জঙ্গি আস্তানায় আটক ১৭ জনের মধ্যে চিকিৎসক-প্রকৌশলীও আছেন
মৌলভীবাজার ও কুলাউড়া প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২৩, ১১:০৩ পিএম
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের কালাপাহাড়ে দ্বিতীয় ধাপের অভিযানে নতুন জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পেয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিসিটিসি) ইউনিট। নতুন করে সেই আস্তানা থেকে বিপুলসংখ্যক গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।
এ আস্তানা থেকে পালিয়ে আসা ইমাম মাহমুদের কাফেলার ১৭ সদস্যকে স্থানীয় মানুষ আটক করেন। আটককৃতদের মধ্যে একজন চিকিৎসক ও দুইজন প্রকৌশলী রয়েছেন বলে পুলিশ ও র্যাব সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মৌলভীবাজার পুলিশ লাইনসে সংবাদ সম্মেলন করে অপারেশন হিলসাইডের সমাপ্তি ঘোষণা করেন সিটিটিসি প্রধান মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, সোমবার সকালে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়নের আছকরাবাদ বাজারের স্থানীয় মানুষ সন্দেহজনকভাবে ১৭ জন ব্যক্তিকে আটক করেন। এ খবর পাওয়ার পরপরই আমি ঘটনাস্থলে আসি। আমাদের টিম গত শনিবার যে আস্তানায় অভিযান চালায়, সেখান থেকে আটককৃতদের সহযোগী বলে আমরা নিশ্চিত হই। এরপর কর্মধা ইউনিয়নের কার্যালয় থেকে আমরা তাদের আমাদের হেফাজতে নিয়ে আসি। এরপর রাতভর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এক্সক্লুসিভ কিছু তথ্য পাই। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী এই কালাপাহাড়ে তাদের আরেকটি আস্তানা আছে বলে আমাদের জানায়।
তিনি বলেন, আমরা ভোরে ওই আস্তানা সন্ধানের জন্য বের হই। দুর্গম প্রায় ২০টি পাহাড় পাড়ি দিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে সক্ষম হই। সেখানে গিয়ে বিশেষায়িত ফোর্স অনুসন্ধান চালিয়ে দুটি ঘর থেকে ছয় কেজি বিস্ফোরক, ১৪ রাউন্ড পিস্তলের গুলি উদ্ধার করে। তারা সবাই স্বীকার করে যে নতুন উগ্র সংগঠন ইমাম মাহমুদের কাফেলার সদস্য। যেদিন তাদের আটক করা হয় তখন তাদের সঙ্গে ছিল নগদ ২ লাখ টাকা, দুটি বড় দা, ৯৫টি ডেটোনেটর।
আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা ধারণা করছি এখানে ওই সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্ররা রয়েছে। তাদের মধ্যে ডাক্তার আছেন ইঞ্জিনিয়ারও আছেন। যেহেতু তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা অনেক সময় ও কৌশলের প্রয়োজন হয়, তাই এই মুহূর্তে তাদের মূল পরিকল্পনা সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।
আটককৃতরা হলেন- নাটোরের গাঁওপাড়ার জুয়েল মাহমুদ (২৮), সিরাজগঞ্জের পুরাবাড়ির সোহেল তানজিম (৩০), কক্সবাজারের রামুর সাদমান আরেফিন ফাহিম (২১) মো. ইমতেজার হাসসাত নাবীব (১৯), যশোরের মোল্লাপাড়ার ফাহিম খান (১৭), পাবনার আতাইকোলার মো. মামুন ইসলাম (১৯), গাইবান্ধার চাদপাড়ার রাহাত মণ্ডল (২৪), জামালপুরের সোলাইমান মিয়া (২১), নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের আরিফুল ইসলাম (৩৪), বগুড়ার হাটশিপুরের মো. আশিকুল ইসলাম (২৯), পাবনার আতাইকুলার মামুন ইসলাম (২৬), ঝিনাইদহের ছয়াইলের তানভীর রানা (২৪), সাতক্ষীরার তালার জুয়েল শেখ (২৫), পাবনার আতাইকুলার রফিকুল ইসলাম (৩৮), পাবনার সাথিয়ার মো. আবির হোসেন (২০), মাদারীপুরের মেহেদী হাসান মুন্না (২৩), টাঙ্গাইলের কোয়েল (২৫)।
এর মধ্যে সোহেল তানজিম সিরাজগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক। এছাড়া তার স্ত্রী মায়েশা ইসলামও (২০) গ্রেফতার হয়েছেন। তারা গত ২৬ জুলাই থেকে নিখোঁজ ছিলেন। নিখোঁজের বিষয়ে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় একটি জিডি করেছেন তানজিমের বাবা।
এদের সঙ্গে আটক রাহাত ও মেহেদী হাসান চীনের ইয়াংজু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। এর মধ্যে মেহেদী এক মাস আগে দেশে ফেরেন। আর রাহাত ফেরেন ১০ দিন আগে।
গত শনিবার ভোরে কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়নে বাইশালী নামক ওই পাহাড়ি টিলায় সিটিটিসি পুলিশ অভিযান চালায়। এর আগে শুক্রবার রাত ৮টা থেকে ওই বাড়ি ঘিরে রাখে সিটিটিসি ও স্থানীয় পুলিশ। অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন হিলসাইড’।
গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা সবাই নব্য জঙ্গি সংগঠন ইমাম মাহমুদের কাফেলার সদস্য। তাদের আস্তানা থেকে প্রায় তিন কেজি বিস্ফোরক, ৫০টির মতো ডেটোনেটর, তিন লাখ ৬১ হাজার টাকা, প্রশিক্ষণসামগ্রী, কমব্যাট বুট এবং কয়েক বস্তা জিহাদি বই জব্দ করা হয়।
এর আগে শনিবার অভিযানে গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- সিরাজগঞ্জের কাজীপুর থানার রাফিউল ইসলাম (২২), কিশোরগঞ্জের ইটনা থানার হাফিজ উল্লাহ (২৫), নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার খায়রুল ইসলাম (২২), তার স্ত্রী মেঘনা (১৭), সাতক্ষীরার শরিফুল ইসলাম (৪০), পাবনার আটঘরিয়া থানার আব্দুছ ছত্তারের স্ত্রী শাপলা বেগম (২২), সিরাজগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক সোহেল তানজিমের স্ত্রী মায়েশা ইসলাম (২০), বগুড়ার সারিয়াকান্দি থানার সুমন মিয়ার স্ত্রী সানজিদা খাতুন (১৮), সাতক্ষীরার তালা থানার শফিকুল ইসলামের স্ত্রী আমিনা বেগম (৪০) এবং তার মেয়ে হাবিবা (২০)। এছাড়া অভিযানে তিন শিশুকেও হেফাজতে নেয় সিটিটিসি।