টানা বর্ষণে রাঙামাটির বিভিন্ন স্থানে ধস, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
রাঙামাটি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ আগস্ট ২০২৩, ১০:৩৩ পিএম
রাঙামাটিতে টানা বর্ষণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সদরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় ধসের ঘটনা ঘটছে। এতে সড়ক ও বাড়িঘরসহ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হচ্ছে।
রাঙামাটি, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে ভাঙনের ফলে সড়কের ওপর মাটি ধসে পড়ায় সাময়িকভাবে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যুতের খুঁটি হেলে পড়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে বিদ্যুৎ সংযোগ।
এছাড়া উজান থেকে নামা পাহাড়ি ঢলে কাপ্তাই হ্রদে প্রবল স্রোত বইছে। তবে সম্ভাব্য দুর্ঘটনায় জানমালের ক্ষতি এড়াতে জেলা প্রশাসন জারি করা সব ধরনের নৌযান চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা সোমবার ভোরে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
সদরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। এতে ফসলি জমি তলিয়ে ব্যাপক ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। অনেক এলাকায় বাড়িঘর তলিয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন দুর্গত মানুষ। পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবং ঝুঁকিতে থাকা দুর্গত লোকজনকে নিরাপদে আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানোর জন্য মাঠে তৎপর রয়েছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে এসব খবর জানা গেছে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার থেকে টানা বৃষ্টিপাতের কারণে রাঙামাটিতে স্বাভাবিক জনজীবন একেবারেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
জেলা আবহাওয়া অফিস জানায়, বৃহস্পতিবার ২৪ ঘণ্টায় ৯৪ মিলিমিটার, শুক্রবার ৭৭ দশমিক ২ মিলিমিটার, শনিবার ১৪৬ দশমিক ২ মিলিমিটার এবং রোববার থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত ৯১ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) ও সহকারী কমিশনার বিজয় কুমার জোয়ার্দার বলেন, টানা বর্ষণে সদরসহ জেলায় বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধস এবং সড়কের ওপর মাটি ধসে পড়ছে। জেলায় ৪৬ স্থানে ধস হয়েছে। আরও নতুন করে ধসের খবর পাওয়া যাচ্ছে। শহরসহ জেলায় পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাস করছেন ৩ হাজার ৫০৯ পরিবার। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ঝুঁকিতে থাকা ওইসব পরিবারের লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হচ্ছে।
তিনি জানান, জেলায় মোট ২৩৬টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রিতদের জন্য থাকা-খাওয়ার সব ব্যবস্থা করা আছে। এসব কেন্দ্রের এ পর্যন্ত ২৪টিতে প্রায় ২ হাজার অধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তার মধ্যে রাঙামাটি শহরের ৫টি কেন্দ্রে প্রায় ৬০০ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। শহরে মোট ১৯টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। জেলার প্রত্যেক উপজেলায় খোলা আশ্রয় কেন্দ্রে যেকোনো দুর্যোগে দুর্গত লোকজনদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খান বলেন, জেলার যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। কোথাও সড়ক যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে তাৎক্ষণিক সরানোর জন্য কাজ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া আছে। যেকোনো দুর্ঘটনা বা দুর্যোগ ঘটলে তাৎক্ষণিক উদ্ধার তৎপরতা পরিচালনার জন্য প্রস্তুতি রয়েছে।
তিনি বলেন, আমি ও পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক মাঠে তৎপর রয়েছি। ঝুঁকিতে থাকা ও দুর্গত লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে যেতে বলা হচ্ছে। মাইকিং করে সতর্কবার্তা প্রচার করা হচ্ছে। উপজেলা পর্যায়ে একই কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।