Logo
Logo
×

সারাদেশ

বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে পদ্মায়

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন, নবাবগঞ্জ

প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:০৭ পিএম

বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে পদ্মায়

ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলার আশপাশের এলাকাগুলো পদ্মা নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে। ফলে পদ্মা নদীতে চলছে মাটি বিক্রি ও বালু উত্তোলনের মহোৎসব। এতে একদিকে লাভবান হচ্ছে কতিপয় প্রভাবশালী মাটি ও বালুখেকোরা। এসবের সঙ্গে জড়িত আছে জনপ্রতিনিধি ও সরকার দলীয় লোকেরা।

বালু উত্তোলনের ফলে ভিটেমাটি জমিজমা হারিয়ে পথের ভিখারি ও ভূমিহীন হচ্ছেন স্থানীয় পদ্মা তীরবর্তী জনসাধারণ। ফলে নদী ভাঙন তীব্র হলেও প্রতিকারের কোনো ব্যবস্থা নেই। গত কয়েক দিনে পদ্মার ভাঙনে দোহারের মিনি কক্সবাজারখ্যাত মৈনটঘাটের প্রায় ১০০ দোকান, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে ঢাকা গুলিস্থানগামী দ্রুত ও যমুনা পরিবহণের বাসস্টেশন। এছাড়া নবাবগঞ্জ উপজেলার জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চারাখালী, অরঙ্গাবাদসহ বিস্তীর্ণ এলাকা হুমকির মুখে।

সরেজমিনে পদ্মা পাড়ের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পদ্মা নদীর মানিকগঞ্জ সীমানার হরিরামপুর নেসরাগঞ্জ ও বয়রা এলাকা থেকে দোহারের বিলাশপুর পর্যন্ত মাঝ নদীতে অপরিকল্পিতভাবে চলছে ড্রেজিং করে বালু উত্তোলন। ফলে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে পদ্মার ভাঙন তীব্র হচ্ছে।

বালু উত্তোলনের সঙ্গে হরিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমানসহ বেশ কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। এরা একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে পদ্মা থেকে বালু তুলছেন।

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার আজিম নগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলী আকবর খান বলেন, হরিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমানের নেতৃত্বে পদ্মা থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে বেপরোয়া ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে ধুলশুরা, খাসপাড়া, আবেধারা গ্রাম একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কিছু স্থাপনা পদ্মায় বিলীন হয়েছে।

এলাকাবাসী জানান, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম আসার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দেয়। কিন্তু এ বছর চলমান মৌসুমে ভাঙনের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে। তাদের দাবি, পদ্মার ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই দোহার উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। এতে করে অসংখ্য লোক গৃহহীন হয়ে পড়বে। বৃদ্ধি পাবে দরিদ্র ও ভূমিহীন মানুষের সংখ্যা।

এছাড়া নবাবগঞ্জের জয়কৃষ্ণপুর, মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের চরাঞ্চল ভাঙন ঝুঁকিতে পড়েছে। মূলত নদী থেকে অবৈধভাবে পথে অপরিকল্পিত মাটি কাটার কারণেই ভাঙন তীব্র হয়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান বলেন, তিনি অবৈধ কোনো বালু কাটছেন না। তাদের ইজারাকৃত এলাকা নেসারাগঞ্জ ও বয়রা থেকে বালু তুলছেন।  দোহার ও ফরিদপুরের কিছু লোক প্রতিনিয়ত নদী থেকে রাতের আঁধারে বালু তুলছেন। তাদের অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের কারণেই পদ্মায় ভাঙন বাড়ছে বলে তিনি দাবি করেন।

রোববার সরেজিমন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার মিনি কক্সবাজার এলাকার মৈনটঘাটে অবস্থিত লঞ্চ টার্মিনাল ও প্রায় ১০০ ভ্রাম্যমাণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দোকানপাট গত কয়েক দিনে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এছাড়া পুরুলিয়া, দেওভোগ, ইারায়নপুর, চরকুসুমহাটীসহ মাহমুদপুর ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী কৃষিজমি, ঘরবাড়ি ও ধর্মীর প্রতিষ্ঠান নদীতে ভাঙতে শুরু করেছে।

ধুলশুরার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. রায়হান বলেন, পদ্মার মাঝখানে বালু কাটার কারণেই ভাঙন শুরু হয়েছে। স্কুলসহ কয়েকটি বসতবাড়ি চলে গেছে নদীতে। গত কয়েক দিনে দোকান ঘরটি ৩ বার সরিয়েছি। জানি না আবার কী হবে। এভাবে ভাঙতে থাকলে আর ব্যবসা করতে পারব না।

স্থানীয় আফজাল মোল্লা বলেন, তাদের আর কোনো জমি বা জায়গা নাই। অল্প একটু বাড়ি ভিটে, তিন বিঘা ফসলি জমি নদী গর্ভে চলে গেছে।

বালু সিন্ডিকেটের বিষয়ে দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোবাশ্বের আলম বলেন, তার উপজেলা সীমানায় কেউ মাটি কাটে না। হরিরামপুরে কাটছে। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলার কাজ করছে। দেখভাল করছে সেনাবাহিনী। তাই দোহারের কোথাও মাটি কাটার সুযোগ নেই। কেউ এসব করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম