যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল
সক্ষমতার আড়াই গুণ রোগী চাপ সামলাতে হিমশিম
মেঝে বা করিডরে রেখে সেবা দিতে হচ্ছে
ইন্দ্রজিৎ রায়, যশোর
প্রকাশ: ০৭ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম
২৫০ শয্যার যশোর জেনারেল হাসপাতালে সক্ষমতার চেয়ে প্রায় আড়াই গুণ রোগী ভর্তি থাকছে। কয়েক মাস ধরে চলছে এই অবস্থা। ভর্তি রোগীর অধিকাংশকে ওয়ার্ডের মেঝে বা বারান্দার করিডরে রেখে সেবা দিতে হচ্ছে। নিতে আসা মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। বহির্বিভাগের অবস্থা আরও নাজুক। ডাক্তারের চেম্বারের সামনে দীর্ঘ লাইন। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম কর্তৃপক্ষ। তবে সাধ্যমতো সেবা দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, যশোর জেনারেল হাসপাতালে ২৫০ শয্যার ধারণক্ষমতার বিপরীতে রোববার ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৬২৫। গত মাসে একদিনে ৬৯৭ রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। প্রতিনিয়ত বিপুলসংখ্যক রোগীর শয্যা সংকুলান না হওয়ায় ওয়ার্ডের মেঝে ও বারান্দায় তাদের রাখা হয়। এ ছাড়াও বহির্বিভাগে প্রতিদিন (শুক্রবার বাদে) কয়েক হাজার রোগী চিকিৎসাসেবা নেন। চলতি বছরের জুলাই মাসে রোগীদের কাছ থেকে প্রায় ২৫ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়। রোগীর চাপ বেশি হওয়ায় হাসপাতালে রাজস্ব বেড়েছে। কিন্তু ধারণক্ষমতার বেশি রোগী থাকায় সেবার মান কমেছে।
রোববার সকালে হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও অন্তর্বিভাগ ঘুরে দেখা গেছে, রোগী ও তার স্বজনদের উপচেপড়া ভিড়। টিকিট কাউন্টারে নারী-পুরুষের দীর্ঘ লাইন। টিকিট সংগ্রহ শেষে বহির্বিভাগে চিকিৎসকদের চেম্বারের সামনে অপেক্ষায় আছেন শত শত মানুষ।
যশোর সদর উপজেলার নরেন্দ্রপুর থেকে আসা হযরত আলী বলেন, ছেলের চিকিৎসার জন্য এসেছি। লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটেছি। এখন চেম্বারের সামনে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। শুনছি ডাক্তার আসবে বেলা ১টায়। ডাক্তার না দেখিয়ে ফিরে যেতে পারছি না। কাজ বাদ দিয়ে এসেছি। প্রত্যেকদিন আসা সম্ভব নয়।
যশোর শহরতলির বিরামপুর থেকে আসা যমুনা রাণী বলেন, অনেক কষ্টে টিকিট কেটেছি। এখন ডাক্তার দেখানোর পালা। কিন্তু খুবই ভিড়। কখন সিরিয়াল পাব জানি না। মণিরামপুর থেকে আসা সাইদুল ইসলাম বলেন, ঘরে ঘরে রোগী। অল্প টাকায় সেবা নিতে হাসপাতালে এসেছি। এখানে এসে দেখছি প্রচুর ভিড়।
এদিকে, অন্তর্বিভাগে প্রত্যেকটি ওয়ার্ডেই অতিরিক্ত রোগীর চাপ রয়েছে। শয্যা সংকটে অনেক রোগীর স্থান হয়েছে ওয়ার্ডের মেঝে ও করিডরে। নিচেই রোগী থাকায় স্বাভাবিক হাঁটাচলাও অসুবিধা হচ্ছে। শুধু রোগী নয়, তাদের সঙ্গে থাকা একাধিক স্বজনের উপস্থিতি পরিবেশ আরও নাজুক হয়েছে। ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় ঠিকমতো সেবা পাচ্ছেন না অনেকেই।
রোগীর স্বজন শার্শার বাগআঁচড়ার আবদুল ওয়াদুদ বলেন, চার দিন হলো আমার স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি, সিট মেলেনি। তাকে ওয়ার্ডের মেঝেতে রাখা হয়েছে। খুবই কষ্ট হচ্ছে। বাথরুমের গন্ধে থাকা যাচ্ছে না।
হাসপাতালের তৃতীয় তলার করিডরে থাকা একাধিক রোগী বলেন, বেড পায়নি, এজন্য নিচে রেখেছে। এখানে থাকতে পারছি না, খুব কষ্ট হচ্ছে। মাথার ওপর ফ্যান নেই। খুব গরম লাগছে। উপায় না পেয়ে এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, সারা দেশে ডেঙ্গুজ্বরের প্রভাব আছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বেড়েছে। এজন্য হাসপাতালের অন্তর্বিভাগ ও বর্হিবিভাগে রোগীর চাপ বাড়ছে। এত বেশি রোগী হওয়ায় মানসম্মত সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে যায়। সীমিত জনবল দিয়ে সক্ষমতার আড়াই গুণ বেশি রোগী সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।