যশোরে ১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে পানিবন্দি শহরবাসী
যশোর ব্যুরো
প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৩, ১০:৪১ পিএম
টানা বৃষ্টিপাতে যশোর শহরের নিম্নাঞ্চলের অন্তত ১৫টি সড়ক প্লাবিত হয়েছে। উপচেপড়া পানি বাসা বাড়ি, দোকনপাটে ঢুকে পড়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী।
বুধবার সকাল থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ড্রেনেজ ব্যবস্থা নাজুক থাকায় রাস্তার পানি দ্রুত নিষ্কাশন না হওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
তবে পৌর কর্তৃপক্ষের দাবি, দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য তাদের কর্মীরা কাজ করছেন। মানুষের সচেতনতায় ড্রেনের মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। একইসঙ্গে পানি নিষ্কাশনের পথগুলো নানা কারণে বন্ধ হওয়ায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বুধবার সকাল ৬ থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত যশোরে ১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। টানা বৃষ্টিপাতে যশোর পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের ১৫টি সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। শহরের খড়কি এলাকার শাহ আবদুল করিম সড়ক, শহরের পিটিআই, নাজির শংকরপুর, খড়কি রূপকথা মোড় থেকে রেললাইন, বেজপাড়া চিরুনিকল, মিশনপাড়া, আবরপুর, বিমানবন্দর সড়ক, ষষ্ঠীতলাপাড়া, সার্কিট হাউজপাড়া, ফায়ারসার্ভিস সংলগ্ন সড়ক, গুরুদাশ বাবুলেন, যশোর সরকারি মহিলা কলেজ রোড, টিবি ক্লিনিক মোড়, আশ্রম রোডসহ বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতায় চরম ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে। সব এলাকার বাড়িঘরেও পানি ঢুকেছে। বাসিন্দারা দিনভর ভোগান্তির এমন দৃশ্য ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে পোস্ট করতে দেখা গেছে। অনেকেই সরকার ও পৌর কর্তৃপক্ষকেও সমালোচনা করে পোস্ট দিতেও দেখা গেছে।
এ বিষয়ে শহরের বেজপাড়া চিরুনিকল এলাকার বাসিন্দা এলিন সাঈদ-উর রহমান বলেন, এ অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতার সমস্যা রয়েছে। বৃষ্টি হলে মানুষের ভোগান্তির শেষ থাকে না। অপরিকল্পিত ড্রেন নির্মাণ করাতে শহরের পানি চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়াতে এ জলাবদ্ধতা দেখা যাচ্ছে।
যশোর পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা উত্তম কুণ্ডু বলেন, শহরের ভারি বর্ষাতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের কর্মীরা কাজ করছে, দ্রুতই জলাবদ্ধতা দূর হবে।
জানা যায়, শহরের ভেতর দিয়ে ভৈরব ও মুক্তেশ্বরী নামে দুটি নদ-নদী বয়ে গেছে। এর মধ্যে ভৈরব নদ দিয়ে শহরের উত্তরাংশ ও মুক্তেশ্বরী নদী দিয়ে শহরের দক্ষিণাংশের পানি নিষ্কাশিত হয়। কিন্তু গত দেড় দশক শহরের দক্ষিণাংশের পানি মুক্তেশ্বরী নদী দিয়ে নামতে পারছে না। পয়োনিষ্কাশন নালার মাধ্যমে শহরের পানি হরিণার বিল দিয়ে মুক্তেশ্বরী নদীতে যেত। কিন্তু ২০১০ সালে হরিণার বিলে যশোর মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয়। এরপর আশপাশে আরও অনেক স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এতে বিল দিয়ে পানি আগের মতো নিষ্কাশিত হতে পারছে না।
যশোর শহরে ২৫২ কিলোমিটার পয়োনিষ্কাশন নালা (ড্রেন) রয়েছে। এর মধ্যে ৫৫ কিলোমিটার আরসিসি, ৬০ কিলোমিটার ইট, ৫ কিলোমিটার পাইপ ও ১৩০ কিলোমিটার কাঁচা নালা রয়েছে। এর মধ্যে নগর উন্নয়ন প্রকল্পসহ কয়েকটি প্রকল্পের মাধ্যমে গত ১৪ বছরে ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪০ কিলোমিটার আরসিসি ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে যশোর পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার গণী খান পলাশ সাংবাদিকদের বলেন, জলাবদ্ধতা দূরীকরণে আমরা কাজ করছি। মুক্তেশ্বরীর সঙ্গে সংযোগ খাল স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছি। ৪০ কোটি টাকার প্রকল্পটি অর্থায়ন করেছে বিশ্বব্যাংক। এটি বাস্তবায়ন হলে জলাবদ্ধতা নিরসন হবে বলে আশাবাদী।