ঢাকার ডাব ব্যবসায়ী সুজন মিয়া পরিবারের পাঁচ সদস্য নিয়ে বড় ভাইয়ের ছেলের বিয়ের দাওয়াতে বাড়ি এসেছিলেন। বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে বরাবরের মতোই নিরাপদ বাহন ভেবে আন্তঃনগর এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস ট্রেনে ঢাকা ফিরে যাচ্ছিলেন; কিন্তু শেষপর্যন্ত ভৈরব রেলওয়ে জংশনের অদূরে সংঘটিত ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল সবার।
সুজন মিয়া কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা লাগুয়া পার্শ্ববর্তী জেলা ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার রাজগাতী ইউনিয়নের বনহাটি গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, বড় ভাইয়ের ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ট্রেনযোগে কিশোরগঞ্জ পর্যন্ত এসে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার বনহাটি গ্রামের বাড়িতে যান সুজন মিয়া। অনুষ্ঠানে যোগদান করে আবারো ট্রেনযোগে ঢাকায় ফেরার পথে ভৈরবে স্মরণকালের ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন স্ত্রী ফাতেমা আক্তার, ছেলে সজীব মিয়া ও ইসমাইল মিয়াসহ তিনি।
নিহত সুজনের ভাই স্বপন মিয়া জানান, সুজন মিয়া ঢাকার মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোড এলাকায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। সংসার চালাতেন ভ্যানগাড়িতে ডাব বিক্রি করে। গত শুক্রবার বড় ভাইয়ের ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তিনি পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাড়িতে এসেছিলেন। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ করে সোমবার এগারসিন্দুর ট্রেনে করে ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসার উদ্দেশ্যে ফিরে যাচ্ছিলেন। আর স্বপন মিয়া নিজেও ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। তবে দুর্ঘটনার সময় তিনি পাঁচ নম্বর বগিতে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।
নান্দাইল থানার ওসি রাশেদুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী আন্ত:নগর এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভৈরব রেলওয়ে জংশনে ইঞ্জিন ঘুরিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে কিছুদূর যেতে না যেতেই বিপরীত দিক থেকে আসা চট্টগ্রামগামী একটি কন্টেইনারবাহী ট্রেন সংযোগ লাইনে পেছন অংশ ধাক্কা দেয়। এতে এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস ট্রেনের তিনটি বগি দুমড়েমুচড়ে গিয়ে লাইন থেকে নিচে পড়ে যায়। এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় দুই শিশু ও দুই নারীসহ ১৭ ট্রেনযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত এবং বিভিন্ন অঙ্গহানির শিকার হন শতাধিক সাধারণ যাত্রী। ট্রেন দুর্ঘটনায় একই পরিবারের সব সদস্যের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে রাজগাতী ইউনিয়নজুড়ে।