Logo
Logo
×

সারাদেশ

‘শ্বশুরের লাশ গুমের চেষ্টায় জড়িয়ে বড় পাপ করেছি’

Icon

চট্টগ্রাম ব্যুরো

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৩, ১০:০৮ পিএম

‘শ্বশুরের লাশ গুমের চেষ্টায় জড়িয়ে বড় পাপ করেছি’

‘শ্বশুরকে হত্যার পর তার টুকরো করা লাশ গুমের চেষ্টাসহ সব কাজে স্বামীকে সহযোগিতা করে আমি বড় পাপ করেছি। মানুষের সর্বোচ্চ আদালত হচ্ছে তার বিবেক। কিন্তু তখন আমার বিবেক নয়, আবেগ কাজ করেছে। তাই আমি এত বড় পাপে জড়িয়েছি। এখন বুঝছি এটা করা আমার ঠিক হয়নি। আমি বড় অপরাধ করেছি। তবে আমি যদি জানতাম আমার শ্বশুরকে হত্যা করা হবে বা হত্যার পরিকল্পনা করা হচ্ছে-তবে আগেভাগেই তা শ্বশুরকে জানিয়ে দিতাম। তাকে বাঁচানোর জন্য বাসা থেকে বের করে দিতাম। কিন্তু স্বামী ও ভাসুর ঘটনা ঘটিয়ে ফেলার পর কী করব তা ভেবে পাচ্ছিলাম না। স্বামীর ভালোবাসার টান ও সংসারের কথা মাথায় রেখে তার কাজে সহযোগিতা করেছি। আমি পরিস্থিতির শিকার হয়েছি।’

চট্টগ্রামে ছেলেদের হাতে খুন হওয়া বাঁশখালীর হাসানের ছোট ছেলে সফিকুর রহমান জাহাঙ্গীরের স্ত্রী আনারকলি গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন।

আনারকলিকে নিয়ে সোমবার দ্বিতীয় দিনের মতো হতভাগ্য হাসানের খণ্ডিত মাথা উদ্ধারে পতেঙ্গার ১২ নম্বর ঘাট এলাকায় পিবিআই অভিযানে গেলে সেখানে তিনি এসব কথা বলেন।

ভোর সাড়ে ৫টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সম্ভাব্য সব স্থানে অভিযান চালিয়েও হাসানের খণ্ডিত মাথা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের পরিদর্শক মো. ইলিয়াস খান যুগান্তরকে বলেন, ১৫ জনের একটি টিম দ্বিতীয় দিনে অভিযানে অংশ নেয়।

পিবিআই সূত্র জানায়, দুপুর ২টা পর্যন্ত ঘাট এলাকার পাথরের ফাঁকে, বালুর স্ত‚পের নিচে খণ্ডিত মাথা তল্লাশি করা হয়। সাগরে অতিরিক্ত স্রোতের কারণে তল্লাশি কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হয়। পরে বৃষ্টি শুরু হলে অভিযান স্থগিত করা হয়। বৃষ্টি থামলে আবারো অভিযান শুরু হয়।

হাসানকে খুন করার পর ট্রলিব্যাগ ও শপিংব্যাগে করে লাশের খণ্ডিত অংশ বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দেওয়া হয়। ওই সময় হাসানের ছোট ছেলে সফিকুর রহমানের সঙ্গে তার স্ত্রী আনারকলিও ছিলেন। তাই রিমান্ডে থাকা আনারকলিকে নিয়েই পিবিআই সম্ভাব্য স্থানে অভিযান পরিচালনা করেছে।

আনারকলি সাংবাদিকদের আরও বলেন, আমি একবারও নিজেকে নির্দোষ দাবি করছি না। আমি দোষী। আমার সন্তানের কপালে যা আছে তা হবে। আমার মা-বাবা ও ছোট ভাইরা যতদিন আছে ততদিন ইনশাল্লাাহ আমার সন্তানের সমস্যা হবে না। ওরাই আমার সন্তানকে দেখে রাখবে। আমার বিবেক যদি কাজ করত তাহলে একবার হলেও আমার সন্তানের কথা ভাবতাম। এত বড় পাপের মতো ঘটনায় জড়িয়ে যেতাম না।

তিনি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, প্রথমে শ্বশুর হাসানের লাশ টুকরো টুকরো করা হয়নি। আমি তাকে বস্তার মধ্যে ঢুকানোর সময় দেখেছি। তখন কি তিনি মৃত ছিলেন না জীবিত ওটা জানি না। তারপর আমি আর কিছু দেখিনি। আমার ধারণা লাশ টুকরো টুকরো রাতে করেছে, দিনে নয়।

পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের পরিদর্শক মো. ইলিয়াস খান সোমবার যুগান্তরকে বলেন, সম্পত্তি লিখে না দেওয়ার জের ধরে দুই ছেলে মোস্তাফিজ ও সফিকুর রহমান মিলে বাবা হাসান আলীকে বাসায় ডেকে এনে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। ২০ সেপ্টেম্বর দিনে হত্যা করলেও রাতে তার লাশ টুকরো করা হয়। ২১ সেপ্টেম্বর সকালে হাত-পা কেটে ৮ টুকরো করার পর তা পুত্রবধূ আনারকলি ট্রলিব্যাগে ভরে এবং মাথা শপিংব্যাগে ভরে পতেঙ্গা থানার ১২ নম্বর ঘাটে নিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। দেহ অপর একজনকে দিয়ে বস্তায় ভরে ফেলে দেওয়া হয় একটি খালে।

তিনি বলেন, ঘটনার পরদিনই হাসানের শরীরের সব অঙ্গ উদ্ধার করা হলেও মাথা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ঘটনার পর একাধিকবার জোয়ার-ভাটা হয়েছে। এ কারণে বালিতে বা অন্য কিছুতে খণ্ডিত মাথা হয়তো চাপা পড়েছে। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি সেটি উদ্ধার করতে। এটি উদ্ধার করা গেলে মামলা প্রমাণ করা আরও সহজ হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম