সাংবাদিক মামুনের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে মানববন্ধন
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৫:২১ পিএম
দৈনিক যুগান্তরের বিশেষ প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে মানববন্ধন এবং বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
জেলার সর্বস্তরের সাংবাদিকদের অংশগ্রহণে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাংবাদিক সমাজের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
রোববার বেলা ১১টার দিকে জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বরে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি শহিদুল হুদা অলক, জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এমরান ফারুক মাসুম, সিটি প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাজেদুল হক সাজুসহ শিবগঞ্জ, নাচোল, গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট উপজেলার সাংবাদিকরা এতে অংশগ্রহণ করেন।
এ সময় বক্তব্য রাখেন- দৈনিক করতোয়ার জেলা প্রতিনিধি জাকির হোসেন পিংকু, এসএ টেলিভিশনের আহসান হাবিব, যমুনা টেলিভিশন ও দৈনিক যুগান্তরের মনোয়ার হোসেন জুয়েল, প্রথম আলোর আনোয়ার হোসেন দিলু এবং এনটিভি ও দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার শহিদুল হুদা অলক।
মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচিটি সঞ্চালনা করেন ডিবিসি নিউজের জেলা প্রতিনিধি জহরুল ইসলাম।
কর্মসূচিতে একাত্মতা ঘোষণা করে অংশগ্রহণ করেন- রাজশাহী থেকে প্রকাশিত দৈনিক সানসাইনের বাণিজ্যিক প্রধান আবু তাহের খোকন ও রাজশাহী প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসলাম উদ দৌলা প্রমুখ।
এ সময় বক্তারা দৈনিক যুগান্তরের বিশেষ প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া মামলা প্রত্যাহারসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানান।
তারা বলেন, দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত মামুনের সংবাদটি ছিল বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্য নির্ভর। এক্ষেত্রে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগ করতে পারতেন। অথচ তিনি তা না করে ডিজিটাল নিরাপত্তার মতো কালো আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। শুধু তাই নয় ঠাঁকুরগাঁও-২ আসনের সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলাম দায়েরকৃত মামলায় নিজে বাদী হননি। এই সংবাদের সঙ্গে সম্পর্কহীন ব্যক্তিকে দিয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে বোঝা যায় এ ধরনের মামলা হয়রানি ও গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের অপচেষ্টা মাত্র।
যমুনা টেলিভিশন ও দৈনিক যুগান্তরের সাংবাদিক মনোয়ার হোসেন জুয়েল তার বক্তব্যে বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃতী সন্তান ও দৈনিক যুগান্তরের বিশেষ প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি। তিনি বলেন, যখনই আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছি তখন দায়িত্বশীলরা বলেছেন এই আইন সাংবাদিকদের জন্য নয়। অথচ এই কালো আইনে করা অধিকাংশ মামলার আসামিই সাংবাদিক। এতে বোঝা যায় এই আইন দিয়ে সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করার অপচেষ্টা চলছে। এ ধরনের কালো আইন দিয়ে যতই সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করা হোক না কেন সাংবাদিকরা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে যাবে।
এসএ টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি আহসান হাবিব বলেন, তৃতীয় এক ব্যক্তিকে দিয়ে এই মামলা করা হয়েছে। এতে বোঝা যায় এটি একটি হয়রানিমূলক মামলা। আর মামলার বিবাদী যিনি সংবাদ প্রকাশের জেরে মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছেন তিনি দেড় মাস পর জানতে পারছেন যে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার শিকার হয়েছেন। এতে বোঝা যায় এ ধরনের মামলা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও যড়যন্ত্রমূলকভাবে করা হয়েছে।
প্রথম আলোর সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন দিলু বলেন, সাংবাদিকতা করার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের জন্য আমাদের লড়াই করে যেতে হবে। মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী সবাইকে তিনি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি শহিদুল হুদা অলক বলেন, যে আইনে সাংবাদিক মামুনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে সেই আইনের বিরুদ্ধে চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ সারা দেশের সাংবাদিক সমাজ দীর্ঘদিন ধরে সোচ্চার। এই আইন আমরা বাতিলের জন্য দাবি জানিয়েছিলাম কিন্তু আইনটি সংশোধন করা হয়েছে। আমরা সুস্পষ্টভাবে মনে করি, এ আইনটি স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য একটি প্রতিবন্ধক। সুতরাং সংশোধন নয় এ আইনটি বাতিল করা হোক এবং সাংবাদিক মামুনের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার দাবি করছি।
অন্যান্য বক্তারা বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের জন্য গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতিনিয়ত রাস্তায় দাঁড়াতে হচ্ছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে করা সংবাদ প্রকাশের পর কিভাবে একজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এ ধরনের মামলা হয়, সেটি আমাদের বোধগম্য নয়। এ আইনে দেশের কোনো সাংবাদিক যেন হয়রানির শিকার না হন, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
তারা আরও বলেন, আমাদের সহকর্মী মামুনের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে, আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা হোক। পাশাপাশি সব সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এ আইনে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। আইনটির মাধ্যমে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এর ফলে দেশে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারার বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে তার চলমান ধারা সুস্পষ্টভাবে আমরা দেখতে পাচ্ছি। আমরা আইনটি বাতিলেরও দাবি জানাচ্ছি।
এ ধরনের আইন সাংবাদিকদের জন্য হয়রানিমূলক দাবি করে বক্তারা বলেন, সাংবাদিকরা দুর্নীতি আর অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার। জনগণের পক্ষে কাজ করার কারণেই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ আইনে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। বরং যারা দুর্নীতিগ্রস্ত এবং দেশের অর্থ বিদেশ পাচার করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অবিলম্বে গ্রহণ করা হোক।
প্রসঙ্গত, গত ২৩ জুলাই দৈনিক যুগান্তরে ‘আওয়ামী লীগের জরিপের কাজ শেষ পর্যায়ে, বর্তমান এমপি বাদের তালিকা হবে দীর্ঘ’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ সংবাদের জের ধরে গত ৩০ জুলাই ঠাকুরগাঁও-২ আসনের এমপি দবিরুল ইসলামের সমর্থক প্রভাত শাহা বালিয়াডাঙ্গী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন।