মাছ চাষের নামে বাঁধ, দুইশ বিঘা আবাদি জমি পানির নিচে
আরমান আলী, ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম)
প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২৩, ১০:০৫ পিএম
ভূরুঙ্গামারীতে জয়মনিরহাট ইউনিয়নের ভেরভেরি বিল ও বাউসমারী বিলের মাঝখানে বাঁধ দিয়ে পুকুর তৈরি করায় প্রায় শতাধিক ব্যক্তির দুইশ বিঘা জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। মৌসুমের শেষপর্যায়েও ধানের চারা লাগাতে না পারায় এসব জমি মালিকরা বিচারের আশায় প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন কিন্তু সমাধান মিলছে না।
জানা গেছে, জয়মনিরহাট ইউনিয়নে অবস্থিত ভেরভেরি বিলের পানি পার্শ্ববর্তী বাউসমারী বিল দিয়ে বকনী নদীতে পড়ে। সম্প্রতি ওই এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা হবিবর রহমান ও তার ছোট ভাই শাহাদত হোসেন মাস্টার ভেরভেরি বিল ও বাউসমারী বিলের মাঝ খানে বাঁধ তৈরি করে মাছ চাষ শুরু করে। এর ফলে দীর্ঘ দিন থেকে ভেরভেরি বিলের পানিপ্রবাহের রাস্তা বন্ধ হওয়ায় বাঁধের উজানে প্রায় ২শ বিঘা জমি তলিয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এর ফলে এসব জমির মালিকরা রোপা চারা লাগাতে না পারায় বিপাকে পড়েন।
ভূমি মালিক রইচ উদ্দিন, আব্দুল মজিদ, শরিফুল আলম ও যোবায়ের হোসেন জানান, জমিগুলো তলিয়ে যাওয়ায় এখন পর্যন্ত রোপা চারা লাগাতে পারি নাই। ধানের আবাদ না হলে না খেয়ে মরতে হবে। বাঁধ দেয়ায় দুই বিঘা জমি পানির নিচে। এখনো এক গোছা ধান লাগাতে পারি নাই। ধান না লাগালে পেটে পাথর বান্দি থাকা লাগবে- বিধবা মালেকা বেগম (৫৫) এভাবেই আকুতি জানিয়ে ঘটনার সমাধানের জন্য অনুরোধ জানালেন।
এ ব্যাপারে এলাকাবাসীর পক্ষে ৪৪ জন ব্যক্তি স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী অফিসার, কৃষি অফিসার ও থানায় দিলেও এখন পর্যন্ত বিষয়টির সমাধান না হওয়ায় আমরা ধানের চারা লাগানো নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছি।
এ ব্যাপারে বীর মুক্তিযোদ্ধা হবিবর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি ধান ও মাছ চাষের জন্য বাঁধ দিয়েছি। তারপরও ইউপি চেয়ারম্যানের পরামর্শে পানি নিষ্কাশনের জন্য পুকুরপাড়ের নিচ দিয়ে পাইপ বসাতে সম্মত হয়েছি। কিন্তু পরে তারা যোগাযোগ করেননি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপক কুমার দেব শর্মা জানান, অভিযোগ পাবার পর এটি সমাধানের জন্য উপজেলা কৃষি অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমি যতদূর জানি বিষয়টির সমাধান হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শাহ মো. আপেল মাহমুদ জানান, এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাসহ আমরা উভয়পক্ষকে ডেকে মীমাংসার চেষ্টা করেছি কিন্তু সমাধান করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবগত করা হয়েছে।
ভূরুঙ্গামারী থানার অফিসার ইনচার্জ রুহুল আমিন জানান, অভিযোগ পাবার পর আমরা জিডি করে ঘটনাস্থলে তিন দফা পুলিশ পাঠিয়ে মীমাংসার চেষ্টা করেছি এবং এখনো চেষ্টা চালাচ্ছি।
জয়মনিরহাট ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াদুদ জানান, বাঁধ নির্মাণের সময় আমি সরেজমিন গিয়েছিলাম। তখন তারা পাইপ বসানোর জায়গা রেখে বাঁধ নির্মাণের কথা দিয়েছিল; কিন্তু পরবর্তীতে কথা রাখছে না।
তিনি জানান, এই বাঁধের ফলে শত শত বিঘা জমি জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।