Logo
Logo
×

সারাদেশ

'বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করলেও কেউ এগিয়ে এলো না'

Icon

গজারিয়া (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৩, ০২:৫৩ পিএম

'বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করলেও কেউ এগিয়ে এলো না'

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলাধীন মেঘনা নদীতে ট্রলারডুবির ঘটনায় নিখোঁজ ৬ জনের সবাই সেনাসদর দপ্তরে স্টেনোগ্রাফার হিসেবে কর্মরত মফিজুল ইসলামের স্বজন। নিজে কোনো রকমে বেঁচে ফিরতে পারলেও তার স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিখোঁজ হন। 

মর্মান্তিক এ ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে মফিজুল বলেন, 'ট্রলারটি যখন ডুবে যাচ্ছিল বেশ কয়েকবার বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করলাম, কেউ এগিয়ে এলো না। ঘাটে কয়েকটি ট্রলার এবং লোকজন ছিল, কেউ এগিয়ে এলো না'।

নিখোঁজরা হলো— দুই মেয়ে সাফা (৬), মাওয়া (৪), ভাতিজি মারওয়া (৮), ভায়রা সাব্বির হোসেন (৪০) ও তার ছেলে ইমাদ হোসেন (২)। লাশ উদ্ধার করা হয় মফিজুল ইসলামের স্ত্রী সুমনা আক্তারের (২৮)।

শনিবার বেলা ১১টায় তার গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ ফুলদী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মফিজুল ইসলামের বাড়ি ঘিরে কয়েকশ মানুষের জটলা। ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায় শোকে বিহ্বল গোটা পরিবার, বিল্ডিংয়ের কক্ষে কক্ষে চলছে স্বজনদের আহাজারি। পাশের একটি রুমে দরজা বন্ধ করে কয়েকজন ঘিরে রেখেছেন মফিজুল ইসলামকে। 

সঙ্গে থাকা একজন জানান, ঘটনার পর থেকে স্বাভাবিকভাবে কথাবার্তা বলতে পারছেন না মফিজুল। স্ত্রী ও দুই কন্যা নিখোঁজের খবরে শোকে স্তব্ধ তিনি।

মফিজুলের সঙ্গে কয়েক মিনিট কথা বলতে অনুমতি চাওয়া হলে তিনি রাজি হন। ঘটনার বিস্তারিত তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার বাড়িতে আসার পর শুক্রবার দৌলতপুর গ্রামে রেহানার বাড়িতে বেড়াতে যান তারা। এ সময় তার পরিবারের সদস্য, রংপুর থেকে আসা তার ভায়রা ও পরিবার, ভাগ্নে ভাতিজিসহ ১১ জন সদস্য ছিল। দাওয়াত খেয়ে বিকালের দিকে তারা ট্রলারে করে মেঘনা নদীতে ঘোরার উদ্দেশ্যে বের হন। 

চরকিশোরগঞ্জ এলাকায় ঘোরাঘুরি শেষ করে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে গজারিয়া ফিরে আসছিলেন। ব্যস্ততম এই নদীতে অসংখ্য বাল্কহেড চলাচল করায় প্রথমেই ট্রলারচালক রফিক মিয়াকে সতর্ক করেছিলেন তিনি। ট্রলারটি যখন চরকিশোরগঞ্জ থেকে গজারিয়া লঞ্চঘাটে আসছিল, তখন নারায়ণগঞ্জগামী একটি বাল্কহেড সেটিকে ধাক্কা দেয়। বাল্বহেডটি বালুভর্তি থাকার কারণে তার অধিকাংশ অংশ পানির নিচে ডুবেছিল, আর ওপরে সেরকম কোনো আলো না থাকায় ট্রলারচালক সেটি খেয়াল করতে পারেননি। 

ধাক্কা দেওয়ার পূর্বমুহূর্তে ট্রলারচালক বাল্কহেডটি দেখলে ট্রলারটি সরানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাল্কহেডের ধাক্কায় ট্রলারটি ডুবে যেতে থাকে। এ সময় তার এক মেয়ে তার কাছাকাছি ছিল আরেক মেয়ে কিছুটা দূরে ছিল। তিনি তার স্ত্রী সুমনাকে উঠে দাঁড়াতে বলেন। পরক্ষণে যখন তিনি বুঝতে পারেন ট্রলারটি ডুবে যাচ্ছে, তখন বেশ কয়েকবার বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করেন। ঘটনাস্থলের অদূরে চরকিশোরগঞ্জ ঘাট এলাকায় বেশ কয়েকটি ট্রলার এবং কয়েকজন লোক থাকলেও সাহায্য করার জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি। ট্রলার উলটে পানিতে পড়ে গেলে পানির বেশ গভীরে চলে যান তিনি। তবে সাঁতার জানায় তিনি ওপরে উঠে আসেন। 

অনেকক্ষণ সাঁতার কাটার পর অন্য একটি ট্রলার তাকে উদ্ধার করে। তার পর কিছুই মনে নাই তার। কিছুক্ষণ পরে তিনি দেখলেন তিনি মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতালে।

গজারিয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. ইজাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সকাল থেকেই উদ্ধার অভিযান শুরু করি আমরা। এ সময় সুমনা আক্তার নামে এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। বাকি যারা নিখোঁজ রয়েছে, তাদের সন্ধানে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম