Logo
Logo
×

সারাদেশ

তিন শতাব্দী পেরিয়ে বর্ধনপাড়া দুর্গা মন্দির, মহাষ্টমীতে ভক্তদের ভিড়

Icon

আজহারুল হক, নবাবগঞ্জ

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৩, ০৫:৩৬ পিএম

তিন শতাব্দী পেরিয়ে বর্ধনপাড়া দুর্গা মন্দির, মহাষ্টমীতে ভক্তদের ভিড়

তিন শতাব্দী পেরিয়ে বর্ধনপাড়া দুর্গা মন্দির, মহাষ্টমীতে ভক্তদের ভিড়

রাজধানী ঢাকার পাশেই ইছমতি নদীর তীরে নবাবগঞ্জ উপজেলার বর্ধনপাড়া গ্রাম। অনেকটা নীরব ও নিরিবিলি পরিবেশে এখানকার মানুষের বসবাস। এদের আদি বসতি শুরু হয় প্রায় তিনশ বছর আগে। বাংলার প্রথম নবাব মুর্শিদ কুলী খানের আমলে এ অঞ্চলের হিন্দু সম্প্রদায়ের বসবাস ছিল উল্লেখযোগ্য। তাদের মূল পেশা ছিল মৃৎশিল্প। প্রসিদ্ধ এই মৃৎশিল্পের কদর ছিল বেশ। তাই এ গ্রামের নাম হয় বর্ধনপাড়া পালপাড়া। 

পদ্মা ও ইছামতি নদীবিধৌত এ অঞ্চলের মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের একমাত্র বাহন ছিল গহনা নৌকা। গহনা ও ছোট মাল্লা নৌকাভর্তি করে মাটির তৈরি এসব পণ্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ হতো। ইছামতি নদীর বর্ধনপাড়া ঘাটে ভিড়ে থাকত সারি সারি নৌকা। এখানে তখন আধিক্য ছিল হিন্দু ধর্মের লোকের বসবাসের। সেই সময়ে শরৎ সাধু, কুন্ডু সাধু ও গোবিন্দ পাল নিজেদের প্রয়োজনে পূর্জা-অর্চনা করতে পালপাড়া বড়বাড়িতে তৈরি করে একটি মন্দির। তারা সেখানেই পূজা করে ঈশ্বরের প্রতি আরাধনা করত। পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য ও স্মৃতি ধরে রাখতেই পরবর্তী প্রজন্ম এ মন্দিরকেই তারা পালপাড়া বড়বাড়ি সার্বজনীন দুর্গামন্দির হিসেবে তাদের ধর্মীয় কার্যকলাপ পরিচালনা করে আসছে। 

এসব বিষয়ে কথা হয় ওই গ্রামের ৯১ বছর বয়সি কানাই পালের সঙ্গে। তার দেওয়া তথ্যমতে, বর্ধনপাড়া বড়বাড়ি পালপাড়া সার্বজনীন দুর্গামন্দিরের বয়স এখন ৩০৭ বছর। বাংলা ১১২৫ সালে তাদের পূর্বপুরুষেরা এটা তৈরি করেন। তার ধারাবাহিকতায় নবাবগঞ্জের সবচেয়ে পুরনো মন্দির এটা। ওই সময়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের হিন্দুরা পূজা করতে এ মন্দিরে আসতেন দল বেঁধে। তখন থেকেই কলকাতা ও আশপাশের স্বজনরা এখানে পূজা দেখতে আসতেন। সব বছরই এ মন্দিরে হাজার হাজার পূজারি উপস্থিত হয়ে তিনশ বছর আগের ইতিহাস সমৃদ্ধ মণ্ডপে অংশীদার হয়। 

রোববার সকাল ৯টায় বর্ধনপাড়া এ মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, মহাষ্টমীর প্রথম প্রহরে শত শত নারী পুরুষ তাদের দূর্গা মায়ের আশীর্বাদ পেতে পুষ্পাঞ্জলি দিতে মন্দির প্রাঙ্গণে ভিড় জমিয়েছেন। ইতিহাস ঐতিহ্যের আর্বতে ভরপুর এ মন্দিরে পূজা দেওয়া যেন তাদের কাছে ভিন্ন মাত্রার আনন্দ ও উৎসাহ লক্ষ্য করা যায়।

ঢাকা থেকে আগত রুমা পাল জানান, দুর্গাপূজায় এ মন্দিরে না আসলে যেন মায়ের আশীর্বাদের পরিপূর্ণতা হয় না। তাই প্রতি বছর পরিবার নিয়ে তিনি এখানে এসে মহাষ্টমীতে মাকে অঞ্জলি প্রদান করেন। কলকাতা থেকে এসেছেন মণি পাল। দুর্গা মাকে পুষ্পাঞ্জলি জানাতে অপেক্ষায় আছেন। তিনি বলেন, সুদূর কলকাতা থেকে সব পাপাচার থেকে মুক্তির আশায় মার আশীর্বাদ পেতে এ মন্দিরই তার কাছে প্রিয়। স্বজনদের সাথে বাবার বাড়িতে সবাই মিলে এ পূজায় অংশ নেন। 

উপজেলার বক্সনগর ইউনিয়নের বর্ধনপাড়া বড়বাড়ি পালপাড়া সার্বজনীন দুর্গামন্দিরের সভাপতি শ্যামল পাল বলেন, জাকজঁমক ও অনাড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে প্রাচীন এ মন্দিরে তারা পূজা উদযাপন করছেন। প্রশাসন সার্বক্ষণিক তদারকি করছে। তবে ৩শ বছরের প্রাচীন এ মন্দিরে সরকারি কোনো বাড়তি সুযোগ কখনো হয়নি এমন আক্ষেপও তার। যুগের পর যুগ নিজ উদ্যোগেই সব হচ্ছে। মা দুর্গার কাছে প্রার্থনা মহামারি দুর্যোগ কাটিয়ে যুদ্ধ নয় শান্তির বার্তা পৌঁছে যাক আমাদের এ মর্ত্যলোকে- এই প্রত্যাশা ভক্তদের।  

পালপাড়া কল্যাণ সমিতির সভাপতি রতি রঞ্জন পাল বলেন, আমাদের সনাতনী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহাসিক প্রতীক বর্ধনপাড়া পালপাড়া বড়বাড়ি দুর্গামন্দির। এ মন্দির ইতিহাসের কালের সাক্ষী। উপজেলায় এখন প্রায় ১৯৪টি দুর্গাপূজা মণ্ডপ হলেও এটার বিশেষ আর্কষণ দেখতে পূজারিদের মাঝে ভিন্ন আমেজ কাজ করে। তাই দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য পুণ্যার্থী ভিড় করেন এ মন্দিরে। 

বক্সনগর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া বলেন, তার এলাকায় ১৭টি মণ্ডপে পূজা হচ্ছে। সবার সহযেগিতায় ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে এ উৎসব পালিত হোক এটাই প্রত্যাশা।

এদিকে নবাবগঞ্জ উপজেলার ১৯৪টি পূজা মন্দিরকে নিরাপত্তার চাদরে রাখার প্রত্যেয়ে সবটিতেই সিসি ক্যামেরার আওতায় এনে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে আছে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মতিউর রহমান জানান। 

নবাবগঞ্জ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম শেখ যুগান্তরকে বলেন, মহাষ্টমী চলাকালে এখনো পর্যন্ত সবত্রই ভালো পরিবেশে আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বাড়তি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া সার্বক্ষণিক র্যাব, পুলিশ ও আনসার টহল জোরদার করা হয়েছে। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম