ইংরেজিতে অনার্স, দুচোখ হারিয়ে ২০ বছর ধরে খেলনা বিক্রি
খোন্দকার রুহুল আমিন, টেকেরহাট (মাদারীপুর)
প্রকাশ: ০৭ আগস্ট ২০২৩, ১০:১৬ পিএম
মাদারীপুর শহরের শকুনী লেক। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ঘুরতে আসেন ২০-২৩ হাজার দর্শনার্থী। তাদের ভিড়ে দেখা মিলবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে অনার্স করা দৃষ্টিহীন এক মানুষের। নাম তার সরদার আশিকুর রহমান হেমায়েত।
মাদারীপুরের কালকিনির আন্ডারচরের ফজলুর রহমান সরদারের ছেলে হেমায়েত ১৯৯৫ সালে আন্ডারচর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। উচ্চ মাধ্যমিকে মাদারীপুর সরকারি কলেজ থেকে পাশ করার পর ২০০১ সালে ইংরেজিতে অনার্স করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
জানা যায়, ২০০১ সালে কালকিনির একটি মামলায় তাকে সাক্ষী করা হয়; কিন্তু বিষয়টি তিনি জানতেন না, এজন্য আদালতেও সাক্ষী দেননি। এর কিছুদিন পর লঞ্চে করে ঢাকা থেকে নিজ এলাকায় আসার পর দুচোখ তুলে নেয় প্রতিপক্ষের লোকজন। এরপর হাসপাতালের বিছানায়। রাজধানীর একটি চক্ষু হাসপাতালে পরিচয়ের পরে ভালোবাসা করে বিয়ে করেন লালমনিরহাটের মেয়ে পারভীন আক্তারকে।
এরপরও থেমে নেই হেমায়েত। জীবন যুদ্ধে হারেননি তিনি। মাদারীপুর শহরের লেকেরপাড়ে বাঁশির সুরে প্রথমে ক্রেতাদের জড়ো করেন দোকানে। এরপর স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বিক্রি করেন বাঁশি ও খেলনা। দুচোখ হারিয়েও করেন না ভিক্ষাবৃত্তি।
২০০৩ সাল থেকে ভালোবাসার মানুষটির হাত ধরে মাদারীপুরে আসেন স্ত্রী পারভীন। খেলনা বিক্রি করে স্বামী-স্ত্রী দুজনে ২০ বছর ধরে চালাচ্ছেন সংসার। কারো কাছে হাত পেতে নয়, কাজের মাঝেই তৃপ্তি খুঁজে পান অসহায় এই দম্পতি।
দুচোখ হারানো হেমায়েতের মা ও বাবা বেঁচে নেই। লেকের উত্তরপাশে ভ্রাম্যমাণ দোকানে খেলনা বিক্রি করা অদম্য মানুষটি স্ত্রীকে নিয়ে শহরের কুকরাইল এলাকায় ভাড়া থাকেন।
লেকে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী আল শাহরিয়াত করিম বলেন, দুচোখ নেই তারপরও ভিক্ষা না করে কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন, এটা প্রশংসার দাবি রাখে। স্বামী-স্ত্রীর এমন কর্মকাণ্ড দেখে ভালো লাগছে।
আরেক দর্শনার্থী ও ক্রেতা বিউটি আক্তার বলেন, বাঁশির সুর শুনে দোকানে এসে দেখতে পাই দোকানদার অন্ধ। পরে ঘটনা শুনে অবাক হয়েছি। চোখ নেই তবুও স্বামী-স্ত্রী দোকানদারি করে জীবিকা চালাচ্ছেন এটা আমাদের সমাজের জন্য একটি শিক্ষণীয় ব্যাপার।
সরদার আশিকুর রহমান হেমায়েতের স্ত্রী পারভীন আক্তার বলেন, চোখ নেই দেখেও আমি হেমায়েতকে ভালোবেসে বিয়ে করছি। এমন একজন মানুষের পাশে থাকতে পেরে সত্যিই নিজেকে ধন্য মনে করছি। খেলনা ও বাঁশি বিক্রি করা আয় দিয়ে জীবন ভালোই চলছে।
দুচোখ হারানো সরদার আশিকুর রহমান হেমায়েত বলেন, ভিক্ষা করতে ভালো লাগে না। তাই কর্ম করে জীবন চালাচ্ছি। কারো কাছে হাত পেতে খাওয়ার চেয়ে, কাজ করে আয় করার মাঝে আনন্দই আলাদা। জীবনযুদ্ধে সমাজে এখনো টিকে আছি।