মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
চাকরি স্ত্রীর ডিউটি করেন স্বামী
মুরাদনগর (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:২৪ পিএম
মুরাদনগরে চার বছর ধরে কর্মস্থলে না এসেও নিয়মিত বেতন-ভাতা তোলার অভিযোগ উঠেছে রহিমা বেগম নামে এক আয়ার বিরুদ্ধে। ১৯৯৫ সালে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আয়া পদে যোগদান করেন তিনি।
২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময় চাকরিরত অবস্থায় রহিমা বেগম শারীরিক অসুস্থতার কথা বলে ছুটিতে যান। ছুটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও বিগত চার বছর ধরে শুধু বেতন-ভাতার টাকা উত্তোলনের সময় ছাড়া নিজ কর্মস্থলে দেখা যায় না তাকে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের আদের্শকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এভাবেই দায়িত্বে অবহেলা করে কোনো রকম ছুটি ছাড়াই বছরের পর বছর হাসপাতালে অনুপস্থিত থাকছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ডিজিটাল হাজিরার (ফিঙ্গার প্রিন্ট) আওতায় আনা হলে রহিমা বেগমের ফিঙ্গার প্রিন্ট না নিয়ে স্বামী জামাল হোসেনের ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়া হয়। এরপর থেকে প্রতিদিন স্বামী জামাল হোসেন হাজিরা মেশিনে নিজের ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে হাজিরার উপস্থিতি দেখিয়ে আসছে রহিমা বেগম। মূলত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতায় বিগত চার বছর ধরে কর্মস্থলে না এসেও প্রতি মাসে বেতনের ২৪ হাজার টাকাসহ সরকারি সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা তুলে নিচ্ছেন রহিমা বেগম।
আয়া রহিমা বেগম সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনায় আমি পায়ে ব্যথা পেয়ে প্রায় পঙ্গু হয়ে গিয়েছিলাম। কয়েক বছর আমার চলাফেরা করতে খুবই কষ্ট হয়েছিল। তারপর থেকে নিয়মিত চিকিৎসার ফলে বর্তমানে আমি কিছুটা ভালো। আমি প্রতিদিনই হাসপাতালের ডিউটিতে যাই। অসুস্থতার কারণে আমি কাজ করতে পারি না বিধায় আমার স্বামী আমার উপস্থিতিতে কাজে সহযোগিতা করেন।’ তবে স্বামী জামাল হোসেন স্ত্রীর অসুস্থতা নিয়ে বলছেন ভিন্ন কথা।
তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে পিঠের ব্যথা নিয়ে খুবই অসুস্থ। পরে আমি বড় স্যারদের হাতে পায়ে ধরে তার উপস্থিতিতে সব কাজ করার অনুমতি নিয়ে আমি সব কাজ করি।’
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এনামুল হক অনুপস্থিত থাকা ও ডিজিটাল হাজিরা মেশিনে স্বামী-স্ত্রীর দুজনের ফিঙ্গার প্রিন্ট থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি এখানে দায়িত্ব নিয়েছি বেশিদিন হয়নি। দায়িত্ব নেওয়ার পর রহিমা বেগমের বিষয়টি জানতে পারি। আমি আসার পর রহিমার ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়েছি। আসলে আমার আগে যে কর্মকর্তারা ছিলেন তারা নাকি রহিমা বেগমের অসুস্থতার কথা জেনে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে রহিমা বেগমের উপস্থিতিতে স্বামীকে দিয়ে ডিউটি করার অনুমতি দিয়েছিলেন। তারপরও বিষয়টিকে আমি যাচাই-বাছাই করে গুরুত্ব সহকারে দেখছি।’