Logo
Logo
×

সারাদেশ

রাজশাহী বিভাগের ৫ হাসপাতাল 

ডোম না থাকায় ক্লিনার দিয়ে ময়নাতদন্ত

Icon

রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ১০:৫৯ পিএম

ডোম না থাকায় ক্লিনার দিয়ে ময়নাতদন্ত

রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের অধীন আট জেলায় আধুনিক সদর হাসপাতাল রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ জেলা সদর হাসপাতালেই পেশাদার ডোম নেই। ফলে হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরাই ময়নাতদন্তের সময় ডোমের কাজ করেন। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা জানান, পেশাদার ডোম না থাকায় ময়নাতদন্তের সময় তাদের সমস্যায় পড়তে হয়। সরকারিভাবে হাসপাতালগুলোতে ডোম নিয়োগ আবশ্যক হলেও নানা জটিলতায় তা হয়নি। বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে প্রয়োজনীয়সংখ্যক ডোম নিয়োগের অনুরোধ করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে দ্রুতই ডোম সংকট কেটে যাবে। তবে বিভাগের পাঁচ জেলায় মেডিকেল কলেজ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের হাসপাতালে লাশের ময়নাতদন্ত হয়।

রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ডোমের কাজ করেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী তপন দাস, নাটোর অধুনিক সদর হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতাকর্মী জীবন কুমার, বগুড়া জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে পরিচ্ছন্নতাকর্মী রতন, সিরাজগঞ্জ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতাকর্মী রানা আহমেদ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মী মিতুল কুমার দাস। তবে নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে রয়েছেন নিয়োগপ্রাপ্ত ডোম পুতরা পবন। আর পাবনায় দেবদাস চন্দ্র দেবু ছাড়াও জয়পুরহাটে আব্দুল মান্নান রয়েছেন।

জানা যায়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ৩৮ বছর ধরে শূন্য রয়েছে ডোমের পদটি। রামেকে অন্তত ১০ জন ডোম দরকার। ১৯৮৬ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত ডোম নিশিপদ দাসের মৃত্যুর পর আর কাউকে এ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তবে নিয়োগপ্রাপ্ত ডোম না থাকলেও লাশের ময়নাতদন্তের কাজ থেমে নেই। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখন ডোমের কাজ করেন মৃত নিশিপদ দাসের ছেলে তপন দাস। যদিও তপন পেশায় ডোম নন। সে হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মী। তপন ছাড়াও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের কাজ করেন দীপন কুমার, বীপন কুমার, রনি, সনি, হৃদয়, রঞ্জন, সুমন, মোহন, বাবর ও সঞ্জয় কুমার। তবে তারা কেউই নিয়োগপ্রাপ্ত নন। তারা চুক্তিতে কাজ করেন।

ফরেনসিক বিভাগে ময়নাতদন্ত কাজে সহায়তাকারী তপন দাস বলেন, ‘রামেকে কোনো নিয়োগপ্রাপ্ত ডোম নেই। সবাই অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ করেন। ডোম নিয়োগের দাবিটি আমরা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’

এদিকে সিরাজগঞ্জ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হাসপাতালে নিয়োগপ্রাপ্ত কোনো ডোম নেই। রানা আহমেদ নামের এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী ২০১৪ সাল থেকে এখানে ডোমের কাজ করেন। রানা বলেন, এই হাসপাতালে কোনো ডোম নেই। এমনকি নারী ডোমও নেই। ময়নাতদন্তের সময় ডাক্তারদের সঙ্গে সব কাজ আমাকেই করতে হয়। লাশ এলে আমাকে ডাকা হয়।’ এই হাসপাতালের সুপার ডা. রতন কুমার রায় বলেন, ‘এখানে ডোমের পদ শূন্য। যে কারণে একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী দীর্ঘদিন ধরে ডোমের কাজ করছেন।’

