চুরি দেখে ফেলায় সাংবাদিকের মাকে হত্যা করা হয়
যুগান্তর প্রতিবেদন, টাঙ্গাইল ও ভূঞাপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৩৮ পিএম
বৃদ্ধা সুলতানা সুরাইয়ার (৬৫) ছেলে ও মেয়েরা তাদের কর্মস্থল ঢাকায় বসবাস করেন। স্বামী আব্দুর রহিম আকন্দের মুক্তিযোদ্ধার ভাতা ও সন্তানদের সহযোগিতায় চলত বৃদ্ধার সংসার। বাসায় আর কেউ না থাকায় আসামিদের দিয়ে টাকার বিনিময়ে সাংসারিক কাজ করাতেন বৃদ্ধা। আসামিরাও কাজ করার সময় বৃদ্ধার টাকার খবর জানতে পারেন।
টাকার জন্য বৃদ্ধার বাসায় চুরি করতে যান আসামিরা। আসামিদের দেখে চিনে ফেলায় সাংবাদিকের মা ওই বৃদ্ধাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় দুর্বৃত্তরা। পরে তার মুখে গামছা পেঁচিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়।
সুরাইয়া সুলতানা টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর পশ্চিমপাড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ও দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার নিউজ এডিটর মো. আবু সায়েম আকন্দের মা।
এ ঘটনায় দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। বুধবার দুপুরে তাদের আদালতে পাঠানো হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছেন- সিরাজগঞ্জ সদরের পুনর্বাসন এলাকার মো. শাহজাহান ওরফে শাহ জামালের ছেলে মো. লাবু (২৯) ও ভূঞাপুর পশ্চিমপাড়ার সিরাজ আকন্দের ছেলে আল আমিন আকন্দ (২২)।
বুধবার দুপুরে টাঙ্গাইল পিবিআই কার্যালয়ে পুলিশ সুপার সিরাজ আমিন জানান, আল আমিন আকন্দ ওই বৃদ্ধার বংশের লোক। বাড়িতে কেউ না থাকায় বৃদ্ধার সাংসারিক কাজ করে দিতেন আসামিরা। সুলতানা সুরাইয়ার বাসায় টাকা চুরি করতে ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে আসামিরা ওই বাড়িতে যান। রাত ১২টার পর ঘরে প্রবেশ করার পর বৃদ্ধা তাদের দেখে চিনে ফেলেন। বৃদ্ধা চিৎকার করার সময় আসামিরা গামছা দিয়ে তার মুখ বেঁধে ফেলে। পরে সুইস গিয়ার চাকু দিয়ে তার গলা কাটে। মৃত্যু নিশ্চিত করে বৃদ্ধার সাড়ে ১২ হাজার টাকা ও তার ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন নিয়ে যায়।
১৪ সেপ্টেম্বর তার ছেলেমেয়েরা মোবাইল ফোনে তাকে না পেয়ে তাদের এক আত্মীয়কে বাড়িতে পাঠান। তখন তার লাশ মেঝেতে দেখতে পান। পরে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। ১৫ সেপ্টেম্বর মো. আবু সায়েম আকন্দ বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে ভূঞাপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।
সিরাজ আমিন জানান, সাড়ে ১২ হাজার টাকা দুইজনে ভাগ করে ও মোবাইল দুটি লাবুকে দিয়ে দেয়। লাবু একটি মোবাইল সিরাজগঞ্জ সদরে বিক্রি করে। সেই মোবাইলের সূত্র ধরে প্রথমে লাবুকে ও পরে আল আমিন আকন্দকে চিহ্নিত করা হয়। মঙ্গলবার রাতে লাবুকে সিরাজগঞ্জ সদর ও আল আমিন আকন্দকে ভূঞাপুর সদর থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত সুইস গিয়ার চাকু ও বৃদ্ধার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ সুপার আরও জানান, আসামি দুইজনেই নিজের দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেবে বলে পিবিআইকে জানিয়েছে। এ ঘটনায় আর কেউ জড়িত নয় বলেও তারা জানান।