
প্রিন্ট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:০২ পিএম
১৪ দফা দাবিতে ১০ ঘণ্টার বাস ধর্মঘটে চরম ভোগান্তি

চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২৩, ১০:১২ পিএম

আরও পড়ুন
বাস ধর্মঘটে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন রুটে দিনভর যাত্রীদের নানা ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। বুধবার ভোর থেকে শুরু হয় এ ধর্মঘট। বাস মিনিবাস থেকে শুরু করে যাত্রীবাহী কোনো পরিবহণ চলাচল করেনি। এ কারণে হাজার হাজার যাত্রী শহর থেকে যেমন গন্তব্যে যেতে পারেননি তেমনি বিভিন্ন এলাকা থেকে শহরেও আসতে পারেননি।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত সেতুসহ বিভিন্ন স্টপেজে শ্রমজীবী ও কর্মজীবী মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও যানবাহন পাননি। নিরুপায় অনেকে পায়ে হেঁটে বা বিকল্প ব্যবস্থায় গন্তব্যে পৌঁছেন। যারা বিকল্প ব্যবস্থায় ট্যাক্সি বা ব্যক্তিগত গাড়িতে যাতায়াতকারীদের গুনতে হয়েছে অস্বাভাবিক ভাড়া।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ধর্মঘটের বিষয়টি অনেকে জানতেন না। এ কারণে যাত্রীরা গন্তব্যে উদ্দেশ্যে বের হয়ে পথে পথে আটকে ছিলেন। আর কেউ কেউ দুর্ভোগের শিকার হয়ে ফিরে গেছেন। তবে বিকেল চারটায় ধর্মঘট শেষ হওয়ার পর দক্ষিণের রুটগুলোতে যান চলাচল শুরু হয়।
১৪ দফা দাবি আদায়ে কক্সবাজার, বান্দরবানসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের ২৬টি রুটে ১২ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। বুধবার ভোর ৬টা থেকে শুরু হওয়া এই ধর্মঘট সন্ধ্যা ৪টা পর্যন্ত ১০ ঘণ্টা চলে। চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চল বান্দরবান-কক্সবাজার জেলা সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ এ ধর্মঘট পালন করে।
সংগঠনটির দাবির মধ্যে রয়েছে- সড়ক ও উপসড়কে দুর্ঘটনা প্রতিরোধ, সড়কে শৃঙ্খলা আনা, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-টেকনাফ অপ্রশস্ত সড়কে স্লিপার কোচ নাম দিয়ে দ্বিতল বাস চালানো নিষিদ্ধ করা, বহিরাগত এসি, নন এসি বাস রুট পারমিটের শর্ত ভঙ্গ করে লোকাল রুটের যাত্রী বহনের কারণে গাড়িতে গাড়িতে অসম প্রতিযোগিতা বন্ধ করা, সড়ক-মহাসড়ক-উপসড়কের দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির জন্য দায়ী ইজিবাইক, ব্যাটারি রিকশা, টমটম ও অবৈধ থ্রি হুইলার সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করা, হাইওয়ের আইন মোতাবেক রাস্তার উভয় পাশের অবৈধ স্থাপনাসহ হাট-বাজার সরিয়ে নেওয়া, একই দেশে ঢাকা ও চট্টগ্রামে একই ট্রাফিক আইনে দ্বিগুণ জরিমানার বৈষম্য দূরীকরণ, চট্টগ্রাম বহদ্দারহাট আঞ্চলিক বাস টার্মিনাল সংস্কার ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণসহ বেশকিছু দাবি রয়েছে।
একই দাবিতে গত ৯ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরী থেকে কক্সবাজার-বান্দরবানসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের সব রুটে দুই ঘণ্টা বাস চলাচল বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করেছিলেন পরিবহণ শ্রমিকরা।
বুধবার সকালে দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রবেশপথ খ্যাত শাহ আমানত সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন রুটে যাওয়ার জন্য হাজারো যাত্রী দাঁড়িয়ে রয়েছেন। কোনো বাস নেই। কিছু কিছু সিএনজিচালিত অটোরিকশা রয়েছে। এসব সিএনজি অনেকে রিজার্ভ হিসেবে ভাড়া করে গন্তব্যে যাচ্ছেন। কিন্তু গুনতে হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া।
চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলের সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীসহ সরকারী-বেসরকারি অফিস আদালতের চাকরিজীবীরা শহরে থাকেন। মূলত তারা সকালে শাহ আমানত সেতু হয়ে গন্তব্যে যান। বুধবার তাদের অনেকে গন্তব্যে যেতে পারেননি। অনেককে পোহাতে হয়েছে চরম দুর্ভোগ।
সাতকানিয়া সদর এলাকায় একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি যুগান্তরকে জানান, সাড়ে ৭টায় এখানে এসেছি। একটি বাসও নেই। এখন মহাবিপদে। ৮০ থেকে ১০০ টাকার বাসের ভাড়া সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালকরা ভাড়া দাবি করছে ১ হাজার ২০০ টাকা। চরম ভোগান্তিতে আছি।
ঐক্য পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মোহাম্মদ মুছা বলেন, গত ছয় মাস ধরে প্রশাসনের কাছে বারবার ধরনা দিয়েছি। ওনারা আমাদের কোনো আবেদন-নিবেদন পাত্তাও দিচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে আমাদের মালিকরা বাস চালানো বন্ধ রেখেছেন। ১২ ঘণ্টার ধর্মঘটে শরিক হয়েছি। তবে আমরা কাউকে বাধা দিচ্ছি না। স্বতঃস্ফূর্তভাবে ধর্মঘট পালন করেছি; কিন্তু ২ ঘণ্টা কমিয়ে দিয়ে বিকাল ৪টায় যান চলাচল শুরু হয়েছে।