অপরদিকে বগুড়া জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের তিনজন ডোমের বদলে আছেন দুজন। রবিন ও দিলীপ লাশ কাটার কাজ একসঙ্গে করতেন। দিলীপ অসুস্থ হওয়ায় তার ভাই রতন লাশ কাটার কাজ করেন। শমিজেকের অধ্যক্ষ ডা. রেজাউল আলম বলেন, ‘এখানে দুজন লাশ কাটার কাজ করেন। বগুড়ায় কোনো নারী ডোম নেই। ফলে পুরুষরাই নারীর লাশ কাটার কাজ করেন। এতে কিছু সমস্যা হয়।’

অপরদিকে নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের ডোম পুতরা পবন বলেন, ‘গত ১৫ বছর ধরে এই মর্গে আমি লাশ কাটছি। ৪ বছর হলো চাকরি সরকারিকরণ হয়েছে। তবে সব কাজ এক হাতে আমাকেই করতে হয়। নওগাঁ মর্গে আমি ছাড়া আর কোনো ডোম নেই।’

নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. আবু আনছার আলী বলেন, ‘বর্তমানে ১৬ থেকে ৩২ বছর বয়সি নারীদের আÍহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। ওই লাশ মর্গে আনার পর পুরুষ ডোম দিয়ে ময়নাতদন্ত করাতে গেলে স্বজনরা আপত্তি জানান। এরপরেও কিছুই করার থাকে না। পুরুষ ডোম দিয়েই কাজ চালাতে হয়।’
নাটোর অধুনিক সদর হাসপাতালে ডোম পবন কুমার মারা যাওয়ার পর গত ২ বছর ধরে তার ছেলে জীবন কুমার লাশ কাটার কাজ করেন। তবে পবনের চাকরি এখনো সরকারি হয়নি। এই হাসপাতালের সুপার ডা. মুহাম্মদ মশিউর রহমান বলেন, ‘এখানে ডোমের পদটি শূন্য আছে।’

পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ডোমের কাজ করেন দেবদাস চন্দ্র দেবু (৩৮)। এখানে কোনো নারী ডোম নেই। জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালের আরএমও ডা. মো‎. ‎শহীদ হোসেন জানান, তাদের হাসপাতালে একজন ডোম রয়েছে। তবে কোনো নারী ডোম নেই। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের কাজ করেন মিতুল কুমার দাস। তবে সে ডোম নন। হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মী। ডোম না থাকায় মিতুলকে দিয়েই লাশের ময়নাতদন্ত করাতে হয়। এই হাসপাতালের সুপার ডা. মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘এখন একজন লোক দিয়েই চলছে ময়নাতদন্তের কাজ। প্রয়োজন থাকলেও সরকারিভাবে নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই চালাতে হবে।’

ডোম সংকট প্রসঙ্গে রাজশাহী মেডিকেলের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এফএম শামীম আহম্মেদ বলেন, ‘রামেক হাসপাতালে ডোমের পদ নেই। এখানে শুধু লাশ রাখা হয়। লাশের ময়নাতদন্তের কাজ মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ করেন।’

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের অধ্যক্ষ নওশাদ আলী বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে কোনো নিয়োগপ্রাপ্ত ডোম নেই। চুক্তিতে নেওয়া একজন ডোম দিয়ে কাজ করাতে হয়। এখানে প্রতিদিন একাধিক লাশের ময়নাতদন্ত হয়। ডোম না থাকার বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘ডোম হতে হয় পেশাদার। পৈতৃক পেশা হিসাবে অনেকেই এ কাজ করেন।’

জানতে চাইলে রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আনারুল কবীর বলেন, ‘বিভাগের প্রতিটি হাসপাতালে ডোম সংকট রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। ডোম নিয়োগের বিষয়টি একটি সরকারি প্রক্রিয়া। তাই সময় লাগছে। আশা করছি, দ্রুত ডোম সংকট কেটে যাবে।’

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম