Logo
Logo
×

সারাদেশ

গোদাগাড়ী নেসকো প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

Icon

রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৫:৫২ পিএম

গোদাগাড়ী নেসকো প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) গোদাগাড়ী জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী রায়হানুল ওয়াজিদের বিরুদ্ধে সেবা নিতে আসা লোকদের সঙ্গে অসদাচরণের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে সেবা প্রদানের নামে অবৈধভাবে অর্থ আদায়েরও অভিযোগ করেছেন গোদাগাড়ীর বিশিষ্টজনরা।

গোদাগাড়ীর নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, পৌর কাউন্সিলরসহ বিভিন্ন পেশার লোকজন স্বেচ্ছাচারী এই কর্মকর্তার অপসারণ দাবি করেছেন। এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী, নেসকোর এমডি ও প্রধান প্রকৌশলীর কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে এখন নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

সংশ্লিষ্ট পক্ষের লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রায়হানুল ওয়াজিদকে কয়েক মাস আগে নেসকোর গোদাগাড়ী জোনের নির্বাহী প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে সেবা গ্রহণে আসা লোকজনের সঙ্গে এই নির্বাহী প্রকৌশলী কারণে অকারণে বিরূপ ও উদ্ধত্য আচরণ করেন বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, নির্বাহী প্রকৌশলী রায়হানুল ওয়াজিদ রাজশাহী নগরীতে বসবাস করেন। সকাল সাড়ে ৯টায় সরকারি অফিসের কার্যক্রম শুরু হলেও এই কর্মকর্তা নিজের প্রাইভেট কারে চড়ে ১১টায় যান কর্মস্থলে। দুই আড়াই ঘণ্টা অফিসে অবস্থানের পর আবার রাজশাহীতে ফিরে গিয়ে পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মুক্তা হার্ডওয়্যারে ব্যস্ত সময় পার করেন। ফলে গোদাগাড়ীর ভুক্তভোগী মানুষ বিদ্যুৎ সংক্রান্ত নানাবিধ সেবা থেকে বঞ্চিত হন। বিদ্যুৎ পরিষেবায় নিয়োজিত কর্মকর্তাদের নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থানের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তার কোনো তোয়াক্কা করেন না এই কর্মকর্তা।

অভিযোগ মতে, সম্প্রতি গোদাগাড়ী পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তৈমুর রহমানের মিটার নষ্ট হয়ে যায়। ৫ দিন অফিসে ঘুরে ৬ষ্ঠ দিনে তিনি নির্বাহী প্রকৌশলীর সাক্ষাৎ লাভে সক্ষম হন। তার বাসার বিকল মিটার ঠিক করার জন্য সহায়তা চাইলে নির্বাহী প্রকৌশলী সেবাপ্রত্যাশী এই প্রবীণ নাগরিকের কোনো কথা না শুনে তাকে তাৎক্ষণিক অফিস ত্যাগের নির্দেশ দেন। নির্বাহী প্রকৌশলীর চরম বৈরী ও রূঢ় আচরণের প্রতিবাদ করলে তাকে কর্তব্যরত আনসার দিয়ে অফিস থেকে বের করে দেন।

এ ঘটনা জেনে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে নির্বাহী প্রকৌশলী নেসকো অফিসে সব সাংবাদিকের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করেন। এ ঘটনার পর গোদাগাড়ী নেসকো অফিসে কোনো সাংবাদিক প্রবেশ করতে পারেনি। যারা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন তাদেরও নেসকোর গোদাগাড়ী অফিসে ঢুকতে দেওয়া হয় না।

এদিকে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের ক্ষেত্রেও নেসকোর এই কর্মকর্তা স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির বহু নজির গড়েছেন গোদাগাড়ীতে। নতুন সংযোগ পেতে ডাইংপাড়ার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বিকাশ চন্দ্র সিংহ আবেদন করে নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে দেখা করেন। তাকে জানানো হয় সরকারি জায়গায় থাকা কোনো দোকানে সংযোগ দেওয়া যাবে না।

বিকাশ চন্দ্র সিংহ এ সময় তাকে জানান, গোদাগাড়ী এলাকায় রেলের জমিসহ বিভিন্ন সরকারি জমিতে হাজার হাজার বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে; তাহলে তার সংযোগ কেন হবে না। এ সময় নতুন সংযোগ পেতে ২০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। একপর্যায়ে বিকাশ চন্দ্র সিংহকে আনসার দিয়ে জোর করে অফিস থেকে বের করে দেওয়া হয়। বিকাশ চন্দ্র সিংহ এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ পাননি।

অটো চার্জার সংযোগে ৬০ হাজার টাকা সরকারি খরচ হলেও মিঠুন শেখের কাছ থেকে নির্বাহী প্রকৌশলী ১ লাখ ২০ হাজার নিয়ে তার সংযোগ প্রদান করেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, গোদাগাড়ীতে কারো বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে পুন:সংযোগ পেতে বিদ্যুৎ কর্মীদের বাধ্যতামূলকভাবে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা বখশিশ দিতে হচ্ছে। গোদাগাড়ীতে নেসকোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই উপরি নেওয়াকে নিয়মে পরিণত করেছেন। এতে ভোগান্তি বেড়েছে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের।

অভিযোগকারী গোদাগাড়ী নাগরিক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শান্ত কুমার মজুমদার ও গোদাগাড়ী স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালাহউদ্দিন বলেন, নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলীর উদাসীনতার কারণে গোদাগাড়ীর মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। ঠিক নামাজের সময় বিদ্যুৎ টেনে নেওয়া হয়। কেউ বলতে গেলে নির্বাহী প্রকৌশলী তাদের সঙ্গে মারমুখী আচরণ করেন। ফোন করলে খারাপ ভাষায় কথা বলেন। এমন বৈরী আচরণের কর্মকর্তার কারণে জনমনে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নেসকোর গোদাগাড়ী জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী রায়হানুল ওয়াজিদ তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন।

নেসকোর প্রধান প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, গোদাগাড়ীর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের দেওয়া অভিযোগগুলো সম্প্রতি প্রধান কার্যালয় থেকে সরেজমিন তদন্ত করা হয়। নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে আনীত অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়নি। তবে তার আচরণগত কিছু ত্রুটির বিষয়ে সত্যতা পাওয়া যায়। এ বিষয়ে কর্মকর্তাকে সতর্ক করা হয়েছে। এখন আর তিনি সেবাপ্রার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করছেন না বলে আমরা জেনেছি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম