ভৈরবে দুর্ঘটনা মালবাহী ট্রেনের চালকের ভুলে
আসাদুজ্জামান ফারুক, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ)
প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:৪৫ পিএম
মালবাহী ট্রেনের চালকের ভুলের কারণেই সোমবার ভৈরবে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে। অনুমতি ছাড়াই ট্রেনটি ‘হোম সিগন্যালে’ প্রবেশ করেছিল। এতে যাত্রীবাহী ট্রেনে ধাক্কা লাগে। ভৈরব রেলস্টেশনের মাস্টার ও নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন। এ ঘটনায় ওই ট্রেনের চালক, তার সহকারী ও গার্ডকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া চারটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় যাত্রীবাহী এগারসিন্ধুর ট্রেনের নিহত ২০ যাত্রীর মধ্যে ১৫ জনের লাশ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এদিকে সোয়া ১৫ ঘণ্টা পর মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টায় এ রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। এর আগে সোমবার রাত পৌনে ১১টায় এক লাইনে আংশিক ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছিল।
ভৈরব রেলস্টেশনের মাস্টার ইউছুফ যুগান্তরকে বলেন, এগারসিন্ধুর ট্রেনটিকে ৩ নম্বর ফ্লাটফরম থেকে ডাউন লাইনে ঢাকা যাওয়ার জন্য গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হয়েছিল। সিগন্যাল দেখে ট্রেনটি যাত্রা শুরু করে। এ সময় আপলাইনে আসা মালবাহী ট্রেনকে ভৈরব স্টেশনে প্রবেশের সিগন্যাল দেওয়া হয়নি। তারপরও চালক স্টেশনে ঢুকে পড়েন। এতেই এগারসিন্ধুর ট্রেনের পেছনের কয়েকটি বগিতে মালবাহী ট্রেনের ধাক্কা লাগে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শক করে ও দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে কথা বলে বুঝেছি, ঘটনার সময় সিগন্যালের কোনো ত্র“টি ছিল না। মালবাহী ট্রেনের চালকের অসাবধানতার কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। তিনি বলেন, আমরা মালবাহী ট্রেনের পরিচালক (গার্ড) আলমগীর, চালক ও তার সহকারীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছি। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পর এ বিষয়ে আরও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভৈরব রেলস্টেশনের নিয়ন্ত্রণকক্ষের কর্মকর্তা (কেবিন স্টেশন মাস্টার গ্রেড-৪) জুহুরুন্নেছা বেগম যুগান্তরকে বলেন, আমি ঘটনার সময় ডিউটিতে ছিলাম। এগারসিন্ধুর ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে ছাড়ার জন্য আমি ৩ নম্বর লাইনে গ্রিন সিগন্যাল দেই। ৩ নম্বর লাইন থেকে ১ নম্বর লাইন অতিক্রম করছিল এগারসিন্ধুর। সেই সময় বিপরীত দিক থেকে আসা মালবাহী ট্রেনটির ‘হোম সিগন্যালে’ প্রবেশের কোনো অনুমতি ছিল না। কিন্তু চালক সিগন্যাল অমান্য করে ২ নম্বর লাইন থেকে ১ নম্বর লাইনে ক্রস করে। এর ফলেই দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় জুহুরুন্নেছা যুগান্তরকে কন্ট্রোল রুমের ডিজিটাল সংকেত যন্ত্রে ঘটনার সময়ের রেকর্ড ছবি দেখান। তিনি বলেন, স্টেশনে যে কোনো ট্রেন ছাড়লে বিপরীতগামী লাইনের সিগন্যাল ডিজিটাল পদ্ধতিতে অফ থাকে। অর্থাৎ লাল বাতি থাকে। মালবাহী ট্রেনের চালক লালবাতি দেখেও রেলস্টেশনে প্রবেশ করেন।
লাশ হস্তান্তর : সোমবার রাতেই দুর্ঘটনায় নিহত ১৫ জনের লাশ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ সময় কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক আবুল কালাম আজাদের পক্ষ থেকে লাশ দাফনের জন্য প্রত্যেক পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দেন। দুই লাশের পরিচয় না পাওয়ায় সেগুলো কিশোরগঞ্জ মর্গে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ট্রেন দুর্ঘটনার পরপরই তিনজনের লাশ তাদের সঙ্গে থাকা স্বজনরা প্রশাসনকে না জানিয়ে নিজ উদ্যোগে নিয়ে গেছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা যুগান্তরকে জানিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে তারা হলেনÑময়মনসিংহের নান্দাইলের জুনায়েতের স্ত্রী হোসনা বেগম (২৭), কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরের জিল্লুর রহমানের ছেলে হুমায়ূন কবির (৩৫), একই জেলার বাজিতপুর এলাকার আবদুল হাইয়ের ছেলে আদিব উদ্দিন (৩০), ভৈরবের রাধানগর গ্রামের মন্নাফ মিয়ার ছেলে আফজাল হোসেন (২৪), ভৈরব বাজারের সুজন শীল (২৩), একই এলাকার রাব্বি (২৫), কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার সাইমন মিয়া (২৩) ও রাসেল (২৩), নান্দাইলের সাইজ উদ্দিনের ছেলে সুজন মিয়া (৩১), একই এলাকার সজীব (১১), জোসনা বেগম (২৫), ফাতেমা বেগম (৩৫), ইসমাইল (৭), এ কে এম জামাল উদ্দিন (১৮), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের নিজাম উদ্দিন (৬৫)।
চারটি তদন্ত কমিটি : মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় মোট চারটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যুগ্ম-সচিব হাসান মাহমুদকে প্রধান করে ৭ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় পরিবহণ কর্মকর্তাকে প্রধান করে ৫ সদস্যের আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে করা হয় তিন সদস্যের একটি কমিটি। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে লে. কর্নেল তাজুল ইসলামকে প্রধান করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।