কেস প্রতি আমার ১০ হাজার, আপনাদের ৫ হাজার, এসিল্যান্ডের কথোপকথন ভাইরাল
নাজিরপুর (পিরোজপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৩:৩২ পিএম
নাজিরপুরের এসিল্যান্ড মো. মাসুদুর রহমান। ছবি: যুগান্তর
সম্প্রতি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি সহকারী ও উপসহকারী কর্মকর্তাদের (তহশিলদার) নিয়ে একটি বৈঠক হয়।
ওই বৈঠকে নাজিরপুরের এসিল্যান্ড মো. মাসুদুর রহমানকে বলতে শোনা যায়— আপনারা যে পার কেস ডিলিংস করেন, তা এনসিওর করার কোনো ওয়ে আছে?
ওই কথপোকথনের একপর্যায়ে, তহশিলদারদের খোলামেলা কথা বলার জন্য এসিল্যান্ড বলেন। তিনি বলেন, আপনাদের মতামত শুনি যে আপনারা কি চাচ্ছেন?
তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে আমার সঙ্গে শাখারিকাঠী ইউনিয়ন তহশিলদার মো. শাখাওয়াত সাহেবের সঙ্গে সব বিষয়ে কথা হয়েছে।
মাটিভাঙা ইউনিয়ন তহশিলদার মো. সুজন বলেন, দুই একরের বেশি জমি হলে তখন আমরা কত নেব? শ্রীরামকাঠী ইউনিয়ন তহশিলদার পরিমল বলেন, এটা স্যারের ওপর নির্ভর করে। আপনি যেভাবে বলবেন সেভাবে আমরা নেব।
তখন সদর ইউনিয়নের তহশিলদার শাহজাহান কবির বলেন, সব কেসে যেমন ১ একর, ২ একর বা ৩ একর বাতার চেয়েও বেশি জমির ক্ষেত্রে সমান হওয়া উচিত। যেমন ৫ হাজার ছিল। সেখানে আপনি বললে ৪ হাজার টাকা নামিয়ে আনতে পারি। আপনি যেভাবে বলবেন স্যার।
তখন এসিল্যান্ড বলেন, ধরেন আমি ৪ হাজার নির্ধারণ করে দিলাম— আপনারা কত ডিল করবেন? প্রথমে মাটিভাঙা ইউনিয়নের তহশিলদার মো. সুজন বলেন এখানে যদি ৪ হাজার দেওয়া যায় তা হলে মোট সাড়ে ৫ হাজার হলে হয়। আমরা সর্বোচ্চ ৬ হাজার টাকার বেশি নেব না।
দ্বিতীয়ত নাজিরপুর সদর ইউনিয়নের তহশিলদার শাহজাহান কবির বলেন, এখানে ৪ হাজার, মোট ৬ হাজার টাকা হলে হয়।
তখন এসিল্যান্ড বলেন, এ অর্থবছরের জন্য প্রতিটি নামজারি কেসের জন্য আমাকে ৪ হাজার, আপনারা ২ হাজার মোট ৬ হাজার নেবেন। তিনি নামজারির জন্য ৬ হাজার টাকা রেট চূড়ান্ত করে দেন।
এর পর আবার এসিল্যান্ড বলেন, প্রকৃতপক্ষে আপনারা কয় টাকা নিতে চান বলেন এবং সে তার দিক থেকে প্রস্তাব করেন। আমাকে ৪ হাজার করে দেন, আপনারা দেড় হাজার মোট সাড়ে ৫ হাজার করে নেন।
তখন শেখমাটিয়া ইউনিয়ন তহশিলদার মো. হাসান হাওলাদার বলেন, স্যার এটা ৬ হাজার করা হোক। এসিল্যান্ড ৬ হাজার টাকা করে প্রতিটি নামজারির জন্য চূড়ান্ত করে নির্দেশনা দেন এবং বলেন ৬ হাজার টাকার বেশি যেন না নেওয়া হয়।
‘ক’ তফসিলের নামজারির কেসের জন্য এসিল্যান্ড বলেন, আমাকে ‘ক’ তফসিলের প্রতিটি কেসের জন্য ১০ হাজার টাকা করে দেবেন; আর আপনারা ৫ হাজার টাকা করে নেবেন। মোট ১৫ হাজার টাকা নেবেন।
নাজিরপুর উপজেলা ভূমি অফিসসূত্রে জানা গেছে, কোনো জমির মালিকানা পরিবর্তন হলে পুরনো মালিকের নাম বাদ দিয়ে নতুন মালিকের নামে নামজারি করতে সরকারিভাবে এর ফি হিসেবে ১ হাজার ১৭০ টাকা নেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। তবে প্রকৃতপক্ষে নামজারির অনলাইন আবেদন ফি ৭০ টাকা। আর আবেদন মঞ্জুর হলে ডিসিআর ফি জমা দিতে হয়। এছাড়া আর কোনো খরচ নেই।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ভূমি অফিস তাদের চাহিদামতো টাকা নিচ্ছেন। কিন্তু এবার এসিল্যান্ড কর্তৃক এমনভাবে সেই ঘুসের টাকা নির্ধারণ করে দেওয়ায় সেবাপ্রত্যাশীরা হয়রানি বেশি হবেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা ভূমি অফিসের এক কর্মচারী জানান, তিনি প্রায়ই কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই অবৈধভাবে অফিসের গাড়ি নিয়ে জেলার বাইরে যান। গত বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় গেলে বিভাগীয় কমিশনারের নজরে আসে। এ নিয়ে তিনি ক্ষিপ্ত হন।
এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার ভূমি (এসল্যিান্ড) মো. মাসুদুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, তিনি একটি পরীক্ষার জন্য ঢাকায় আছেন। বিষয়টি নিয়ে তাকে সাজানোভাবে জড়ানো হয়েছে। তিনি কোন অপরাধ করেননি বলে দাবি করেন।
অডিও কথোপকথনের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ডা. সঞ্জিব দাশ বলেন, অডিওর কথোপকথন তিনি শুনেছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, মো. মাসুদুর রহমনার গত ৮ জুন জেলার নাজিরপুরে এসিল্যান্ড হিসেবে যোগদান করেন। এর আগে তিনি সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কর্মরত ছিলেন।