দুই শিশুর মৃত্যু নিয়ে তোলপাড়, তদন্তে কমিটি
শরীয়তপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৩, ১০:৪৭ পিএম
সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতাধীন শরীয়তপুর সরকারি শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্বাবধায়ক নুর মোহাম্মদ মিয়াসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বে অবহেলায় দুই শিশুর পুকুরে ডুবে মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। শিশু পরিবারের কম্পাউন্ডের পুকুরে শিশু মৃত্যুর খবর সামাজিক যোগযোগমাধ্যম ফেসবুকেও সমালোচনার ঝড় তুলেছে। ঘটনা তদন্তে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির অপর সদস্যরা হলেন- সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার নজরুল ইসলাম ও সমাজসেবা অফিসের রেজিস্ট্রার মজিবুর রহমান। কমিটি বৃহস্পতিবার থেকে তদন্ত শুরু করেছে। আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে দায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাঁচাতে প্রহসনের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে মৃত শিশুদের পরিবার ও স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেছেন। কেননা, তদন্ত কমিটির সদস্য উপজেলা সমাজসেবা অফিসার নজরুল ইসলাম শরীয়তপুর শিশু পরিবারে উপ-তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে দায়িত্ব পালনকালে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া নজরুল ইসলাম দায়িত্বে অবহেলায় অভিযুক্ত নুর মোহাম্মদ মিয়ার কক্ষে বসে তদন্ত করছেন ও তাকে বাঁচাতে নানা ফন্দিফিকির চালাচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, শরীয়তপুর সরকারি শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্বাবধায়ক নুর মোহাম্মদ মিয়ার শিশু মৃত্যুর ঘটনায় কোনো দোষ নেই। তদন্তের আগেই কিভাবে জানতে পারলেন তার দোষ নেই- এমন প্রশ্ন করা হলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সকালে শরীয়তপুর সরকারি শিশু পরিবারের অন্যসব শিশু স্কুলে গেলেও সোহেল বয়াতি ও সাদিকুল ইসলামকে স্কুলে না পাঠিয়ে মাঠে ছাগল চড়াতে পাঠান উপ-তত্ত্বাবধায়ক নুর মোহাম্মদ মিয়া ও সংশ্লিষ্টরা। ছাগল চড়ানো শেষে পুকুরে গোসল করতে গিয়ে ওই দুই শিশু নিখোঁজ হয়। দুপুর ১২টায় তাদের পুকুর থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
স্বজনরা জানান, তারা আর্থিকভাবে অক্ষম হওয়ায় কোনো উপায় না দেখে শিশুদের শিশু পরিবারে দিয়েছিলেন। এখন দুই শিশু লাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার দাবি করেন শিশুদের স্বজনেরা।
শরীয়তপুর সরকারি শিশু পরিবারে নিুমানের খাবার সরবরাহ, শিশুদের জন্য সরবরাহকৃত মালামাল বিক্রি, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত অনুপস্থিত থাকাসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। শিশু পরিবারের আশপাশের কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, আমরা স্থানীয় লোক, আমরা সবসময় এখানে থাকি। শরীয়তপুর সরকারি শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্বাবধায়কসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিয়মিত অফিস করেন না। এখানে ভর্তি হওয়া এতিম শিশুদের তারা যতœ না নিয়ে উল্টো শিশুদের দিয়ে ছাগল চড়ানো হয়। শিশুদের নিুমানের খাবার সরবরাহ করা হয়। শিশুদের জন্য সরকারের দেওয়া বরাদ্দের টাকা লুটপাট হয়ে যাচ্ছে। এগুলো দেখার যেন কেউ নেই।
শরীয়তপুর সরকারি শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্বাবধায়ক নুর মোহাম্মদ মিয়া বলেন, আমার দায়িত্বে কোনো অবহেলা নেই। যেই দুই শিশু মারা গেছে তারা অনেকটা প্রতিবন্ধী। তাদের পুকুরের পানি থেকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তাদের লাশ পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আমরা আর কী করতে পারি।