যমুনায় পানি বৃদ্ধি, ভাঙন আতঙ্ক
শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৩, ০৯:০১ পিএম
উজানের পাহাড়ি ঢল ও গত দুদিনের ভারি বর্ষণে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার যমুনা নদীসহ সবগুলো নদীর পানি বাড়তে শুরু হয়েছে। ফলে শাহজাদপুর উপজেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। উপজেলার খুকনি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রাম ও আরকান্দির অন্তত ১৫ বাড়িঘর বন্যার পানিতে ডুবে গেছে।
এসব বাড়িঘরের মানুষ চৌকি উঁচু করে কমলমতি শিশুদের নিয়ে অতিকষ্টে বসবাস করছেন। এছাড়া উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের অধিকাংশ নিচু গ্রামগুলো এখন বন্যার পানিতে ভাসছে। অনেক রাস্তাঘাট বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নদীপাড়ের অসহায় মানুষ।
এলাকাবাসী জানান, যমুনার পানি আবারও বাড়তে থাকায় শাহজাদপুর উপজেলার যমুনা নদীর চরসহ উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের নিচু গ্রামগুলো পানিতে ভাসছে। মাঠ-ঘাট ও নিচু কাঁচা-পাকা সড়ক বন্যার পানিতে ডুবে গেছে।
শাহজাদপুর উপজেলার খুকনি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রাম, আরকান্দি, জালালপুর ইউনিয়নের ঘাটাবাড়ি, পাড়ামহোনপুর, পাকুরতলা ও কৈজুরি ইউনিয়নের হাটপাচিল গ্রামে দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। ফলে এসব গ্রামের মানুষের মধ্যে ভাঙন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
বন্যার পানিতে ডুবে গেছে খুকনি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রাম ও আরকান্দির অন্তত ১৫ বাড়িঘর। এসব বাড়িঘরের মানুষ চৌকি উঁচু করে কমলমতি শিশুদের নিয়ে অতিকষ্টে বসবাস করছে। তারা অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে।
শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের পোতাজিয়া, রাউতারা, রেশমবাড়ি, ভাইমারা, কায়েমপুর ইউনিয়নের বৃ-আঙ্গারু, চর আঙ্গারু, চুলধরি, সড়াতৈল গ্রাম বন্যার পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে। নৌকা ছাড়া এসব গ্রামে চলাচল করা যায় না। এছাড়া টানা ভারিবর্ষণে অনেক কাঁচাপাকা সড়কে খানাখন্দ দেখা দিয়েছে।
ফলে পথচারী ও যানবহন চলাচলে চরম বিঘ্ন ঘটেছে। ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে বাজারে কাঁচা সবজি ও মাছ-ডিমের দাম ২-৩ গুণ বেড়ে গেছে। ফলে শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষ চরম বিপাকে পড়েছে।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ জানান, পানি বৃদ্ধি শুরু হওয়ায় এ ইউনিয়নের যমুনা পাড়ের মানুষ ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
খুকনি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুল্লুক চাঁন জানান, বন্যা মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে তার ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রাম ও আরকান্দি গ্রামে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। গত ২ মাসে অন্তত ২ শতাধিক বাড়িঘর যমুনায় বিলীন হয়ে গেছে।
অসহায় জীবন যাপন করছেন এসব ভাঙন কবলিত মানুষ। এছাড়া অন্তত ১৫ বাড়িঘর বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় এসব বাড়িঘরের মানুষ চৌকি উঁচু করে বসবাস করছেন।
কৈজুরি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন খোকন জানান, যমুনার ভাঙনে হাটপাচিল গ্রামের ৭০ ভাগ অংশ যমুনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ ভাঙণে নিঃস্ব হয়ে গেছে এ গ্রামের ২ শতাধিক মানুষ। এদের অনেকে পলিথিনের ঝুপড়ি তুলে বাস করছেন। তারা রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। নিচু বাড়িঘরে বন্যার পানি উঠতে শুরু করায় চরাঞ্চলের মানুষকে নিরাপদে সরে যেতে বলেছি।
শাহজাদপুর উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রাশিদুল ইসলাম জানান, এ বছরে যমুনার ভাঙন ও বন্যায় সরকারি ১০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে তা বিতরণ করা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রঞ্জিত কুমার সরকার জানান, গত ২ দিনের ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে যমুনায় পানি বৃদ্ধি শুরু হয়েছে। এ পানি বৃদ্ধি আরও কয়েকদিন বাড়তে পারে।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৪৪ মিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় আট সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। (বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৯০ মিটার)।
মেট্রিক টন চাউল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে তা বিতরণ করা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রঞ্জিত কুমার সরকার জানান, গত ২ দিনের ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে যমুনায় পানি বৃদ্ধি শুরু হয়েছে। এ পানি বৃদ্ধি আরও কয়েকদিন বাড়তে পারে।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৪৪ মিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় আট সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। (বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৯০ মিটার)।