যশোরে ঠিকানাবিহীন অবস্থায় শেল্টার হোমে থাকা সেই তিন নারীর মধ্যে বাকপ্রতিবন্ধী জিমকে (২৩) বাবা মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। জিম পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার চর ঘড়ঘড়ি গ্রামের বাবু পরামানিকের মেয়ে।
অনলাইন ও পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর তার ছবি দেখে পরিবারের সদস্য জিমকে শনাক্ত করেন। রোববার সকালে যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার জিমকে তার বাবা মায়ের কাছে হস্তান্তর করেন।
জিমসহ তিন ‘ঠিকানাবিহীন’ নারীকে নিয়ে দৈনিক যুগান্তরসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদটি প্রকাশিত হলে নজরে আসে পাবনার দীপ্ত টিভির প্রতিনিধি শামসুল আলমের। তিনি জিমের মায়ের ফুফাতো ভাই। তিনি ওই তিন নারীর ছবি দেখে জিমকে শনাক্ত করেন।
এরপর শামসুল আলম জিমের বাবা বাবু পরামানিক ও মা তহমিনাকে নিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় যশোরে আসেন। রোববার সকালে যশোরের কালেক্টরেট কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার জিমকে তার বাবা মায়ের কাছে হস্তান্তর করেন। এ সময় সেখানে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
জিমের বাবা বাবু পরামানিক ও মা তহমিনা জানান, প্রায় দেড় মাস আগে সন্ধ্যার দিকে প্রতিবেশী চাচার বাড়িতে টিভি দেখতে গিয়ে জিম নিখোঁজ হয়। এরপর এলাকায় অনেক খোঁজাখুঁজি করেছেন। ওঝা, কবিরাজ বাড়ি গিয়েছেন। কিন্তু কোনো সন্ধান পাননি। দেড় মাস পর মেয়েকে ফিরে পেয়ে তারা খুবই খুশি।
জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ার যশোরের প্রোগ্রাম অফিসার রিফাত রহমান রাখী জানান, গত ২৩ সেপ্টেম্বর ভবঘুরে অবস্থায় বাকপ্রতিবন্ধী তরুণী জিমকে বেনাপোল থানা পুলিশ উদ্ধার করে। ওইদিনই পুলিশের কাছ থেকে জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ার তাকে গ্রহণ করে যশোরে ঢাকা আহছানিয়া মিশনের শেল্টার হোমে রাখে। এরপর পারিবারিক একত্রীকরণের জন্য স্বজনদের সন্ধান করেন। কিন্তু ঠিকানা উদ্ধার না হওয়ায় তারা বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানান।
জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ারের আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা মুনা আফরিণ জিমের ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
জেলা প্রশাসক বরাবর প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি ও ইশারা ভাষার মাধ্যমে আধো-আধো বোলে ২৩ বছরের বাকপ্রতিবন্ধী তরুণী জানিয়েছেন, তার নাম মীম অথবা জীম। তিনি অবিবাহিত। তারা চার ভাইবোন। তিনি বড়। বাবার নাম বাবু ও মায়ের নাম রুবিনা। কিন্তু ঠিকানা জানাতে পারেননি।
জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা মুনা আফরিণ জানান, জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ার জিমের স্বজনদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই যশোর অফিসেরও সহযোগিতা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু পরিচয় উদ্ঘাটন কিম্বা স্বজনদের সন্ধান না পাওয়ায় তাকে গাজীপুরে সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রেরণের সুপারিশ করা হয়।
এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে সেটি জিমের স্বজনদের নজরে আসে। এরপর তারা তার (মুনা আফরিণ) সঙ্গে যোগযোগ করেন। বিষয়টি তিনি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদারকে জানান। জিমের বাবা মা যশোরে আসলে রোববার সকালে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার জিমকে তাদের কাছে হস্তান্তর করেন। একইসাথে উপহারসামগ্রী দিয়ে যাতায়াতের ব্যয়ভার বহন করেন।
যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, পরিচয় উদ্ঘাটন না হওয়ায় জিমসহ তিন নারীকে সরকারি শেল্টার হোমে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এরই মধ্যে সংবাদ প্রকাশের পর জিমের বাবা মা তাকে শনাক্ত করেন এবং যোগাযোগ করেন। এরপর জিমকে বাবা মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
তিনি উল্লেখ, পরিবারের চেয়ে ভাল আশ্রয়স্থল আর কোথাও হতে পারে না। জিমকে তার বাবা মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরে খুব ভাল লাগছে। শেল্টার হোমে পরিচয়হীন আরও দুজন প্রতিবন্ধী নারী রয়েছে। পরিচয় উদ্ঘাটন বা স্বজনদের সন্ধান পাওয়া গেলে তাদেরকেও পরিবারে হস্তান্তর করা হবে।