বন্যায় বান্দরবান গণগ্রন্থাগারের ২৮ হাজার বই নষ্ট
আলাউদ্দীন শাহরিয়ার, বান্দরবান
প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২৩, ০৯:০৫ পিএম
বান্দরবানে এবারের ভয়াবহ বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে জেলা গণগ্রন্থাগারের ২৮ হাজারের বেশি বই এবং ৩৫ বছরের সংরক্ষিত বাঁধাই করা পত্রিকা। শনিবার সকালে নয়াপাড়া এলাকায় জেলা গণগ্রন্থাগারে গিয়ে দেখা যায়, আসবাবপত্র ভেঙে পড়ে সব বই বন্যার ময়লা পানি আর কাদামাটিতে একাকার হয়ে গেছে। এ যেন কোনো ধংসস্তূপ। পুরো গ্রন্থাগারে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের মূল্যবান বই।
গণগ্রন্থাগারের লাইব্রেরিয়ান পুনম চৌধুরী ও অফিস সহায়ক তুষার দেবনাথ বলেন, বৃষ্টিতে হঠাৎ বন্যার পানি দ্রুতগতিতে বেড়ে যায়। গণগ্রন্থাগারে আট-নয় ফুট পানি উঠেছে। শত চেষ্টা করেও কিছু রক্ষা করতে পারিনি। গণগ্রন্থাগার ভবনটি দোতলা বা তিনতলার হলে সবকিছুই বাঁচানো যেত। প্রিয় গণগ্রন্থাগারের এমন দুর্দশা দেখে খুবই কষ্ট লাগছে।
গণগ্রন্থাগারের কয়েকজন পাঠক বলেন, আমাদের কাছে লাইব্রেরির বইগুলো নিজের সন্তানের মতো। আমরা এখানে নিয়মিত বই পড়ি। বইগুলো যত্ন করে রাখি। বন্যায় বইগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের মাঝে শূন্যতা বিরাজ করছে। খুব কষ্ট হচ্ছে। এ কষ্ট ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। এ সময় গণগ্রন্থাগারের নিয়মিত দুই পাঠক রিশু চৌধুরী ও সাইফুল ইসলাম কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। গণগ্রন্থাগারটি দ্রুত পাঠকদের জন্য উপযোগী করে তোলার দাবি জানান তারা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এ গণগ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮২ সালে। ২০১০ সালে শহরের নয়াপাড়ায় নিজস্ব নতুন ভবনে গণগ্রন্থাগারটি স্থানান্তরিত হয়। তালিকাভুক্ত বইয়ের সংখ্যা ছিল ৩৪ হাজার। এর মধ্যে ২০১৯ সালে প্রথমবার বন্যায় তিন হাজারের মতো বই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এবারের বন্যায় ২৮ হাজারের বেশি বই নষ্ট হলো। এর মধ্যে ব্রিটেনিকা, পিডিয়া, রবীন্দ্র রচনাবলী, নজরুল রচনাবলী, অনুবাদের বইও রয়েছে। রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অফিস নথি, মুক্তিযুদ্ধের দলিল ২ সেট, স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিল ২ সেটও। এছাড়া কম্পিউটার ২টি, প্রজেক্টর ১টি, স্ক্যানার ১টি, ৪টি সিসি ক্যামেরা এবং বই রাখার আসবাবপত্র।
গণগ্রন্থাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাশৈ থুই চাক বলেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করেছি। যতটুকু সম্ভব বইগুলো রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। গণগ্রন্থাগারের তালিকাভুক্ত পাঠক রয়েছেন সাড়ে তিনশর বেশি। একশর বেশি রয়েছেন নিয়মিত পাঠক। বন্যার ক্ষতি থেকে গণগ্রন্থাগারটি রক্ষায় ভবনের ওপরে দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা সম্প্রসারণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
অপরদিকে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গণগ্রন্থাগারের অধীনে পরিচালিত বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির প্রায় দেড় হাজার বইও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির প্রতিনিধি খুরশিদুল হাসান বলেন, বন্যার পানিতে ডুবে গাড়িটিও নষ্ট হয়ে গেছে। তাই পাঠক সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।