কলেজে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রলীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে আহত ১০
বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৩, ০৬:২৭ পিএম
বগুড়া জেলা ছাত্রলীগ ও সরকারি আজিজুল হক কলেজ ছাত্রলীগ আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে কলেজ ক্যাম্পাসে দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সজীব সাহা ও অপরপক্ষের মাহফুজার রহমানসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) শাহীনুজ্জামান শাহীন জানান, ছাত্রলীগের সজীব ও মাহফুজার গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দুপক্ষকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।
ছাত্রলীগের সূত্র জানায়, গত ২০২২ সালের ৭ নভেম্বর কেন্দ্র থেকে বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের ৩০ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে সজীব সাহাকে সভাপতি ও আল মহিদুল ইসলাম জয়কে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। কাঙ্ক্ষিত ‘পদবঞ্চিত’ সহ-সভাপতি তৌহিদুর রহমান ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহফুজার রহমান এবং তাদের অনুসারীরা কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করে দলীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় সরকারি আজিজুল হক কলেজে ও শহরের টেম্পল রোড দলীয় কার্যালয় এলাকায় দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে আসছে। পদবঞ্চিতরা জেলা কমিটি ও কলেজে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মরিয়া হয়ে উঠে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে সজীব সাহা ও মাহিদুল ইসলাম জয়ের নেতৃত্বে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী সরকারি আজিজুল হক কলেজের নতুন ভবনে আসেন। তারা বিএনপি ও জামায়াতের হরতাল এবং অবরোধের নামে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ক্যাম্পাসে মিছিল বের করেন।
এরপর কলেজ বটতলায় সমাবেশের আয়োজন করা হয়। খবর পেয়ে তৌহিদুর রহমান ও মাহফুজারের নেতৃত্বে তাদের বিপুলসংখ্যক সমর্থক ক্যাম্পাসে আসেন। তারা পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে ধারালো অস্ত্র, হকিস্টিক, লাঠিসোটা নিয়ে সমাবেশে হামলা চালায়।
এতে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সজীব সাহা, সৈকত, শিহাব, রাহাত ও লিটন আহত হন। এ সময় দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে সজীব গ্রুপ ক্যাম্পাস থেকে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর সজীব সাহার নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে ফিরে এসে তৌহিদুর রহমান ও মাহফুজারের গ্রুপের ওপর পাল্টা হামলা চালায়। এতে তৌহিদুর রহমান, মাহফুজার রহমানসহ ৪-৫ জন আহত হন। সদর থানা পুলিশ এসে দুপক্ষকে ক্যাম্পাস থেকে সরিয়ে দেয়।
এ প্রসঙ্গে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব সাহা বলেন, বিএনপি ও জামায়াত হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির নামে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে। এর প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সকালে নেতাকর্মীদের নিয়ে ক্যাম্পাসে আসেন। মিছিল শেষে তারা বটতলায় সমাবেশে অংশ নেন। এ সময় জামায়াত-শিবির ও বিএনপির অনুসারী ছাত্রলীগ নামধারী তৌহিদুর এবং মাহফুজারের নেতৃত্বে বহিরাগতরা ধারালো অস্ত্র, হকিস্টিক, লাঠি নিয়ে সমাবেশ হামলা চালায়। তাদের আঘাতে তিনি (সজীব) ছাড়াও ৪-৫ জন আহত হয়েছেন। তারা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
সজীব আরও জানান, এ হামলার বিষয়টি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে অবহিত করা হয়েছে। তাদের নির্দেশে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পদবঞ্চিতদের পক্ষের মাহফুজার রহমান জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে তারা বৃহস্পতিবার সকালে সরকারি আজিজুল হক কলেজ ক্যাম্পাসে যান। কর্মসূচি পালনকালে সজীব সাহার নেতৃত্বে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। এতে তিনি ও তৌহিদুরসহ ৪-৫ জন আহত হয়েছেন। কোমরে ছুরিকাঘাত করায় তিনি বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি হন।
বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. সবুর উদ্দিন বলেন, সকালে একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক চলছিল। এ সময় ক্যাম্পাসে হট্টগোল শোনা যায়। পুলিশকে খবর দিলে তারা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনার্স পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
বগুড়া সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) শাহীনুজ্জামান শাহীন জানান, সজীব সাহার নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতারা ক্যাম্পাসে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করছিলেন। এ সময় ছাত্রলীগের অপরপক্ষ সমাবেশে হামলা চালায়। এ সময় দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। পরে দুপক্ষকে তাড়িয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ও পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।