রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার সমন্বয়ক আরসা নেতা গ্রেফতার
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২৩, ১০:৫৪ পিএম
আলোচিত রোহিঙ্গা শীর্ষ নেতা মাস্টার মহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের প্রধান সমন্বয়কারীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। গ্রেফতার নুর কামাল ওরফে সমিউদ্দিন মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) কিলার গ্রুপের প্রধান বলে দাবি র্যাবের।
রোববার রাতে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালংয়ে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সোমবার দুপুর সংবাদ র্যাব ১৫ এর কার্যালয়ে সম্মেলন করে এ তথ্য জানায়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সমিউদ্দিন জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমারের নাগরিক। সে ২০১৬ সালে মায়ানমারে অবস্থানকালীন সময়েই আরসার কমান্ডার আব্দুল হালিম, মাস্টার নুরুল বশর ও আবু আনাসের মাধ্যমে আরসায় যোগদান করে এবং মিয়ানমারে আরসার হয়ে ১ বছর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। অতঃপর ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে শরণার্থী ক্যাম্প-৭ এ বসবাস শুরু করেন। ২০১৮ সালের দিকে তিনি আরসার কমান্ডার মুফতি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতের মাধ্যমে পুনরায় আরসার নতুন করে সদস্য সংগ্রহ, লোকবল বৃদ্ধিসহ সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেন।
পর্যায়ক্রমে সে ৭নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আরসার ব্লক জিম্মাদার, হেড জিম্মাদার এবং সর্বশেষ ক্যাম্প কমান্ডার হিসেবে নেতৃত্ব লাভ করে। তিনি আরসা প্রধান আতাউল্লাহর নির্দেশে আরসার ভয়ংকর ও সক্রিয় সদস্যদের নিয়ে ২০ জনের একটি গান গ্রুপ তৈরি করে যা ‘কিলার গ্রুপ’ নামে পরিচিত। তিনি কিলার গ্রুপের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন।
এই গ্রুপটি বিভিন্ন সময়ে টার্গেট কিলিং সম্পন্ন করার পাশাপাশি তাদের কথামতো কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ভিকটিমকে অপহরণপূর্বক শারীরিক ও পাশবিক নির্যাতনসহ মুক্তিপণ আদায় করতেন। মুক্তিপণ না পেলে তার নেতৃত্বে কিলিং মিশন সম্পন্ন করতো এবং ভুক্তভোগীকে খুন করে গহীন পাহাড়ে অথবা জঙ্গলে লাশ গুম করত।
তিনি বলেন, সামিউদ্দিনের নেতৃত্বে ‘আরসা’র কিলিং গ্রুপের সদস্যরা রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে হত্যা, হামলা, ভয় ভীতি প্রদর্শন, অরাজকতা ও আতঙ্ক সৃষ্টিসহ খুন, অপহরণ, ডাকাতি, মাদক, চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে। তিনি ক্যাম্প ১, ২, ৬ ও ৭ এর আরসার ‘গান গ্রুপ’ কমান্ডার হিসেবেও নেতৃত্ব প্রদান করতেন। তার নেতৃত্বে নগদ অর্থের বিনিময়ে অস্ত্র ও গোলাবারুদ ক্রয় করা হতো। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য তার নেতৃতে আরসার প্রধান আতাউল্লাহর নির্দেশে মিয়ানমার থেকে দুর্গম সীমান্তবর্তী অঞ্চল দিয়ে অস্ত্র ও গোলাবারুদ চোরাচালান করতেন। এছাড়াও অস্ত্র ও গোলাবারুদ এনে সমিউদ্দিন কিলার গ্রুপের সদস্য আরসার অন্যান্য সন্ত্রাসীদের মাঝে সরবরাহ করতেন।
র্যাবের এই পরিচালক আরও বলেন, সমিউদ্দিন মায়ানমারে থাকাকালীন সময়ও বিভিন্ন হত্যা, হামলা, অস্ত্র লুটপাট, সহিংসতাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। সে মায়ানমারে থাকাকালীন ২০১৬ সালে আরসার হয়ে বিজিপি (মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ) ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে বেশকিছু অস্ত্র লুট করে এবং বেশ কয়েকজনকে হত্যা করে। এছাড়া ২০২২ সালের নভেম্বরে গোয়েন্দা সংস্থা ও র্যাবের মাদকবিরোধী যৌথ অভিযানের সময় সন্ত্রাসীদের হামলার গোয়েন্দা সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিহত হন। উক্ত সন্ত্রাসী হামলায় একজন র্যাব সদস্য গুরুতর আহত হন। উক্ত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তিনিও সরাসরি জড়িত ছিলেন।
গ্রেফতারকৃত সমিউদ্দিন হেড মাঝি শফিক হত্যাকাণ্ড, জসিম হত্যাকাণ্ড, সেলিম হত্যাকাণ্ড, নূর বশর হত্যাকাণ্ড, সালাম হত্যাকাণ্ড, সলিম হত্যাকাণ্ড, কালা বদ্দা হত্যাকাণ্ড, রহিমুল্লাহ ও খালেদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। এছাড়াও, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আলোচিত ৬ জন হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন বলে জানা যায়।
এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল দলের ওপর সশস্ত্র হামলার সঙ্গেও তিনি জড়িত রয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে অপহরণ/টার্গেট কিলিং শেষে তিনি কক্সবাজারের গহীন পার্বত্য এলাকায় আত্মগোপনে থাকতেন বলে জানা যায়। তার বিরুদ্ধে উখিয়া, নাইক্ষ্যংছড়িসহ বিভিন্ন থানায় হত্যা, অপহরণ ও অস্ত্রসহ বিভিন্ন অপরাধে প্রায় ১৫টি মামলা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।