Logo
Logo
×

সারাদেশ

‘দুই টাকার শিক্ষক’ ফজলু এখন ফেরিওয়ালা

Icon

হোসাইন আহমদ, মৌলভীবাজার

প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৩, ০৬:৩৫ পিএম

‘দুই টাকার শিক্ষক’ ফজলু এখন ফেরিওয়ালা

বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থীদের জড়ো করে পড়াতেন। তিনি কোনো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক না হলেও সমাজের ঝরেপড়া প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পড়ানো তার নেশা ছিল।

টাকার দিকে প্রাধান্য না দিয়ে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সন্তানদের পড়াতেন দুই টাকার শিক্ষক ফজলু মিয়া। বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতি দিন ২ টাকা করে নিতেন। আবার কেউ টাকা দিতে না পারলেও চাপপ্রয়োগ করতেন না; যার ফলে এলাকার সবার কাছে তিনি দুই টাকার শিক্ষক হিসেবে পরিচিত পান।

বর্তমানে বয়েসের ভারে শিক্ষার্থীদের পড়াতে পারছেন না। অভাবের সংসারে পড়ছে টানাপোড়েন। জীবিকার তাগিতে বাধ্য হয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিশুদের শিক্ষাসামগ্রী বিক্রি করছেন। তবে এখনো শিক্ষার প্রতি তার দরদ রয়েছে।

জানা যায়, ফজলু মিয়া মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার সারমপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৫ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। কিন্তু জটিল রোগের কারণে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি। এরপর থেকেই তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ানো শুরু করেন। ফজলু মিয়ার এক ছেলে। ছেলেও মানসিক ভারসাম্যহীন। মারা গেছেন স্ত্রীও। নিজে রান্না করে খান।

স্থানীয় ইউপি সদস্য জুনেদ মিয়া বলেন, ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি ফজলু মিয়া বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াতেন। বিশেষ করে তার এই মহতী উদ্যোগে উপকৃত হয়েছেন সমাজের পিছিয়ে থাকা পরিবারের শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে ফজলু মিয়া মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

ফজলু মিয়ার ছাত্র ও পাঁচগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. মনসুর আলী বলেন, আমরা যখন পড়েছি তখন কে টাকা দিল আর কে দিলও না সেটা তিনি দেখতেন না। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সবাইকে একত্রিত করে পড়াতেন। স্যারের কল্যাণে আমরা অনেকেই পড়ালেখা করতে সক্ষম হয়েছি। বর্তমানে বয়েসের ভারে স্যার পড়াতে পারেন না। লেখাপড়ার প্রতি দরদ থাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিশুদের শিক্ষাসামগ্রী বিক্রি করে কোনোরকম চলেন। তিনি সৎ ও ন্যায়পরায়ণ মানুষ।

জাকারিয়া নামের অপর শিক্ষার্থী বলেন, স্যারের কাছে আমরা যখন পড়তাম তখন অন্যান্য শিক্ষকরা মাসিক ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা নিতেন। কিন্তু ফজলু স্যার নিতেন মাসে ৬০ টাকা। আবার কেউ কেউ টাকা না দিতে পারলেও পড়ানো বাদ দিতেন না। বিশেষ করে গণিত ও ইংরেজি তিনি খুব ভালো করে পড়াতে পারতেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম