Logo
Logo
×

সারাদেশ

উদ্যোক্তা স্বজন

গাজীপুরে পেঁপে চাষ করে চমক দেখালেন ফেরদৌস

Icon

রফিকুল ইসলাম

প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৩, ০৬:২৩ পিএম

গাজীপুরে পেঁপে চাষ করে চমক দেখালেন ফেরদৌস

ফেরদৌসের পেঁপে বাগান

ফল ও সবজি হিসাবে পেঁপে বেশ জনপ্রিয়। শুধু পরিবারের চাহিদা মেটানোর জন্য একসময় বাড়ির আঙিনায় চাষ করা হতো সুস্বাদু এ ফলটি। বাণিজ্যিকভাবে পেঁপে চাষ করে সফল হয়েছেন গাজীপুরের পূবাইল স্বজন সমাবেশের সদস্য ফেরদৌস মিয়া।

গ্রামের ছেলে ফেরদৌসের বন্ধু-বান্ধব সবাই সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলেও তিনি বেছে নিয়েছেন কৃষিকাজ। এলাকার সবাই তাকে স্মার্ট কৃষক বলেও ডাকেন।

পড়াশোনা শেষে বাবার সঙ্গে ব্যবসায় যোগ দেন ফেরদৌস মিয়া। এরপর কাজের জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার চিন্তা করেন। কয়েকটি দেশে চেষ্টা করে যেতে না পেরে ২০১৬ সালে নিজের পৈত্রিক জমিতে ১০৫টি পেঁপের চারা লাগিয়ে যাত্রা শুরু করেন কৃষি কাজের। প্রথমবারেই সফল হন ফেরদৌস এবং আয় করেন এক লক্ষ টাকার বেশি।

এরপর জমির পরিধি ও চারার সংখ্যা বাড়াতে থাকেন। ২০১৭ সালে ৫০০ পেঁপে চারা রোপণ করেন। সেখান থেকে তার আয় হয় ৫ লক্ষ টাকা। বিভিন্ন প্রতিকূলতা পেরিয়েও ধারাবাহিক ভাবে এর পরিমাণ বাড়তে থাকে।

বর্তমানে ৭ বিঘা জমিতে দুইটি ঘেরের পাড়ে সতেরশো সারি সারি পেঁপে গাছ শোভা পাচ্ছে। প্রতিটি গাছের গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত ঝুলে আছে অসংখ্য পেঁপে। ফেরদৌসের বাগানে কিং, থাই, দেশি চারা, টপ লেডি জাতের পূর্ণবয়স্ক পেঁপে গাছ রয়েছে। প্রতিটি পেঁপে গাছে প্রায় ৩০-৩৫ কেজি পেঁপে ধরে। 

ফেরদৌস মিয়া এখন এলাকার (মসজিদ, মাদ্রাসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আঙ্গিনায় ফ্রি পেঁপে চারা লাগিয়ে বৃক্ষরোপণে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছেন অন্যদের। উন্নত জাতের এই সব পেঁপে চারা প্রতিবেশীদের বাড়ির আঙ্গিনায় লাগিয়ে নিজেদের প্রয়োজন মেটানোয় উদ্বুদ্ধ করে নজির স্থাপন করেছেন এলাকায়। নিজের ফলানো পেঁপে বিনামূল্যে সবজি হিসাবে এলাকার এতিমখানায়ও দিচ্ছেন তিনি।

ফেরদৌস মিয়া বলেন, ‘৭ বছর আগে এ পথে যাত্রা শুরু। আজকের সফলতার বীজ বপন করেছিলেন আমার বাবা। তার পরামর্শে ও অনুপ্রেরণায় আমি হাল ছাড়িনি। মাঝখানে জাত নির্বাচনে ভুল হওয়ায় পেঁপে চাষে সফলতা আসেনি। ২০১৮ সালে দুষ্কৃতকারীরা আমার পেঁপে বাগান থেকে ৫০০ চারা কেটে ফেলেন এবং ২০২২ সালে ঝড়ের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হই। তখন আর্থিক ও মানষিক ভাবে ভেঙে পড়ি। এক পর্যায়ে শুভাকাঙ্খীদের সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণায় আবার মনযোগী হই পেঁপে চাষে। আমি এখন এলাকার বেকার ও শিক্ষার্থীদের পেঁপে চাষে উদ্বুদ্ধ করার জন্য কাজ করছি। একজন শিক্ষার্থী যদি লেখাপড়ার পাশাপাশি মাত্র ২৫টি পেঁপে গাছ লাগায় এবং যত্ন করে তাহলে সেই গাছ থেকে মৌসুমে এক লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। এ ধরণের উদ্যোক্তা থাকলে আমি নিজে সময় ও শ্রম দিয়ে সফলতা অর্জনে সহযোগিতা করবো। বাগান করার আগে অবশ্যই জাত নির্বাচন ও সঠিক জাতের চারা রোপন করে পরিচর্যা করলে সফলতা অনিবার্য।’

গাজীপুর সদরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহিনা সুলতানা বলেন, ‘আমি ফেরদৌস মিয়ার পেঁপে বাগানটি পরিদর্শন করেছি। ফেরদৌস মিয়া একজন কর্মঠ মানুষ, অনেক বছর ধরে পেঁপে চাষ করছেন। তিনি গাজীপুরে পেঁপে চাষে চমক দেখিয়েছেন। পেঁপে চাষে অনেক সময় ভাইরাস-এর কারণে চারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার ব্যবসায়ীরা উন্নত জাত বলে নিম্নমানের চারা কৃষকদের কাছে বিক্রি করেন, এতে ফলন খারাপ হয় প্রতারিত হয় কৃষকরা। কৃষকদের প্রতারণার হাত থেকে বাঁচাতে তিনি নিজেই এখন উন্নত জাতের পেঁপে চারা উৎপাদন করে বিক্রি করছেন। এটা খুব ভালো উদ্যোগ। এভাবে সবাই এগিয়ে এলে দেশের বেকার সমস্যা একেবারেই কমে আসবে।’

সাধারণ সম্পাদক, পূবাইল, গাজীপুর।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম