Logo
Logo
×

সারাদেশ

ছিঁচকে চোর থেকে যেভাবে ভয়ানক কিলার সাগর

Icon

খান ফজলুর রহমান, ঘাটাইল (টাঙ্গাইল)

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৩, ১১:১১ এএম

ছিঁচকে চোর থেকে যেভাবে ভয়ানক কিলার সাগর

সাগর

আলোচিত এক ভয়ংকর কিলার সাগর (৩১)। দরিদ্র পরিবারের সন্তান। বাবা-মা মারা যাওয়ার পর অনাদর আর অবহেলায় বেড়ে ওঠেন তিনি। উচ্ছৃঙ্খল স্বভাব ছিল ছোটবেলা থেকেই। প্রতিবেশীরা তাকে পছন্দ করতেন না। তাকে নিয়ে স্বজনরাও থাকতেন চিন্তিত। মধুপুরে ফোর মার্ডারের পর আশুলিয়ায় ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় গ্রেফতার হয়ে ফের আলোচনায় আসেন সাগর। তার সম্পর্কে জানতে যুগান্তরসহ একাধিক গণমাধ্যমকর্মী গিয়েছিলাম টাঙ্গাইলের মধুপুর শহর থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তরে তার নিজ গ্রাম ব্রাহ্মণবাড়ী (পূর্বপাড়া)। এ গ্রামের মৃত মোবারক আলী ও সাহেরা বেগমের ছেলে সাগর। তাদের ৫ সন্তানের মধ্যে সাগর ছোট। ছোটবেলা থেকেই নানা অপরাধমূলক কাজ করতেন। প্রথমে তিনি এলাকার মানুষের বাড়ির ঘটিবাটি বদনা যা পেতেন চুরি করতেন। ধীরে ধীরে তার অপরাধের মাত্রা বাড়তে থাকে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী মাসুদ মিয়া বলেন, ২০১০ সালে সাগর এক আত্মীয়ার শ্লীলতাহানি করলে এলাকায় সালিশে তাকে শারীরিক শাস্তি দেওয়া হয়। এরপর গ্রাম ছেড়ে চলে যান মধুপুর শহরে। সেখানে মাস্টারপাড়ায় ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করেন। সাগরের দ্বিতীয় স্ত্রী আলেয়া বেগম জানান, মধুপুরে তিনি রিকশা চালাতেন। ওই সময় তিনি চরমভাবে নেশাগ্রস্ত হয়ে যান। শুরু করেন মাদক ব্যবসা। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে অনেকবার নির্যাতনের শিকার হোন আলেয়া। নির্যাতন সইতে না পেরে তিনি সাগরের সংসার ছেড়ে চলে আসেন।

২০২০ সালের ১৫ জুলাইয়ের ঘটনা। মধুপুর মাস্টারপাড়ার বাসিন্দা আবদুল গনি মিয়ার কাছ থেকে সুদে কিছু টাকা নেন সাগর। সুদের টাকা পরিশোধ না করে একদিন আরও ২০০ টাকা ধার চান। কিন্তু আগের টাকা পরিশোধ না করায় তাকে ধার দেননি গনি মিয়া। এরই জেরে সাগর একদিন রাতে মিষ্টির মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে নিয়ে যায় গনির বাসায়। সেখানে গনিসহ পরিবারের সবাইকে ওই মিষ্টি খাইয়ে অচেতন করেন। পরে ওই রাতেই আরও দুই ঘাতকের সহযোগিতায় গনিসহ তার স্ত্রী তাজিরুন বেগম, ছেলে তাজুল ইসলাম ও মেয়ে সাদিয়াকে হত্যা করেন।

ঘটনার তিনদিন পর র‌্যাব-১২ সাগর ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার ও লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধার করে। সাগর আদালতে হত্যার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ওই মামলায় কারাগারে বন্দি থাকেন সাগর। ঘটনার দেড় বছর পর টাঙ্গাইল পিবিআই আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। এরই মধ্যে ধর্ষণ মামলায় গ্রেফতার হয়ে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে বন্দি হন শহরের এক আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা। সেখানে সাগরের সঙ্গে ওই নেতার সখ্য গড়ে উঠে। একপর্যায়ে তাকে দিয়ে টাঙ্গাইলের অপর এক আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। এ জন্য সাগরকে জেল থেকে জামিনে মুক্ত করার চুক্তি হয়। জামিন পেয়ে পূর্বশর্ত অনুযায়ী ওই নেতার কাছ থেকে কিছু নগদ অর্থও নেয় সাগর। এরপর তিনি তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ রেখে আত্মগোপনে চলে যান। তার সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়নি ওই নেতার।

২৮ সেপ্টেম্বরের ঘটনা। সাগর তার আরেক স্ত্রী ইশিতা বেগমকে কবিরাজ সাজিয়ে সাভারের আশুলিয়া জামগড়া ফকির বাড়ির মেহেদী হাসানের মালিকানাধীন ৬ তলা ভবনে ৪ তলা ফ্ল্যাটে যান। সেখানেও মধুপুরের ফোর মার্ডারের মতো একই কায়দায় ওই ফ্ল্যাটের ভাড়াটে স্বামী, স্ত্রী ও তাদের সন্তানকে নেশাদ্রব্য খাইয়ে গলা কেটে হত্যা করেন। এ ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় ২ অক্টোবর র‌্যাব-১২ গাজীপুরের শফিপুর এলাকা থেকে সাগর ও ইশিতাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর টাঙ্গাইলের এক আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যার পরিকল্পনা ফাঁস করে দেন সাগর।

সাগরের চাচাতো ভাই জমশেদ আলী বলেন, মধুপুরের ৪ খুনের মামলায় সাগর মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে আমাদের পরিবারের কয়েকজনকে জেল খাটিয়েছে। অথচ ওরা ঘটনায় যুক্ত নয়। আমরা ওর ফাঁসি চাই।

মধুপুরের মির্জাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সুজন মিয়া বলেন, আমরা গ্রামবাসী তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। যাতে আর নিরপরাধ মানুষ খুনের শিকার না হয়।

সাগরের বড় বোন মইফুল জানান, সাগর মানসিকভাবে অসুস্থ। তাকে খুনের নেশায় ধরেছে। ছাড়া পেলেই সে মানুষ খুন করবে। ওর সাজা হওয়া দরকার।

মধুপুরের ৪ খুনের মামলার বাদী নিহত গনির বেঁচে থাকা একমাত্র মেয়ে সোনিয়া জানান, সাগরের জামিন পাওয়ার বিষয়টি সরকারি আইনজীবী কখনই আমাকে জানাননি। আশুলিয়ার ট্রিপল মার্ডারে র‌্যাবের হাতে সাগর গ্রেফতার হওয়ার খবরে মধুপুর থানায় গিয়েছিলাম। পুলিশ আমাকে নিশ্চিত করেছে। চার খুনের ভয়ানক খুনি আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে জামিন নিয়ে এবার টিপ্রল মার্ডার করেছে। এবার জামিন পেলে বহু নিরীহ মানুষের রক্ত ঝরাতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সোনিয়া। এজন্য তিনি নিজের নিরাপত্তা এবং পরিবারের এ নৃশংস খুনের বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন।

টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ইন্সপেক্টর ফারি মোকলেছ যুগান্তরকে বলেন, জামিনের এখতিয়ার আদালতের। যেহেতু আমরা আদালতে চার্জশিট দিয়ে দিয়েছি, এখানে আমাদের আর করার কিছু নেই।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম