের সংশ্লিস্টতা থাকতে পারে। কারণ অনুমতি না থাকার পরও ম্যানুয়ালী বোডিং কার্ড ইস্যু করে ৪২জন যাত্রীকে কানাডা যেতে সহায়তা করার অভিযোগ উঠেছে এই চক্রের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় পুরো বিমানবন্দর জুড়ে চাঞ্চল্য সৃস্টি হয়েছে। 

বিমানের একটি সুত্র জানায়, নিয়ম হল কোন যাত্রী কানাডার ভিসা নিয়ে বোডিং কার্ড নিতে চাইলে বিমান কতৃপক্ষ সিস্টেমে ওই যাত্রীর সব তথ্য উপাত্ত দেওয়ার পর ‘ওকে টু বোর্ড’ লেখা সিগনাল আসে। এই সিগনাল পাওয়ার পরই অটোমেটিক্যালি তার বোডিং কার্ড ইস্যু হয়। কিন্তু ওইদিন এই ৪৪ যাত্রীর কারোই বোডিং কার্ড ইস্যু করতে পারছিলেন না সিলেট বিমানবন্দরে অবস্থিত বিমান কর্মীরা। তারা যত বারই যাত্রীদের তথ্য উপাত্ত দিচ্ছিলও ততবারই সেটি বাতিল হয়ে যায়। 

উপায় না পেয়ে তারা বিষয়টি বিমানের উর্ধতন কর্মপক্ষকে জানায়। এক পর্যায়ে বিমানের এক শীর্ষ কর্মকর্তার নিদের্শে  তাদের সবার বোডিং কার্ড ম্যানুয়ালী ইস্যু করা হয়। তারা ঢাকা হয়ে সিলেট যাওয়ার কথা। ঢাকায় তাদের ৭ ঘন্টা ট্রানজিট ছিল। এর ফাঁকে বিমানের ঢাকা অফিস সংশ্লিস্ট ভিসা অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে ৪২ যাত্রীর ভুয়া কাগজপত্র থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এরপরও তাদের অফলোড করা হয়। 

ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একটি সূত্র জানায়, ১০ নভেম্বর শুক্রবার রাতে ওই ৪২ জন ট্রানজিটে অপেক্ষা করার সময় বিমানের পাসপোর্ট চেকিং ইউনিটের সদস্যদের সন্দেহ হয়। তারা দেখতে পান, ওই যাত্রীদের প্রায় সবার সাদা পাসপোর্টে কানাডার ভিসা লাগানো। এতে তাদের সন্দেহ আরও বাড়ে। 

এসময় বিমান কর্মকর্তারা তাদের আমন্ত্রণপত্র ও হোটেল বুকিং দেখতে চান। তখনই চমকে যান কর্মকর্তারা। তারা দেখতে পান, ওই যাত্রীদের সবাই একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে কানাডা যাচ্ছেন। আর হোটেল বুকিংয়ের পরিবর্তে তারা কিছু বাড়ি ভাড়ার কাগজপত্র দেখান।
 
বিমান কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে কয়েকজন যাত্রী জানান, তারা যেহেতু একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন তাই একত্রে থাকার জন্য তারা বাসা ভাড়া নিয়েছেন। আবার যাত্রীদের কেউ কেউ বিমানবন্দরে বসেই হোটেল বুকিং করেন। কানাডায় বিয়েতে অংশ নিতে একসঙ্গে বাংলাদেশ থেকে এত লোক যাওয়ার বিষয়টিতে খটকা লাগায় বিমান কর্মকর্তারা তাদের ভিসা যাচাইয়ের জন্য সিঙ্গাপুর ও দিল্লিতে কানাডার ভিসা অফিসে ইমেইল পাঠান।

যাত্রীদের জানানো হয় যে, কানাডা বর্ডার এজেন্সি নিশ্চিত করার পর তাদের বিমানে উঠানো হবে। নির্ধারিত ফ্লাইট চলে গেলেও এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ তাদের হোটেলে রেখে পরে পাঠাবে। কিন্তু পরদিন সকাল পর্যন্ত সিঙ্গাপুর ও দিলি­ থেকে কোনো তথ্য না পাওয়ায় বিমান কর্তৃপক্ষ পাসপোর্টে ইমিগ্রেশন সিল কেটে দিয়ে লাগেজসহ তাদের ফিরিয়ে দেন।

বিমান সূত্রে জানা গেছে, টরন্টো পৌঁছানোর পর যদি এই যাত্রীরা ইমিগ্রেশনে আটকে যান, তাহলে প্রতিটি যাত্রীর জন্য বিমানকে ১৮০০ ডলার জরিমানা করা হবে। আর যেতে না পারায় প্রায় কোটি টাকা লোকসান হয়েছে বিমানের। এ নিয়ে প্রতিক্রিয়াও চলছে। এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ এর দায় যাত্রীদের ওপর ছেড়ে দিতে চায়। 

আর যাত্রীরা বলছেন, তাদের ভিসা বৈধ, এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ তাদের যেতে দেয়নি। তাই যাত্রীদের টিকিটের দায় এয়ারলাইন্সকেই মেটাতে হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম