Logo
Logo
×

সারাদেশ

‘এখন বাঁচলে দুজনে বাঁচব, আর মরলে দুজনে মরব’

Icon

নেত্রকোনা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০১:৫৮ পিএম

‘এখন বাঁচলে দুজনে বাঁচব, আর মরলে দুজনে মরব’

স্ত্রী সায়মা জাহান পলি নিজের একটি কিডনি দেন স্বামী জহিরুল হক জুনাইদকে। ছবি: যুগান্তর

প্রায় এক বছর চার মাস আগে মাথা ঘুরানো ও উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন নেত্রকোনার জহিরুল হক জুনাইদ (৩৯)। 

পরীক্ষা-নিরীক্ষার একপর্যায়ে ধরা পড়ে তার দুটি কিডনিই বিকল। কোথাও যখন কিডনি পাচ্ছিলেন না, তখন তার স্ত্রী সায়মা জাহান পলি (২৭) নিজের একটি কিডনি দিতে এগিয়ে আসেন। তার দেওয়া কিডনিতে এখন সুস্থ হয়ে উঠেছেন জহিরুল হক। এ ঘটনায় স্ত্রী পলির প্রশংসায় পঞ্চমুখে পরিণত হয়েছেন। 

এই দম্পতি বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের সপ্তম তলায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।

জহিরুল হকের বাড়ি জেলার পূর্বধলা উপজেলার হিরণপুর বাজার এলাকায়। তিনি ওই এলাকার মো. মোজাম্মেল হক ও জয়নব আক্তার দম্পতির পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবার বড়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা জহিরুল একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। তার স্ত্রী সায়মা জাহান নেত্রকোনা সরকারি কলেজ থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে মাস্টার্স পাশ করেন। 

জহিরুল ও সায়মা দম্পতির জুনাইনা জান্নাত রাইসা নামের পাঁচ বছরের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে।

পারিবারিক সূত্র জানায়, প্রায় ছয় বছর আগে আটপাড়া উপজেলার পাঁচগজ গ্রামের সায়মা জাহানের সঙ্গে জহিরুল হকের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তারা একসঙ্গে ঢাকায় থাকতেন। গত বছরের ২৭ মে জহিরুল ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আসেন। ওই দিন উচ্চ রক্তচাপসহ তার শারীরিক পরিস্থিতি খারাপ অনুভব হলে স্বজনরা নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে আসেন। 

জরুরি বিভাগের চিকিৎসক পরীক্ষা করে দেখেন তার ব্লাড প্রেসার (বিপি) ৩০০ বাই ২৪০। চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তার কিডনি রোগ ধরা পড়ে। ময়মনসিংহ ও ঢাকায় বিভিন্ন স্থানে তিনি চিকিৎসা নেন। 
এর পর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে তিনি ডায়ালাইসিস করতে থাকেন। 

সর্বশেষ ঢাকার রামপুরায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে সপ্তাহে তাকে তিন বার ডায়ালাইসিস করতে হয়েছে। কিন্তু শারীরিক পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতি হতে থাকে। 

মাসখানেক আগে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে ঢাকায় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরামর্শ দেন। 

পরীক্ষার ফল দেখে চিকিৎসক জানান, তার দুটি কিডনি অচল হয়ে গেছে। রোগীকে বাঁচাতে হলে কমপক্ষে একটি কিডনির প্রয়োজন। 

এর পর বিভিন্ন কিডনি ব্যাংকে যোগাযোগ করেও কিডনি সংগ্রহ করতে পারেননি। এতে পরিবারের লোকজন হতাশ হয়ে পড়েন। পরীক্ষায় জহিরুলের সঙ্গে স্ত্রী সায়মার কিডনি মিলে যায়। এ অবস্থায় স্বামীকে বাঁচাতে সায়মা জাহান নিজের একটি কিডনি দেন। 

গত ৫ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে এই কিডনি প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচার করা হয়। বর্তমানে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিসিইউ) চিকিৎসাধীন জহিরুল। 

আর সায়মা জাহানকে শনিবার হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনি রামপুরা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় কোয়ারেন্টাইনে আছেন।

জহিরুল ইসলামের ছোট ভাই মো. আশিকুল হক পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) হিসেবে কর্মরত। 

তিনি জানান, তার ভাবী এখন কিছুটা সুস্থ। চিকিৎসকের পরামর্শে শনিবার হাসপাতাল থেকে তিনি বাসায় ফিরেছেন। আর ভাইয়ের অবস্থাও ভালোর দিকে। 

ভাবীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমরা ভাই হয়ে যা পারিনি, ভাবী তা পেরেছেন। তাকে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই। 
মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন উভয়কেই সুস্থ করে তোলেন। আপনারাও দোয়া করবেন।

এ বিষয়ে সায়মা জাহান বলেন, স্বামীকে নিজের কিডনি দিতে পেরে আমি গর্বিত। তিনি (স্বামী) কখনো বলেননি, আমি নিজের ইচ্ছায় কিডনি দিয়েছি। 
তিনি সুস্থতার দিকে যাচ্ছেন এটা দেখে খুবই ভালো লাগছে। এখন বাঁচলে দুজনে বাঁচব আর মরলে দুজনে মরব।’
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম