মিঠাপুকুর উপজেলা আওয়ামী লীগ
আহ্বায়ক কমিটিতে মৃত ব্যক্তি, অসন্তোষ তৃণমূলে
মাহবুব রহমান, রংপুর
প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২৩, ০৭:৩৬ পিএম
দীর্ঘদিন পর গঠিত হয়েছে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটি। কমিটিতে পদ পেয়েছে মৃত ব্যক্তি, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী, সরকারি চাকরিজীবী, অনুপ্রবেশকারী ও প্রবাসী ব্যক্তি। সহযোগী সংগঠনের আহ্বায়ক ও যুগ্ম-আহ্বায়ক এবং সভাপতি, সম্পাদককে রাখা হয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটিতে।
ফলে মিঠাপুকুর আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। যার প্রভাব আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পড়বে বলে ধারণা দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের। দলের বিরোধের সুযোগ কাজে লাগাতে পারে জামায়াত-বিএনপিসহ বিরোধীরা। তাই দ্রুত কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপসহ কমিটি বাতিলের দাবি করা হয়েছে।
২৫ সেপ্টেম্বর রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। ৬৬ সদস্যের কমিটিতে আফসার মিয়াকে আহ্বায়ক ও বর্তমান এমপিপুত্র রাশেক রহমানকে সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক করা হয়েছে।
কমিটির অন্য ৫ যুগ্ম-আহ্বায়ক হলেন আনোয়ার শাদাত লিমন, সাইদুর রহমান তালুকদার, নিরঞ্জন মহন্ত, রেজাউল করিম টুটুল ও আপেল মাহমুদ। এ ছাড়া আহ্বায়ক কমিটির সদস্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন সংসদ-সদস্য এইচএন আশিকুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোজাম্মেল হক মিন্টু মিয়া, সাবেক সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সরকার।
এই কমিটির অনুমোদনে স্বাক্ষর করেন রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ছায়াদত হোসেন বকুল, যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক মাজেদ আলী বাবুল, জয়নাল আবেদীন ও অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম। ২৫ সেপ্টেম্বর অনুমোদন করা হলেও প্রকাশ পায় ৮ অক্টোবর। এর পরেই কমিটিতে নানা অসঙ্গতির কথা তুলে ধরেন ত্যাগী ও পদবঞ্চিতরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠে। অনেকেই কমিটি বাতিল করে ত্যাগী ও দলের নিবেদিতদের নিয়ে কমিটি গঠনের দাবি করেন।
আহ্বায়ক কমিটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, হারুন আর রশিদ কাজলকে রাখা হয়েছে আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হিসাবে। তিনি কয়েক মাস আগে মৃত্যুবরণ করেছেন। পদাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোকছেদুল হক মন্ডল ও স্বাস্থ্য সহকারী মশিউর রহমান রাখুকে রাখা হয়েছে কমিটিতে।
এ ছাড়া, সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন মেসবাহুর রহমান প্রধান। তাকে কমিটির সদস্য রাখা হয়েছে। আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক রেজাউল কবীর টুটুল, সদস্য ইদ্রিস আলী মন্ডল, আসাদুজ্জামান আসাদ, আবু ফরহাম পুটু, রবিউল ইসলাম প্রামাণিক, সাহেব সরকার, মোকছেদুল আলম মুকুল সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। প্রবাসী সম্রাট মামুন পাশা ও মাহমুদুল হাসানও রয়েছেন কমিটির সদস্য হিসাবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ, মিঠাপুকুর উপজেলায় স্থানীয় এমপি এইচএন আশিকুর রহমান, তার ছেলে রাশেক রহমানের সঙ্গে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সরকারের বিরোধ দীর্ঘদিনের। বর্তমানে রাশেক রহমান, উপজেলা চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সরকার ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মোতাহার হোসেন মওলা দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে মাঠপর্যায়ে জাকির এগিয়ে রয়েছেন। নতুন কমিটি ঘোষণা করায় গ্রুপিংয়ের মাত্রা যোগ হলো।
আওয়ামী লীগ নেতা ইলয়াস মিয়া বলেন, সর্বশেষ উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যারা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন তারাই আহ্বায়ক কমিটিতে স্থান পেয়েছে। ত্যাগী-নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হয়নি।
মিঠাপুকুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক বাবু নিরঞ্জন মহন্ত বলেন, ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। বিদ্রোহী প্রার্থীদের রাখা হয়েছে। কমিটিতে রয়েছে মৃত ব্যক্তি, সরকারি চাকুরে, প্রবাসী, সহযোগী সংগঠনের আহ্বায়ক, যুগ্ম-আহ্বায়ক ও সভাপতি-সম্পাদক।
রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ছায়াদাত হোসেন বকুল মিঠাপুকুরের আহ্বায়ক কমিটির নানা অসংগতি স্বীকার করে বলেন, মৃত ব্যক্তি ও সরকারি চাকুরেদের বাদ দেওয়া হবে। বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রধানমন্ত্রী ক্ষমা করেছেন, তাই রাখা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সদ্য ঘোষিত কমিটির আহ্বায়ক আফসার মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।