Logo
Logo
×

সারাদেশ

শিয়ালের সঙ্গে হাঁস-মুরগি-ছাগলের একত্রে বসবাস!

Icon

কলমাকান্দা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০২৩, ০৬:২৭ পিএম

শিয়ালের সঙ্গে হাঁস-মুরগি-ছাগলের একত্রে বসবাস!

প্রকৃতির খেয়াল মানুষকে প্রায়ই বিস্মিত করে থাকে। আর আমরা জানি সাধারণত শিয়ালের কামড় থেকে বাঁচতে ভয়ে থাকে হাঁস, মুরগি ও ছাগল। কিন্তু অবাক করার মতো বিষয় হলো তারা সবাই থাকছে একই সঙ্গে।

বুধবার সকালে নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার লেংগুরা ইউনিয়নের নয়নকান্দি গ্রামে গিয়ে এমনই চিত্র দেখা গেছে। ওই গ্রামের আজিজুল হক নিজ বাড়িতে হাঁস, মুরগি, ছাগল ও শিয়াল পালন করছেন। তার স্ত্রী সুমা আক্তার লালন-পালনের মূল দায়িত্ব পালন করেন। এসব পশু-পাখির সঙ্গে শিয়ালের একই সঙ্গে বসবাসের বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় পর থেকে ওই বাড়িতে উৎসুক জনতার ভিড় লেগেই আছে। তারা শিয়ালটিকে লালু নামে ডাকেন।

বুধবার সরেজমিন দেখা গেছে, শিয়ালটি বাড়ির পাশে একটি টিলায় বসে আছে। উঠানে ১২টি ছাগল ও বেশ কয়েকটি হাঁস-মুরগি রয়েছে। সুমা আক্তার একটি পাত্রে খাবার দিলে হাঁস-মুরগি ও শিয়াল একই সঙ্গে ওই পাত্রে খাবার খাচ্ছে। আর ছাগলগুলো তাদের চারপাশে ঘোরাঘুরি করছিল। দেখে মনে হচ্ছিল যেন তারা একই পরিবারের সদস্য।

এ সময় শিয়াল পালন নিয়ে কথা হয় সুমা আক্তারের সঙ্গে যুগান্তর প্রতিবেদকের। সুমা বলেন, গত দেড় বছর আগে তার স্বামী আজিজুল হক নাজিরপুর ইউনিয়নের লোহারগাঁও এলাকায় যান। সেখানে গিয়ে দেখেন একটি জলাশয়ে মাছ ধরছিলেন কয়েকজন আদিবাসী নারী। এ সময় তারা পাশের একটি জঙ্গলে তিনটি শিয়ালের বাচ্চা দেখতে পান। তখন তারা এগিয়ে গিয়ে শিয়ালগুলোকে উদ্ধার করেণ। পরে তাদের কাছ থেকে আজিজুল হক একটি বাচ্চা শিয়াল চেয়ে আনেন। তখন শিয়ালটির আনুমানিক বয়স ছিল তিন মাস।

তিনি জানান, বাড়িতে আনার পর কি খাওয়াবেন কিছুই ভেবে পাচ্ছিলেন না। পরে তার স্ত্রী সুমা আক্তার একটি বোতলে দুধ ভরে খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। তবে সেদিন তিনি ব্যর্থ হলেও পরদিন থেকে প্রায় এক মাস দুধ খাওয়ান। তারপর থেকে বাড়ির লোকজনের মতো শিয়ালটিও সব ধরনের খাবার খায়। বর্তমানে শিয়ালটির বয়স প্রায় দুই বছর।

আজিজুল হকের বাড়িতে একটি শিয়াল ছাড়াও রয়েছে ১২টি ছাগল ও বেশ কয়েকটি হাঁস-মুরগি। তাদের থাকার জন্য উঠানে রয়েছে একটি ঘর। আর ওই ঘরেই একসঙ্গে থাকে শিয়ালসহ হাঁস-মুরগি ও ছাগল। আজিজুল হকের বাড়িটি বর্তমানে শিয়ালবাড়ি নামে পরিচিত।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আকবর আলী বলেন, সকালে শিয়াল, ছাগল, হাঁস-মুরগিগুলো ছেড়ে দেওয়ার পর তারা বাড়ির পাশে একটি টিলায় চলে যায়। দিন শেষে সন্ধ্যার আগেই শিয়ালটি অন্যগুলোকে তাড়িয়ে বাড়িতে নিয়ে আসে। এটি দেখে মনে হয় যেন শিয়ালটি মালিকের আদেশ পালন করছে। প্রতিবেশী ও অন্যান্য পশুপাখিকে কামড়ানো বা অন্য কোনো ধরনের অত্যাচার করে না শিয়ালটি।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ের ভেটেরিনারি সার্জন আনোয়ার পারভেজ বলেন, আমরা জানি শেয়াল হচ্ছে মাংশাসী প্রাণী এবং যেসব প্রাণীর জলাতঙ্ক বা র‌্যাবিশ (জুনোটিক রোগ) হয় বা জীবাণু বহন করে তাদের মধ্যে শেয়াল অন্যতম। সেক্ষেত্রে জলাতঙ্ক টিকা শিয়াল ও তার পালনকারী দুজনকেই নেওয়া উচিত।

তিনি আরও বলেন, শেয়ালের প্রধান খাবার প্রাণীর মাংস, খরগোশ, ইঁদুর, টিকটিকি, মুরগি, হাঁস ইত্যাদি। তাই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে প্রচলিত প্রবাদ ‘শেয়ালের কাছে মুরগি বর্গা’ যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম