Logo
Logo
×

সারাদেশ

যে কারণে বাবা-মা-ছেলেকে একই বঁটি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে দম্পতি

Icon

আশুলিয়া (ঢাকা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ০৬:০৪ পিএম

যে কারণে বাবা-মা-ছেলেকে একই বঁটি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে দম্পতি

ঢাকার আশুলিয়ায় বহুল আলোচিত ও ক্লুলেস বাবা, মা ও ছেলেকে গলা কেটে হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে র‌্যাব-৪। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা সাগর আলী ও তার স্ত্রী ঈশিতা বেগমকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

র‌্যাব জানায়, ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে কবিরাজ সেজে বাড়িতে এসে অচেতন করে বেশি টাকা না পেয়ে স্বামী-স্ত্রী ও তাদের ছেলেকে একই বঁটি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে ওই দম্পতি।

৩০ সেপ্টেম্বর সাভারের আশুলিয়া জামগড়া এলাকায় বহুতল ভবনের ৪র্থ তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে ভবনের অন্যান্য ভাড়াটিয়ারা বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবগত করেন। পরবর্তীতে উক্ত ফ্ল্যাট থেকে স্বামী, স্ত্রী ও তাদের ১২ বছরের ছেলের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ভিকটিমের ভাই বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

সোমবার রাতে র‌্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গাজীপুরের শফিপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা মো. সাগর আলীকে (৩১) গ্রেফতার করে। তার দেওয়া তথ্যমতে তার স্ত্রী ঈশিতা বেগমকে (২৫) জামালপুর থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে ভিকটিম মোক্তারের ব্যবহৃত আংটিটি উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতারকৃতরা প্রথমে অর্থের লোভে ও পরবর্তীতে কাঙ্ক্ষিত অর্থ না পেয়ে ক্ষোভ থেকে তাদের হত্যা করে।

র‌্যাব জানায়, ২৮ সেপ্টেম্বর গ্রেফতারকৃত সাগর সাভার বারইপাড়া এলাকার একটা চায়ের দোকানে চা খাওয়ার সময় ভিকটিম মোক্তারকে পার্শ্ববর্তী একটি কবিরাজি ও ভেষজ ওষুধের দোকানে তার শারীরিক সমস্যার বিষয়ে চিকিৎসা নিয়ে কথা বলতে দেখেন। গ্রেফতারকৃত সাগর জানতে পারে ভিকটিম মোক্তার ওই দোকানে ভেষজ ও কবিরাজি চিকিৎসা বাবদ ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ করেও কোনো ফলাফল পায়নি। গ্রেফতারকৃত সাগর কৌশলে ভিকটিম মোক্তারকে ডেকে নিয়ে আসে এবং ভিকটিমের সঙ্গে কথাবার্তায় জানতে পারেন, ভিকটিম মোক্তারের ভেষজ ও কবিরাজি চিকিৎসার প্রতি আগ্রহ ও আস্থা রয়েছে। ভিকটিম মোক্তার তার ও তার পরিবারের বেশ কিছু শারীরিক সমস্যার কথাও গ্রেফতারকৃত সাগরকে জানায়।

এ সময় গ্রেফতারকৃত সাগর জানায় যে, তার স্ত্রী একজন ভালো কবিরাজ এবং সে তার সমস্যার সমাধান করে দেবে বলে আশ্বাস প্রদান করে। কথাবার্তার একপর্যায়ে গ্রেফতারকৃত সাগর উক্ত চিকিৎসার জন্য ভিকটিম মোক্তারের সঙ্গে ৯০ হাজার টাকার চুক্তি করে। গ্রেফতারকৃত সাগর ও তার স্ত্রী ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে ওষুধসহ তার বাসায় গিয়ে চিকিৎসা করবে বলে জানায়। গ্রেফতারকৃত সাগরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ভিকটিম মোক্তার মোবাইল নাম্বার চাইলে গ্রেফতারকৃত সাগর তার আত্মীয়ের মোবাইল নম্বর দেন।

পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত সাগর বাসায় গিয়ে তার স্ত্রীকে বিষয়টি জানায় এবং তার স্ত্রী নগদ বিপুল অংকের টাকার কথা শুনে রাজি হয়। তারা পরিকল্পনা করে ভুক্তভোগী মোক্তারের বাসায় গিয়ে ভেষজ ও কবিরাজি চিকিৎসার কথা বলে তার পরিবারের সবাইকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে তাদের অর্থসহ মূল্যবান সামগ্রী লুট করবে। পরিকল্পনা মোতাবেক সাগর গাজীপুরের মৌচাক এলাকার একটি ফার্মেসি থেকে ১ বক্স (৫০টি) ঘুমের ওষুধ ক্রয় করে।

এর আগে ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে সাগরের সঙ্গে তার আত্মীয়ের মোবাইল ফোনে কথা বলে শর্ত মোতাবেক চিকিৎসার পরবর্তীতে ৯০ হাজার টাকা প্রদানের ব্যাপারে ভিকটিম মোক্তার আশ্বাস প্রদান করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে সাগর ও তার স্ত্রী গাজীপুরের মৌচাক থেকে ভিকটিম মোক্তারের বাসায় আসেন।

ভুক্তভোগীর বাসায় গিয়ে তার পরিবারের সঙ্গে প্রাথমিক পরিচয়ের পর সাগরের স্ত্রী ঈশিতা তাদের সমস্যার কথা শুনে এবং ইসবগুলের শরবতের সঙ্গে চেতনানাশক মিশিয়ে তাদের ভেষজ ও কবিরাজি চিকিৎসার ওষুধ বলে খাওয়ায়। পরবর্তীতে ভিকটিম মোক্তার, তার স্ত্রী ও তার ছেলে ঘুমের ওষুধের প্রভাবে ঘুমিয়ে পড়লে সাগর ও তার স্ত্রী মিলে প্রথমে মোক্তারের কক্ষে গিয়ে মোক্তারের হাত ও পা বাঁধে, পরবর্তীতে মোক্তারের স্ত্রীর হাত-পা বাঁধে।

মোক্তারের মানিব্যাগ, তার স্ত্রীর পার্স ও বাসার অন্যান্য স্থানে অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রীর জন্য তল্লাশি করে মাত্র ৫ হাজার টাকা পায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গ্রেফতাকৃতরা বঁটি দিয়ে প্রথমে ভিকটিম মোক্তারের গলায় উপর্যুপরি কোপ দিয়ে হত্যা করে সাগর ও ঈশিতা। পরবর্তীতে অন্যকক্ষে গিয়ে ছেলে ও স্ত্রীকে একই বঁটি দিয়ে পর্যায়ক্রমে কুপিয়ে হত্যা করেন। তাদের সবার মৃত্যু নিশ্চিত করে ভিকটিম মোক্তারের হাতে থাকা আংটিটি নিয়ে তারা ভিন্নপথে রিকশাযোগে গাজীপুরের মৌচাকে আসে এবং সেখানেই অবস্থান করতে থাকে।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি মিডিয়া ও আশপাশের এলাকায় ব্যাপকভাবে প্রচার হলে একসঙ্গে আত্মগোপনে চলে যায় সাগর ও ঈশিতা। পরবর্তীতে আত্মগোপনে থাকাকালীন গাজীপুরের শফিপুর এলাকা থেকে র‌্যাব সাগরকে গ্রেফতার করে।

হত্যার শিকার মোক্তার হোসেন ও তার স্ত্রী সাহিদা বেগম আশুলিয়ার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। তার সন্তান মেহেদী হাসান জয় স্থানীয় একটি স্কুলে ৭ম শ্রেণিতে পড়াশোনা করত।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম